Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে, দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন : প্রধানমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে, দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা নাহলে জনগণ আপনাকে ক্ষমা করবে না। জনগণ আপনাকে টেনে নামাবে।

শনিবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ওদের এত মাথা ব্যথা কেন’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জেরে মির্জা ফখরুল বলেন, আবার বলে ওদের মাথা ব্যথা কেন? ওরা মানে আমেরিকার, পশ্চিমা বিশ্ব। ওদের মাথা ব্যথা কারণ ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমেরিকার বর্তমান বাইডেন প্রশাসন প্রকাশ্যে বলে, আমরা সেই দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবো, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে চাই, তাদের উন্নয়ন সহযোগী হতে চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাজ করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আমরা যে দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছি, যারা আমাদের বুকের ওপরে চেপে বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, মারছে, খুন করছে, হত্যা করছে, লুণ্ঠন করছে.. এটাকে সরানোর দায়িত্ব কার? এই স্যাংশনের ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে, ভিসা নীতির ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে?

তিনি আরও বলেন, যা করার আমাদেরকেই করতে হবে। সেটা করতে এখন ভালো কথা শুনছে না, শান্তির কথা শুনছে না। আমরা বার বার বলছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি.. বলছি, পদযাত্রা করছি, রোড মার্চ করছি, সমাবেশ করছি…। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। ওই জন্য এখন শোনাতে হবে এবং এজন্য যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। সেজন্য আজকে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে, অনেক হত্যা করেছেন আমাদের ভাইকে, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতাহারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে বিদায় হোন। আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, এই অপকর্মের জবাবদিহি আপনাদেরকে একসময় করতে হবে। তার আগে স্বসম্মানে যদি বিদায় হতে চান তাহলে এখনই বিদায় হোন।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং স্পষ্ট করে বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।

বিদেশিরা কেউ বলেনি কেয়ারটেকার সরকারের কথা গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা বলতে হয় না.. ওটা বুঝা যায় যে, এখানে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ দিয়েছে ’১৪ সালে, ১৮ সালে, আর এখনো প্রমাণ দিচ্ছে। আর বলে কিনা নির্বাচন তো সুষ্ঠু করা আমাদের কর্তব্য, সুষ্ঠু করছি। গতকাল প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে এতো কথা আমি বুঝতে পারি না। আমরা করছি সুন্দর নির্বাচন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করছি।’ এখন এই কথাগুলো শুনলে আমি আগেও বলেছি, ঘোড়াও হাসে। ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেন এটা বিস্ময় ব্যাপার।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, যাই হোক অবৈধভাবে হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো। ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী আছেন। উনি কি একবারও চিন্তা করেন না যে, তার এই কথাটা শুনে মানুষ হাসবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছেৃ ওরা মানুষ খুন করতো, কথায় কথায় গুলি করে মেরে দিতো, গুম করে দিতোৃ আর ভিসা নীতি করেছে। ভিসা নীতিতে এখন সবাই আতঙ্কিত। ওদের যারা দুর্নীতি করেছে, যারা অন্যায় করেছে, যারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করেছে, যারা বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, যে ব্যবসায়ী চুরি করছে, দুর্নীতি করছে সবাই এখন আতঙ্কিত হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পারছি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে। ক’দিন আগে চিফ জাস্টিস হয়েছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল, তিনি বলেছেন, রং হেডড পারসনৃরায়ের মধ্যে তিনি লেখেছিলেন। সেই রং হেডেড পারসন আরও রং হেডেড হয়ে গেছেন। রং হেডড পারসন যদি আরও রং হেডেড হয় তাকে কি বলে? উন্মাদ। আমাদের একজন খুব মেধাবী ছাত্র সে একটা কার্টুন পত্রিকা বের করতো সেটার নামই ছিল উন্মাদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, এসব ডিগবাজিতে কোনো লাভ হবে না। ডিগবাজি করে একবার বাইরে যাচ্ছে, ওদিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় নাই.. এতো কান্নাকাটি করার দরকার কি বলেছেন। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর বয়স নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন করে তিনি বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর ভাষা এত নিকৃষ্ট হতে পারে? একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করতে আপনার মুখে বাঁধে না? আসলে এই দলটির মধ্যে কোনো শিষ্টাচার নেই। তারা কাউকে সম্মান দিতে জানে না।

বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আজকে সারাদেশে আওয়াজ ওঠেছে, এ সরকারকে বিদায় কর। তাদের রাজনৈতিক সময় শেষ হয়ে গেছে। এখনও সময় আছে মানে মানে কেটে পড়। মানুষ ও দেশকে রেহাই দাও।

আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে শিক্ষার আর পরিবেশ নেই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, শুধুমাত্র দলীয়ভুক্তদের। যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক।

তিনি বলেন, আজকে শিক্ষক হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের দুটি শর্ত থাকতে হবে। একটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ঘরানার হতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, টাকা দিতে হবে। টাকা ছাড়া এখন শিক্ষক নিয়োগ হয়, আমার জানা নেই। পরিকল্পনা হচ্ছে, একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখবে। যে প্রবন্ধগুলো, যে কথাগুলো আগে ক্লাস টু থ্রি ফোর ফাইভে থাকতো, সেসব বদলে দিয়েছে। আর শিক্ষা বিভাগে এমন মন্ত্রী দেওয়া হয় যে, মন্ত্রীদের লক্ষ্য একটাই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগে কখনও শুনিনি, ভাইস চ্যান্সেলর চুরি করে, শিক্ষামন্ত্রী চুরি করে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার জন্যে যে ভূমি অধিগ্রহণ করবেৃ চাঁদপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, সেখানে চাঁদপুরের ডিসি অভিযোগ করলেন— শিক্ষামন্ত্রীর আত্মীয়রা ৩৬৫ কোটি টাকা লোপাট করে দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান সরকারি লোক তিনি বললেন, চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রীর মদতে ও প্রশ্রয়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলা হয়েছে। এবং এই হলো শিক্ষার হাল।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, একটি জাতির শিক্ষাব্যবস্থা যদি পঙ্গু করে দেওয়া যায়, তবে সেই জাতিকেই পঙ্গু করে দেওয়া যায়। আজ সেই দিকটা খেয়াল করুন, কেন হচ্ছে? রাষ্ট্রের যে কাঠামো সেই কাঠামোই তো এই সরকার পরিবর্তন করেছে। এই সরকারের তো কোনো জবাবদিহি নেই। পার্লামেন্ট একটা আছে। সেটা তোষামোদির কারখানা। যারা অনির্বাচিত তারা গেছেন ওখানে, একটা কোটার মাধ্যমে। ওখানে গিয়ে তাদের একটাই কাজ, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন আর তারা বলবেন, আহ্ বেশ বেশ বেশ।

সরকার অনেক জুডিশিয়াল মার্ডার করেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে বন্দি অবস্থায় রেখেছে। সরকার মুফতি হান্নানসহ অনেক জুডিশিয়াল মার্ডার করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেউ নাকি বলেননি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। এটা বলতে হবে কেন? সবার ভূমিকা দেখে বোঝেন না। কি বলছে সবাই। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমেরিকার ভিসানীতিতে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক শেখ হাসিনার চোখেমুখে। তারা উন্মাদ হয়ে গেছেন। তারা এখন লুটের টাকা কিভাবে রক্ষা করবে তা নিয়ে চিন্তায় আছে।

তিনি বলেন, অনেক অন্যায় করেছেন। অনেক হত্যা, নির্যাতন চালিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি ফোকলা বানিয়ে ফেলেছেন। কেড়ে নিয়েছেন মানুষের সব অধিকার। তাই দেশ রক্ষায় এ সরকারকে সরাতে হবে। সরকারকে সরাতে যা যা করার সবই করতে হবে। বিদায় হতেই হবে। জবাবদিহি করতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা করতে দিচ্ছে না। গণমাধ্যমকে তাদের কথা অনুযায়ী চলতে হয়। অদৃশ্য শক্তি সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারে না।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিস উদ্দিন মাহমুদ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

 

