Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লোভ আমাদের ধ্বংস করেছে, বিশ্ব বাঁচাতে নতুন সভ্যতা দরকার : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিশ্ব বাঁচাতে নতুন সভ্যতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, লোভ আমাদের ধ্বংস করেছে, বিশ্ব বাঁচাতে নতুন সভ্যতা দরকার।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংককের স্থানীয় সময় বিকালে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে ‘বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরাম: হোয়ার দ্যা ফিউচার মিটস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রচলিত ব্যবস্থায় বিশ্বে পরিবর্তন সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিবর্তন আনতে চাইলে পদ্ধতি বদলাতে হবে। দেশ বদলাতে চাইলে পরিচালনার পদ্ধতি বদলাতে হবে। একই নিয়মে সবসময় চলা যায় না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন সভ্যতা গড়তে চাকরির পেছনে না ঘুরে তরুণদের উদ্যোক্তা হতে হবে। নতুন সভ্যতা গড়তে হলে নতুন পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গরীব মানুষের কর্মসংস্থান দরকার, টাকার না। কিন্তু অন্যরা বললো অর্থ চাকরির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলতে শুরু করলাম ঋণ একজনের মানবাধিকার। তখন বলা শুরু করলো, ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে মানবাধিকারের সম্পর্ক কী। একজন মানুষের আশ্রয়ের জন্য, জীবনে চলার জন্য ঋণ প্রাপ্তি মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে। তখন আমি ভাবলাম যদি ব্যাংক ঋণ না দেয় তাহলে আমি কেন তাদের জন্য নিজের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছি না। ১ ডলার ঋণ দিয়ে শুরু করে আমি নিজের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করলাম। অনেক সময় লাগলো, কিন্তু অবশেষে আমি গ্রামের মানুষের জন্য একটা ব্যাংক তৈরি করতে পেরেছি। সেটা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিমসটেকে এটি আমার প্রথম মিটিং। আর এই মিটিংয়ের শুরুটাই হয়েছে তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আমি তরুণদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার চেষ্টা করি এবং তা আমাকে তরুণদের চোখে দেখা পথে আমাকে চলতে সহায়তা করে। সেজন্য বিমসটেকে আমার যাত্রা তরুণদের মাধ্যমে শুরু হওয়ায় আমি আনন্দিত।

ভূমিকম্পে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই ঘটনা আমাদের মানুষকে রক্ষা করার সক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে। প্রকৃতির এই অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্পর্কে আমরা এখনও আগে থেকে জানতে পারি না। প্রকৃতিকে বুঝার চেষ্টায় এবং মানুষকে রক্ষায় আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। বাংলাদেশও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে। সৌভাগ্যবশত আমাদের এখনও এই ধরনের ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে হয়নি।

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি ১৯৭২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাই। নতুন একটি দেশে নিজের ভাবনার মতো করে তৈরি করার ইচ্ছায় এবং স্বাধীনতার উচ্ছ্বাসে আমি চেষ্টা করছিলাম জানতে, আমি কী করতে পারি দেশের জন্য। কিন্তু খুব দ্রুত নতুন দেশ গড়ার যে উচ্ছ্বাস ছিল সেটি গায়েব হয়ে গেলো। কারণ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ডামাডোলে অনেক গভীরে ডুবে যাচ্ছিলো। ১৯৭৪ সালের দিকে বাংলাদেশ অনেক বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেল। আমরা সেই সম্পর্কে বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন দুর্ভিক্ষ আর কখনও বাস্তবে দেখা যায়নি। আপনারা রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন, তারা কোনও রোগে কিংবা করোনার মতো মহামারিতে মারা যায়নি, দুমুঠো ভাতের জন্য মারা গেছে। আমি তখন তরুণ ছিলাম, শিক্ষকতা করতাম, কিছু করতে চাইতাম, কিন্তু জানতাম না কোথা থেকে শুরু করতে হবে। ছোট ছোট উদ্যোগ নিলাম কিন্তু কাজে আসলো না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি একজন ক্ষুদ্র মানব, আমার পক্ষে পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করা সম্ভব না। তবে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাছেই থাকা গ্রামের জন্য কাজ করতে পারি। আমি আমার বাংলাদেশ হিসেবে ওই গ্রামকে বেছে নিলাম। এই গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবো যাতে তারা ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সারা জীবন চেষ্টা করেছি গ্রামে এমন ধরনের কাজ করতে। একসময় মনে হলো গ্রামও আমার জন্য অনেক বড় বিষয় হয়ে যায়। আমি পুরো গ্রামের জন্য একা কিছু করতে পারবো না। তাই আমি একজন একজন করে কাজ করা শুরু করলাম। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। তাদের স্থানীয় ভাষা আমার জানা ছিল বলেই কথা বলতে অসুবিধা হয়নি। আমি একজন নারীর সঙ্গে দেখা করলাম, তিনি ঋণ শোধ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছিলেন। তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন, কিন্তু তার সেই কাজের ফসল ঋণ শোধের পেছনেই চলে গেছে। কারণ ঋণ দাতা তার কাছ থেকে নিজেদের নির্ধারণ করা মূল্যেই তার ফসল নিয়ে যেতো। আমি তাকে বললাম, আমি যদি অল্প কিছু অর্থ দেই তাহলে সেকি তার পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারবে? বাজার সম্পর্কে তার কোনও ধারনাই ছিল না, তিনি বললেন চেষ্টা করে দেখতে পারি। সেটি আমার দেওয়া প্রথম ঋণ ছিল। এটি তাকে অন্যভাবে চিন্তা করার সুযোগ দিলো।

