নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাঙামাটির লংগদুতে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু এখন মানুষের দুর্গতিতে পরিণত হয়েছে। দশ বছর আগে এ সেতু নির্মাণ করা হলেও এখনো রাস্তার উন্নয়ন হয়নি। ফলে সেতুটি যেমন এ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে, তেমনি স্থানীয় জনগণের সীমাহীন দুর্গতি বাড়িয়েছে।
সেতু থেকেও লোকজনকে পারাপার হতে হচ্ছে নৌকায় করে অথবা নৌকা না পেলে সাঁতার কেটে পানি মাড়িয়ে মই দিয়ে। ফলে চরম ভোগান্তিতে সেখানকার স্থানীয় মানুষ। পাশাপাশি সেতুটি কাজে না আসায় এখন সরকারের ৭৫ লাখ টাকা গচ্চা যাওয়ার উপক্রম। খোঁজ নিয়ে এসব তথ্যচিত্রের সত্যতা পাওয়া গেছে।
জানা যায়, লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ি বাজারের পথে মাঝখানে বিচ্ছিন্ন খাল পারাপারে ওই সেতু নির্মাণ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু সেতুর উভয় দিকে রাস্তার উন্নয়ন করা হয়নি। গত দশ বছর ধরে অসমাপ্ত কাজ পড়ে আছে। এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু সেতুর দুই দিকে সংযুক্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ না করায় বছরের পর বছর সাঁতার কেটে পানি মাড়িয়ে সেতু পারাপার হতে হচ্ছে লোকজনকে।
এতে দুর্ভোগ লাঘবের পরিবর্তে সীমাহীন দুর্গতি বেড়েছে বলে জানান এলাকার লোকজন। তাছাড়া সেতুটির নির্মাণে পাওয়া বরাদ্দের অর্ধেক টাকাও ব্যয় হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয়দের মতে, পার্বত্য জেলা পরিষদের যত প্রকল্প- মূলত সেগুলো প্রকৃত জনকল্যাণে করা হয় না। বেশিরভাগ প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে লুটপাটের উদ্দেশ্যে। যে কারণে লংগদুর ওই সেতুটি গত দশ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে।
তবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর দাবি- উভয় দিকে রাস্তা ছিল। সেতুটি নির্মাণের সময় বিচ্ছিন্ন খালের পানিতে মাটি ভরাট করে উভয় দিকের রাস্তায় সংযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের ডানে আটারকছড়া ও ইয়ারিংছড়িসহ কাছাকাছি কয়েক গ্রামের অন্তত ৭-৮ হাজার পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠী মানুষের বসবাস। রাস্তা এবং সেতু না থাকায় তাদের কাঁচামাল, জুমে উৎপাদিত ফসলসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে হয় অত্যন্ত কষ্টসাধ্যে। এতে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। কখনো মাথায় আবার কখনো কাঁধে করে বাজারে পণ্য নেওয়া-আনা করতে হয়।
এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থী ও রোগীদের পারাপারে পড়তে হয় অসহনীয় দুর্ভোগে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আটারকছড়া ইউনিয়নের ৪ ও ১নং ওয়ার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ওই এলাকার ইয়ারিংছড়ির-করল্যাছড়িবাজার যোগাযোগ স্থাপন করতে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতুসহ উভয় দিকে রাস্তার উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও আজ পর্যন্ত সংযোগ রাস্তার উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ শেষ করেনি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
ফলে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজেই আসেনি। উল্টো এলাকার মানুষের দুর্গতি তৈরি করেছে। কাজ অসম্পন্ন থাকায় মানুষের দুর্ভোগ রয়েই গেছে। পানি সাঁতারিয়ে মই দিয়ে ৭-৮ ফুট ওপরে উঠে সেতু পারাপার হচ্ছেন এলাকার লোকজন।
লংগদু আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (সাবেক) চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় না করে অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করায় সেটি জনগণের কোনো সুফল আনতে পারেনি।
আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমা বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন যাবত এমনিতেই পড়ে আছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পাওয়ার পর সেটির অসম্পন্ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য জেলা পরিষদ বরাবর আবেদন করেছি। কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি লাগব হবে।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলব। যাতে দ্রুত ব্রিজটির রাস্তার বাকি কাজ সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে অনুরোধ জানাব।
প্রকল্পটির কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আ.জ.ম এরশাদুল মণ্ডল বলেন, সেতুটি নির্মাণকালে পাওয়া বরাদ্দে উভয় দিকে রাস্তায় সংযোগ দিতে বিচ্ছিন্ন খাল মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছু দিন পরেই ভরাট করা মাটি ধসে সরে যায়। তাছাড়া ১০-১২ বছর আগে ভরাট করা মাটি এখন থাকার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে সেতু ও রাস্তার উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শিগগির কোজের টেন্ডার আহবান করা হবে। জুনের পরেই নতুন অর্থবছরে কাজ শুরু করে দ্রুত শেষ করা হবে। আগের বরাদ্দের সব টাকায় কাজ করা হয়েছে।