আবহাওয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে, দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন : প্রধানমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে, দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা নাহলে জনগণ আপনাকে ক্ষমা করবে না। জনগণ আপনাকে টেনে নামাবে।

শনিবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ওদের এত মাথা ব্যথা কেন’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জেরে মির্জা ফখরুল বলেন, আবার বলে ওদের মাথা ব্যথা কেন? ওরা মানে আমেরিকার, পশ্চিমা বিশ্ব। ওদের মাথা ব্যথা কারণ ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমেরিকার বর্তমান বাইডেন প্রশাসন প্রকাশ্যে বলে, আমরা সেই দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবো, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে চাই, তাদের উন্নয়ন সহযোগী হতে চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাজ করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আমরা যে দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছি, যারা আমাদের বুকের ওপরে চেপে বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, মারছে, খুন করছে, হত্যা করছে, লুণ্ঠন করছে.. এটাকে সরানোর দায়িত্ব কার? এই স্যাংশনের ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে, ভিসা নীতির ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে?

তিনি আরও বলেন, যা করার আমাদেরকেই করতে হবে। সেটা করতে এখন ভালো কথা শুনছে না, শান্তির কথা শুনছে না। আমরা বার বার বলছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি.. বলছি, পদযাত্রা করছি, রোড মার্চ করছি, সমাবেশ করছি…। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। ওই জন্য এখন শোনাতে হবে এবং এজন্য যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। সেজন্য আজকে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে, অনেক হত্যা করেছেন আমাদের ভাইকে, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতাহারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে বিদায় হোন। আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, এই অপকর্মের জবাবদিহি আপনাদেরকে একসময় করতে হবে। তার আগে স্বসম্মানে যদি বিদায় হতে চান তাহলে এখনই বিদায় হোন।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং স্পষ্ট করে বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।

বিদেশিরা কেউ বলেনি কেয়ারটেকার সরকারের কথা গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা বলতে হয় না.. ওটা বুঝা যায় যে, এখানে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ দিয়েছে ’১৪ সালে, ১৮ সালে, আর এখনো প্রমাণ দিচ্ছে। আর বলে কিনা নির্বাচন তো সুষ্ঠু করা আমাদের কর্তব্য, সুষ্ঠু করছি। গতকাল প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে এতো কথা আমি বুঝতে পারি না। আমরা করছি সুন্দর নির্বাচন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করছি।’ এখন এই কথাগুলো শুনলে আমি আগেও বলেছি, ঘোড়াও হাসে। ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেন এটা বিস্ময় ব্যাপার।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, যাই হোক অবৈধভাবে হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো। ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী আছেন। উনি কি একবারও চিন্তা করেন না যে, তার এই কথাটা শুনে মানুষ হাসবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছেৃ ওরা মানুষ খুন করতো, কথায় কথায় গুলি করে মেরে দিতো, গুম করে দিতোৃ আর ভিসা নীতি করেছে। ভিসা নীতিতে এখন সবাই আতঙ্কিত। ওদের যারা দুর্নীতি করেছে, যারা অন্যায় করেছে, যারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করেছে, যারা বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, যে ব্যবসায়ী চুরি করছে, দুর্নীতি করছে সবাই এখন আতঙ্কিত হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পারছি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে। ক’দিন আগে চিফ জাস্টিস হয়েছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল, তিনি বলেছেন, রং হেডড পারসনৃরায়ের মধ্যে তিনি লেখেছিলেন। সেই রং হেডেড পারসন আরও রং হেডেড হয়ে গেছেন। রং হেডড পারসন যদি আরও রং হেডেড হয় তাকে কি বলে? উন্মাদ। আমাদের একজন খুব মেধাবী ছাত্র সে একটা কার্টুন পত্রিকা বের করতো সেটার নামই ছিল উন্মাদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, এসব ডিগবাজিতে কোনো লাভ হবে না। ডিগবাজি করে একবার বাইরে যাচ্ছে, ওদিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় নাই.. এতো কান্নাকাটি করার দরকার কি বলেছেন। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর বয়স নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন করে তিনি বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর ভাষা এত নিকৃষ্ট হতে পারে? একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করতে আপনার মুখে বাঁধে না? আসলে এই দলটির মধ্যে কোনো শিষ্টাচার নেই। তারা কাউকে সম্মান দিতে জানে না।

বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আজকে সারাদেশে আওয়াজ ওঠেছে, এ সরকারকে বিদায় কর। তাদের রাজনৈতিক সময় শেষ হয়ে গেছে। এখনও সময় আছে মানে মানে কেটে পড়। মানুষ ও দেশকে রেহাই দাও।

আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে শিক্ষার আর পরিবেশ নেই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, শুধুমাত্র দলীয়ভুক্তদের। যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক।

তিনি বলেন, আজকে শিক্ষক হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের দুটি শর্ত থাকতে হবে। একটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ঘরানার হতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, টাকা দিতে হবে। টাকা ছাড়া এখন শিক্ষক নিয়োগ হয়, আমার জানা নেই। পরিকল্পনা হচ্ছে, একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখবে। যে প্রবন্ধগুলো, যে কথাগুলো আগে ক্লাস টু থ্রি ফোর ফাইভে থাকতো, সেসব বদলে দিয়েছে। আর শিক্ষা বিভাগে এমন মন্ত্রী দেওয়া হয় যে, মন্ত্রীদের লক্ষ্য একটাই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগে কখনও শুনিনি, ভাইস চ্যান্সেলর চুরি করে, শিক্ষামন্ত্রী চুরি করে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার জন্যে যে ভূমি অধিগ্রহণ করবেৃ চাঁদপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, সেখানে চাঁদপুরের ডিসি অভিযোগ করলেন— শিক্ষামন্ত্রীর আত্মীয়রা ৩৬৫ কোটি টাকা লোপাট করে দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান সরকারি লোক তিনি বললেন, চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রীর মদতে ও প্রশ্রয়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলা হয়েছে। এবং এই হলো শিক্ষার হাল।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, একটি জাতির শিক্ষাব্যবস্থা যদি পঙ্গু করে দেওয়া যায়, তবে সেই জাতিকেই পঙ্গু করে দেওয়া যায়। আজ সেই দিকটা খেয়াল করুন, কেন হচ্ছে? রাষ্ট্রের যে কাঠামো সেই কাঠামোই তো এই সরকার পরিবর্তন করেছে। এই সরকারের তো কোনো জবাবদিহি নেই। পার্লামেন্ট একটা আছে। সেটা তোষামোদির কারখানা। যারা অনির্বাচিত তারা গেছেন ওখানে, একটা কোটার মাধ্যমে। ওখানে গিয়ে তাদের একটাই কাজ, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন আর তারা বলবেন, আহ্ বেশ বেশ বেশ।

সরকার অনেক জুডিশিয়াল মার্ডার করেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে বন্দি অবস্থায় রেখেছে। সরকার মুফতি হান্নানসহ অনেক জুডিশিয়াল মার্ডার করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেউ নাকি বলেননি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। এটা বলতে হবে কেন? সবার ভূমিকা দেখে বোঝেন না। কি বলছে সবাই। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমেরিকার ভিসানীতিতে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক শেখ হাসিনার চোখেমুখে। তারা উন্মাদ হয়ে গেছেন। তারা এখন লুটের টাকা কিভাবে রক্ষা করবে তা নিয়ে চিন্তায় আছে।

তিনি বলেন, অনেক অন্যায় করেছেন। অনেক হত্যা, নির্যাতন চালিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি ফোকলা বানিয়ে ফেলেছেন। কেড়ে নিয়েছেন মানুষের সব অধিকার। তাই দেশ রক্ষায় এ সরকারকে সরাতে হবে। সরকারকে সরাতে যা যা করার সবই করতে হবে। বিদায় হতেই হবে। জবাবদিহি করতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা করতে দিচ্ছে না। গণমাধ্যমকে তাদের কথা অনুযায়ী চলতে হয়। অদৃশ্য শক্তি সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারে না।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিস উদ্দিন মাহমুদ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।