সামান্য ঋণ একজনের জীবনে আমুল পরিবর্তন আনতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আমার ক্যাম্পাসের কাছের একটা ব্যাংকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, গ্রামের এই গরীব মানুষকে ঋণ দিচ্ছেন না কেন, আমার কথা শুনে তিনি আকাশ থেকে পড়লেন এবং বললেন গরীব মানুষকে আমাদের ব্যাংক ঋণ দেয় না। আমি বললাম, আপনার ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোই ভুল। ভুল নীতির ওপর ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আপনাদের মূলনীতি হচ্ছে যাদের যত বেশি আছে তাদেরকে আরও বেশি দেওয়া। বিষয়টি এটার বিপরীত হওয়া উচিত ছিল। যাদের কিছুই নাই তাদের কাছে সবার আগে ব্যাংকের যাওয়া উচিত ছিল। আপনারা সেটি করেন না। সেই পুরনো মূলনীতিই এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। সমাজকে পরিবর্তন করার যে উদ্দেশ সেটি সেখানেই আটকে আছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অল্প অল্প অর্থ ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দিলে সেটি দ্রুত ফেরত আসে এবং বারবার দেওয়া যায়। সেই একই অর্থ বারবার ব্যবহার করা যায়। দান করা অর্থ একবারেই যায় সেটি আর ফেরত আসে না। একই অর্থ যদি আমি ঋণ হিসেবে দেই, তার সঙ্গে অপারেশনাল খরচ যুক্ত করে ফেরত নিয়ে আসা যায় এবং এটি বারবার করা যায় এবং বিস্তৃতভাবে করা যায়। লাখ লাখ মানুষের কাছে এই সেবা পৌঁছানো যায়।

এর আগে স্থানীয় সময় বেলা ১২টার দিকে ব্যাংককে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডের মন্ত্রী জিরাপর্ন সিন্ধুপ্রাই তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এর আগে সকাল ৯টায় বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ড. ইউনূস।

সকালে বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অংশ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ‘মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট সহযোগিতা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাতে বিমসটেকের সাত সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বাক্ষর করেছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির

লোভ আমাদের ধ্বংস করেছে, বিশ্ব বাঁচাতে নতুন সভ্যতা দরকার : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিশ্ব বাঁচাতে নতুন সভ্যতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, লোভ আমাদের ধ্বংস করেছে, বিশ্ব বাঁচাতে নতুন সভ্যতা দরকার।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংককের স্থানীয় সময় বিকালে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে ‘বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরাম: হোয়ার দ্যা ফিউচার মিটস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রচলিত ব্যবস্থায় বিশ্বে পরিবর্তন সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিবর্তন আনতে চাইলে পদ্ধতি বদলাতে হবে। দেশ বদলাতে চাইলে পরিচালনার পদ্ধতি বদলাতে হবে। একই নিয়মে সবসময় চলা যায় না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন সভ্যতা গড়তে চাকরির পেছনে না ঘুরে তরুণদের উদ্যোক্তা হতে হবে। নতুন সভ্যতা গড়তে হলে নতুন পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গরীব মানুষের কর্মসংস্থান দরকার, টাকার না। কিন্তু অন্যরা বললো অর্থ চাকরির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলতে শুরু করলাম ঋণ একজনের মানবাধিকার। তখন বলা শুরু করলো, ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে মানবাধিকারের সম্পর্ক কী। একজন মানুষের আশ্রয়ের জন্য, জীবনে চলার জন্য ঋণ প্রাপ্তি মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে। তখন আমি ভাবলাম যদি ব্যাংক ঋণ না দেয় তাহলে আমি কেন তাদের জন্য নিজের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছি না। ১ ডলার ঋণ দিয়ে শুরু করে আমি নিজের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করলাম। অনেক সময় লাগলো, কিন্তু অবশেষে আমি গ্রামের মানুষের জন্য একটা ব্যাংক তৈরি করতে পেরেছি। সেটা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিমসটেকে এটি আমার প্রথম মিটিং। আর এই মিটিংয়ের শুরুটাই হয়েছে তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আমি তরুণদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার চেষ্টা করি এবং তা আমাকে তরুণদের চোখে দেখা পথে আমাকে চলতে সহায়তা করে। সেজন্য বিমসটেকে আমার যাত্রা তরুণদের মাধ্যমে শুরু হওয়ায় আমি আনন্দিত।

ভূমিকম্পে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই ঘটনা আমাদের মানুষকে রক্ষা করার সক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে। প্রকৃতির এই অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্পর্কে আমরা এখনও আগে থেকে জানতে পারি না। প্রকৃতিকে বুঝার চেষ্টায় এবং মানুষকে রক্ষায় আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। বাংলাদেশও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে। সৌভাগ্যবশত আমাদের এখনও এই ধরনের ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে হয়নি।

