Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রায়হানের নখ উপড়ানো শরীরে আঘাতের চিহ্ন

  • সিলেট প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৯৭ জন দেখেছেন

রায়হানের ফাইল ছবি

দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্তে রায়হানের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার দুই তিনটি নখ উপড়ানো ছিলো। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত। নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের ধারনা।  কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তে এসব তথ্য মিলেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রায়হানের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার দুই তিনটি নখ উপড়ানো ছিলো। নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আমরা রিপোর্টে পূর্ণাঙ্গ তথ্য উল্লেখ করেছি, তবে তা অত্যন্ত গোপনীয়।

ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে ২০ দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৩টার দিকে রায়হানের মরদেহ ফের দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ১১টার দিকে নগরের আখালিয়া নবাবী মসজিদ পঞ্চায়েত গোরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাদ উদ্দিন এবং পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম সেসময় উপস্থিত ছিলেন।

লাশ উত্তোলনের পর পুলিশ পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুনরায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান জানান, হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা হলে নিহতের ময়নাতদন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে করার বিধান থাকলেও রায়হানের বেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে কবর দেয়া হয়।

আরও পড়ুন : নির্যাতনে মৃত্যু : কবর থেকে তোলা হলো রায়হানের লাশ

এ কারণে মামলা আগের তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। পরে আজ মরদেহ উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে নগরের কাস্টঘর এলাকায় ‘ছিনতাইকারী’ সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত হলে হাসপাতালে নিলে রায়হানের মৃত্যু হয় বলে জানায় পুলিশ। এরপরই তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

ওইদিন দিবাগত রাতে নগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। এছাড়া এসএমপির তিন সদস্যের একটি দল ঘটনার তদন্তে নামে। প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে এসএমপির হেডকোয়ার্টারের আদেশে ওই ফাঁড়ি ইনচার্জসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- ফাঁড়ি ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) তৌহিদ মিয়া, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদ। প্রত্যাহার করা তিন জন হলেন- সহকারী উপ-দর্শক (এএসআই) আশীক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেন।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ার বাসিন্দা। তার বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। তিনি দুই মাসের এক কন্যা সন্তানের জনক। দুই বছর ধরে তিনি সিলেট জেলা স্টেডিয়াম মার্কেটের চিকিৎসক ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে সহকারীর কাজ করতেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

রায়হানের নখ উপড়ানো শরীরে আঘাতের চিহ্ন

প্রকাশের সময় : ০৮:২৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০

দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্তে রায়হানের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার দুই তিনটি নখ উপড়ানো ছিলো। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত। নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের ধারনা।  কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তে এসব তথ্য মিলেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রায়হানের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার দুই তিনটি নখ উপড়ানো ছিলো। নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আমরা রিপোর্টে পূর্ণাঙ্গ তথ্য উল্লেখ করেছি, তবে তা অত্যন্ত গোপনীয়।

ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে ২০ দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৩টার দিকে রায়হানের মরদেহ ফের দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ১১টার দিকে নগরের আখালিয়া নবাবী মসজিদ পঞ্চায়েত গোরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাদ উদ্দিন এবং পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম সেসময় উপস্থিত ছিলেন।

লাশ উত্তোলনের পর পুলিশ পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুনরায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান জানান, হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা হলে নিহতের ময়নাতদন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে করার বিধান থাকলেও রায়হানের বেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে কবর দেয়া হয়।

আরও পড়ুন : নির্যাতনে মৃত্যু : কবর থেকে তোলা হলো রায়হানের লাশ

এ কারণে মামলা আগের তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। পরে আজ মরদেহ উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে নগরের কাস্টঘর এলাকায় ‘ছিনতাইকারী’ সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত হলে হাসপাতালে নিলে রায়হানের মৃত্যু হয় বলে জানায় পুলিশ। এরপরই তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

ওইদিন দিবাগত রাতে নগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। এছাড়া এসএমপির তিন সদস্যের একটি দল ঘটনার তদন্তে নামে। প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে এসএমপির হেডকোয়ার্টারের আদেশে ওই ফাঁড়ি ইনচার্জসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- ফাঁড়ি ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) তৌহিদ মিয়া, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদ। প্রত্যাহার করা তিন জন হলেন- সহকারী উপ-দর্শক (এএসআই) আশীক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেন।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ার বাসিন্দা। তার বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। তিনি দুই মাসের এক কন্যা সন্তানের জনক। দুই বছর ধরে তিনি সিলেট জেলা স্টেডিয়াম মার্কেটের চিকিৎসক ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে সহকারীর কাজ করতেন।