নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা পাঁচদিনের ছুটি শেষে পেরিয়েছে দুই কার্যদিবস। তৃতীয় কার্যদিবসেও এখনো যানজটের নগরী ঢাকার রাস্তা স্বরূপে ফেরেনি। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস খুললেও ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের চাপ এখনো অনেক কম। ব্যক্তিগত গাড়ির দেখাও তেমন মেলেনি। ফলে এখনো রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তা প্রায় ফাঁকাই রয়েছে। নেই চিরচেনা যানজট। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে নগরবাসী। এতে এক প্রকার স্বস্তির স্বাদ পাচ্ছে যানজটে দুর্ভোগে থাকা নগরবাসী।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ছিল না কোনও যানজট। যেটুকু যানজট ছিল, তা কেবলই বিভিন্ন মোড়ের সিগন্যালে। সাধারণ কর্মদিবসে সায়েন্স ল্যাব থেকে মৎস্য ভবন মোড় পার হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। কিন্তু ঈদ-পরবর্তী সময়ে এই রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ৫ থেকে ৭ মিনিট।
রাস্তায় মানুষের চলাচল যেমন কম, তেমনি ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজি, রিকশার চলাচলও তুলনামূলক কম। তবে গত দুই দিনের তুলনায় মঙ্গলবার ঢাকার রাস্তায় মানুষের চলাচল ও গণপরিবহনের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য তাতেও যানজটপ্রবণ রাস্তাগুলোতে যানজটের তেমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না।
যানজট না থাকায় বেশ স্বস্তিতে চলাচল করছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। তবে গত দুই দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। এ কারণে অফিস শুরুর আগে কোনো কোনো অঞ্চলে যাত্রীদের গণপরিবহনে উঠতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অবশ্য সকাল সাড়ে ১০টার পর গণপরিবহনে যাত্রীদের সেই চাপ ছিল না।
শান্তিনগর থেকে বাড্ডার অফিসে আসা মো. সজিব বলেন, অফিস সময়ে শান্তিনগর থেকে বাড্ডা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় সচরাচর যানজট থাকে। বাসা থেকে অফিস আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ঈদের পর এখনো রাস্তায় যানজট পাইনি। ২০ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে শান্তিনগর থেকে বাড্ডায় চলে এসেছি।
তিনি বলেন, গত দুই দিনের মতো আজও রাস্তায় যানজট ছিল না। তবে গাড়িতে আজ যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। এ কারণে অফিসে আসার পথে গাড়িতে উঠতে একটু বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সদরঘাট থেকে বেশিরভাগ বাস যাত্রী ভরে আসছিল। তবে বাসে ওঠার পর সহজেই বাড্ডায় চলে এসেছি। কোথাও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধ্য বাড্ডায় কথা হয় আকাশ পরিবহনের চালক মো. তসলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দুই দিনের তুলনায় আজ সকালে অফিস শুরুর আগে যাত্রীর চাপ একটু বেশি ছিল। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যও কিছুটা বেড়েছে। তবে রাস্তায় কোনো যানজট নেই। আমাদের ধারণা, চলতি সপ্তাহে ঢাকার রাস্তায় যানজট হবে না। কারণ ঢাকা থেকে দূরে ঈদ করতে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষ এখনো ফিরে আসেনি।
অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, গুলিস্তান, সচিবালয় অঞ্চল ঘুরে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুদ রানা জানান, এসব অঞ্চলের রাস্তায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল অনেক কম। ফলে রাস্তায় কোনো যানজট নেই।
তিনি বলেন, রায়েরবাগ অঞ্চলে যাত্রীর জন্য গণপরিবহন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরিবহনকর্মীরা হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী ডাকছেন। এরপরও বেশিরভাগ গণপরিবহন সীমিত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে দেখা যায়। তবে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে পরিবহনের চাপ কিছুটা বেশি দেখা যায়।
গাবতলী, টেনিক্যাল, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ এলাকা ঘুরে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মুরাদ হুসাইন জানান, গাবতলী, মাজার রোড, টেনিক্যাল, আনসার ক্যাম্প, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ প্রতিটি অঞ্চলের রাস্তায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত পরিবহন বেশ কম চলাচল করছে। ফলে এ অঞ্চলের কোথাও কোনো যানজট নেই। গণপরিবহনগুলোতে যাত্রীর সংখ্যাও কম। যাত্রীর জন্য বেশিরভাগ গণপরিবহন দীর্ঘ সময় বাস স্টপেজে অপেক্ষা করছে। যাত্রীদের বাসে উঠতে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না।
মতিঝিলের একটি বিমা কোম্পানিতে চাকরি করা ফয়সাল হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষে গত রোববার আমাদের অফিস খুলেছে। রোববার থেকেই আমি অফিস করছি। আমার ছেলের স্কুল খুলবে ৯ জুলাই। তাই গ্রামের বাড়িতে পরিবার রেখে চলে এসেছি। আমার স্ত্রী ও ছেলে আসবে ৮ জুলাই।
তিনি বলেন, অফিস খুললেও এখনো সবাই অফিসে যোগ দেয়নি। অনেকে ঈদের ছুটির সঙ্গে ৪-৫ দিন অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন। তারা এখনো অফিসের বাহিরে রয়েছেন। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে সবার ছুটি শেষ হয়ে যাবে। আমাদের ধারণা আগামী রোববার থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ইসিবি চত্বর থেকে সচিবালয়ে অফিসের কাজে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ বনানী থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ির বেশ ভালো চাপ ছিল। কোথাও কোথাও সামান্য যানজট দেখা গেছে। তবে মহাখালী পার হওয়ার পর রাস্তায় আর কোনো যানজট দেখা যায়নি। গত রোববার ও সোমবার বনানী, মহাখালীসহ সব রাস্তা ফাঁকা দেখেছি। গত দুই দিনের তুলনায় আজ রাস্তায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।