নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘আগামী ১০-১৫ বছরে বিএনপি বলে কোনো দল বাংলাদেশে আর থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা যতদিন থাকবে, ততদিন এই দেশে বিএনপি থাকবে।
রোববার (১৯ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, হঠাৎ বিদেশ থেকে এসে গতকাল সাভারে জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে তার দাম্ভিকতাপূর্ণ কণ্ঠ শুনে দেশের মানুষ স্তম্ভিত-হতবাক হয়েছেন। একই সঙ্গে জনগণ হেসেছেও।
তিনি বলেন, জয়ের বক্তব্যের মানে হচ্ছে, ১০-১৫ বছরের মধ্যে তারা বিএনপিকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করে দেবে! দেশে শুধু একটাই রাজনৈতিক দল থাকবে, আওয়ামী লীগ। যেখানে ভিন্ন মতাদর্শের কেউ থাকতে পারবে না, কেউ স্বৈরাচারী সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না, নতুন করে বাকশাল-২ স্থাপিত হবে।
রিজভী বলেন, এই উপদেষ্টা, তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার অনুগতরা দশকের পর দশক ধরে বিএনপিকে ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ওয়ান ইলেভেনের বেআইনি সরকারও সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বরং বিএনপি এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তৃণমূল শক্তি। যতবার আঘাত এসেছে ততবার বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপি প্রতিবারই চক্রান্তের চোরাবালি থেকে জেগে উঠে চতুর্দিকে আবার বিস্তার লাভ করেছে।
তিনি বলেন, আমি শুধু সজীব ওয়াজেদ জয়কে বলবো, ইতিহাস পড়ুন। স্বৈরাচাররা যখন ক্ষমতার মসনদে বসে থাকে তখন অন্ধের মতো দাম্ভিকতা দেখায়। এ ধরনের কথা আপনি পূর্বেও অনেকবার বলেছেন। আপনার এ ধরনের কথাগুলো এখন বাসি হয়ে গেছে। জনগণের দাবি মেনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন- আওয়ামী লীগের অবস্থা কী হয়।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী দুর্বৃত্ত অক্ষশক্তির পক্ষ নিয়েছে- জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বেতনভোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলদাস কর্মকর্তারা। তাদের বিরোধীদল দমন-পীড়ন-নিঃশেষ করা, ভয়ঙ্কর জুলুম, নিপীড়ন, গ্রেপ্তার, তাণ্ডব এসব সীমা লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত, এই নিশুতি সরকারই শেষ সরকার নয়। কিছুদিন পরেই হবে জনগণের সরকার। তখন এই আজ্ঞাবাহী দলদাস পোশাকি সন্ত্রাসীদের পরিণতি কী হবে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশের বিপজ্জনক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে সারা দেশে একদফার আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে। অনিবার্য গণঅভ্যুত্থানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বৈরাচারী নিপীড়কের পতনের কাউন্টডাউনের মধ্যে আরেকটি একতরফা পাতানো ভুয়া নির্বাচনের অপচেষ্টা চলছে। রোববার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আরও বলেন, মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী নির্বাচনি তফশিল বাস্তবায়ন করতে মুখ লুকিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। নিশিরাতের সরকারের অবৈধ মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ সমর্থক পুলিশ-র্যাব-গোয়েন্দারা গোটা দেশে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, জনপদ, লোকালয়, শহর-বন্দরে থাকা গণতন্ত্রকামীদের ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। আওয়ামী নিপীড়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে। সারা দেশে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। দিশাহীন, উন্মাদ হয়ে গণগ্রেফতার চালাচ্ছে। খুনের হুমকি দিয়ে ভীতিকর ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করেছে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে, গান পাউডার ছিটিয়ে, আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার বীভৎস কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির বিরুদ্ধে নাশকতার অপবাদ দিয়ে দেশের বাইরে প্রচার চালিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এবার সন্ত্রাসের অপবাদ দিয়ে ২০১৪-১৫ এর মতো আর বিদেশে মার্কেটিং করতে পারছে না। কারণ সারা দুনিয়া টের পেয়েছে বিএনপির নামে সন্ত্রাসের অপবাদ মূলত একতরফা নির্বাচনের কৌশল। এবারও আওয়ামী সরকার আত্মঘাতীমূলক নাশকতার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এ আওয়ামী দুর্বৃত্ত অক্ষ শক্তির পক্ষ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আওয়ামী দলীয় পোষ্য দলদাস কর্মকর্তারা। বিরোধী দল দমন-নিঃশেষ করার ভয়ংকর জুলুম, নিপীড়ন, গ্রেফতার তাণ্ডব সব সীমা তারা লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) জানা উচিত-এ নিশুতি সরকারই শেষ সরকার নয়। কিছুদিন পরেই হবে জনগণের সরকার। তখন এ আজ্ঞাবাহী দলদাস পোশাকী সন্ত্রাসীদের পরিণতি কি হবে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
রিজভী বলেন, সরকার বিএনপি এবং জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের জন্য বহুমুখী চক্রান্ত করে ব্যর্থ। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বন্দি রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটির পর একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করা হয়েছে। যা বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন রেকর্ড। গ্রেফতার, নির্যাতন, গুম ও ক্রসফায়ার করেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দমানো যায়নি।
রিজভী আরও বলেন, ৪৮ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতালের প্রথমদিন সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমি সারাদেশের নেতাকর্মী ও জনগণকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে আরও জোরদার ও তীব্রতর করার মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান রিজভী।
বিএনপিকে ভাঙার সরকারের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সংস্থা ও মাধ্যম দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচার করেও লাভ হয়নি। তিনি বলেন, শনিবার বিকাল থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৫১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে ১৮টি মামলায় ২ হাজার ৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নানা ঘটনায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।