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি ১৯৭২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাই। নতুন একটি দেশে নিজের ভাবনার মতো করে তৈরি করার ইচ্ছায় এবং স্বাধীনতার উচ্ছ্বাসে আমি চেষ্টা করছিলাম জানতে, আমি কী করতে পারি দেশের জন্য। কিন্তু খুব দ্রুত নতুন দেশ গড়ার যে উচ্ছ্বাস ছিল সেটি গায়েব হয়ে গেলো। কারণ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ডামাডোলে অনেক গভীরে ডুবে যাচ্ছিলো। ১৯৭৪ সালের দিকে বাংলাদেশ অনেক বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেল। আমরা সেই সম্পর্কে বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন দুর্ভিক্ষ আর কখনও বাস্তবে দেখা যায়নি। আপনারা রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন, তারা কোনও রোগে কিংবা করোনার মতো মহামারিতে মারা যায়নি, দুমুঠো ভাতের জন্য মারা গেছে। আমি তখন তরুণ ছিলাম, শিক্ষকতা করতাম, কিছু করতে চাইতাম, কিন্তু জানতাম না কোথা থেকে শুরু করতে হবে। ছোট ছোট উদ্যোগ নিলাম কিন্তু কাজে আসলো না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি একজন ক্ষুদ্র মানব, আমার পক্ষে পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করা সম্ভব না। তবে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাছেই থাকা গ্রামের জন্য কাজ করতে পারি। আমি আমার বাংলাদেশ হিসেবে ওই গ্রামকে বেছে নিলাম। এই গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবো যাতে তারা ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সারা জীবন চেষ্টা করেছি গ্রামে এমন ধরনের কাজ করতে। একসময় মনে হলো গ্রামও আমার জন্য অনেক বড় বিষয় হয়ে যায়। আমি পুরো গ্রামের জন্য একা কিছু করতে পারবো না। তাই আমি একজন একজন করে কাজ করা শুরু করলাম। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। তাদের স্থানীয় ভাষা আমার জানা ছিল বলেই কথা বলতে অসুবিধা হয়নি। আমি একজন নারীর সঙ্গে দেখা করলাম, তিনি ঋণ শোধ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছিলেন। তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন, কিন্তু তার সেই কাজের ফসল ঋণ শোধের পেছনেই চলে গেছে। কারণ ঋণ দাতা তার কাছ থেকে নিজেদের নির্ধারণ করা মূল্যেই তার ফসল নিয়ে যেতো। আমি তাকে বললাম, আমি যদি অল্প কিছু অর্থ দেই তাহলে সেকি তার পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারবে? বাজার সম্পর্কে তার কোনও ধারনাই ছিল না, তিনি বললেন চেষ্টা করে দেখতে পারি। সেটি আমার দেওয়া প্রথম ঋণ ছিল। এটি তাকে অন্যভাবে চিন্তা করার সুযোগ দিলো।

সামান্য ঋণ একজনের জীবনে আমুল পরিবর্তন আনতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আমার ক্যাম্পাসের কাছের একটা ব্যাংকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, গ্রামের এই গরীব মানুষকে ঋণ দিচ্ছেন না কেন, আমার কথা শুনে তিনি আকাশ থেকে পড়লেন এবং বললেন গরীব মানুষকে আমাদের ব্যাংক ঋণ দেয় না। আমি বললাম, আপনার ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোই ভুল। ভুল নীতির ওপর ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আপনাদের মূলনীতি হচ্ছে যাদের যত বেশি আছে তাদেরকে আরও বেশি দেওয়া। বিষয়টি এটার বিপরীত হওয়া উচিত ছিল। যাদের কিছুই নাই তাদের কাছে সবার আগে ব্যাংকের যাওয়া উচিত ছিল। আপনারা সেটি করেন না। সেই পুরনো মূলনীতিই এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। সমাজকে পরিবর্তন করার যে উদ্দেশ সেটি সেখানেই আটকে আছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অল্প অল্প অর্থ ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দিলে সেটি দ্রুত ফেরত আসে এবং বারবার দেওয়া যায়। সেই একই অর্থ বারবার ব্যবহার করা যায়। দান করা অর্থ একবারেই যায় সেটি আর ফেরত আসে না। একই অর্থ যদি আমি ঋণ হিসেবে দেই, তার সঙ্গে অপারেশনাল খরচ যুক্ত করে ফেরত নিয়ে আসা যায় এবং এটি বারবার করা যায় এবং বিস্তৃতভাবে করা যায়। লাখ লাখ মানুষের কাছে এই সেবা পৌঁছানো যায়।

এর আগে স্থানীয় সময় বেলা ১২টার দিকে ব্যাংককে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডের মন্ত্রী জিরাপর্ন সিন্ধুপ্রাই তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এর আগে সকাল ৯টায় বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ড. ইউনূস।

সকালে বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অংশ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ‘মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট সহযোগিতা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাতে বিমসটেকের সাত সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বাক্ষর করেছেন।