নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের মাধ্যমে সবার ভাগ্য বদলেছে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের চিন্তার কিছু নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার আছে। যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তাদের ঘর করে দেব।’
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরইমধ্যে আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো নির্মাণের উপকরণ দিয়ে সহায়তা করব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেকে যেন ঘর নির্মাণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। এরইমধ্যে সেভাবে আমার প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক এলাকা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। সে অনুযায়ী আমরা সহায়তা পাঠাব।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতার দখলকারীরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ব্যস্ত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ভূমিহীন মানুষদের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরও ভূমিহীন মানুষদের মধ্যে ঘর তৈরি করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প নিয়ে আমরা ঘর বানাতে শুরু করি।
তিনি আরো বলেন, ঘরগুলো আমরা করে দিয়েছি সেটা আপনার সম্পত্তি। যে নিচ্ছেন বা পাচ্ছেন সেটা আপনার সম্পত্তি। এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ, এটাকে সুন্দরভাবে রাখা, এটার যত্ন নেওয়া আপনার দায়িত্ব। বিদ্যুৎ ব্যবহার অবশ্যই সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রতিটি গ্রামের মানুষও নাগরিক সুবিধা পাবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তারই সুফল পাচ্ছে দেশবাসী। বাংলাদেশের জনগণ কোনো অংশেই পিছিয়ে থাকবে না। কারো কাছে হাত পেতে নয়, নিজেদের সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমেই মাথা উঁচু করে চলবে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি তার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। আবার সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও মিথ্যা মামলা দেয়। আজকের দিন অর্থাৎ ১১ জুন সেই বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, কোনোমতেই দেশের জনগণ পিছিয়ে থাকবে না। কারো কাছে ভিক্ষা নিয়ে, হাত পেতে চলতে চাই না। যতটুকু সম্পদ আছে, তা নিয়েই মাথা উঁচু করে চলবো। যেটুকু সম্পদ আছে, তার যথাযথ ব্যবহার করলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। সেজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য যেটা করা প্রয়োজন, সেটাই করছি।
এ সময় ভূমি মালিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না থাকে। অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় নোট হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলাশয় থাকলে সেখানে মাছের চাষ, জমি থাকলে ফসলের চাষ বা খালি জায়গায় গাছ লাগাতে হবে। জাতির পিতা বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না, আমরা কারোর কাছে ভিক্ষা করতে চাই না। হাত পেতে চলতে চাই না। যতটুকু আমাদের সম্পদ সেটা কাজে লাগিয়ে মাথা উঁচু করে চলব। সম্মানের সঙ্গে চলব। সেভাবেই বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এসময় সবার সহযোগীতাও কামনা করেন তিনি।
নিজের কারামুক্তির দিনটির কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকের দিনটা আমার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেও মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আবার সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও মিথ্যা মামলা দেয়। আমার সহযোগী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, দেশের সাধারণ মানুষ সে সময় প্রতিবাদ করেছিল। আজকের দিনে অর্থাৎ ১১ জুন আমি সেই বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সুবিধাবোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে আবাসন প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।