নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে মঙ্গলবার (১০ জুন) রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। পাশাপাশি লম্বা ছুটি থাকার কারণে এখনও ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। ঢাকায় ফেরার চেয়ে ঢাকার বাইরে যাবার যাত্রীর সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে। তবে চাপ কম থাকায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছেন বলে জানান যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (১০ জুন) ঈদের চতুর্থ দিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে দেখা গেছে, ফিরতি মানুষের আনাগোনা। তবে কোথাও তেমন ভিড় বা বিশৃঙ্খলা নেই। দূরপাল্লার বাসগুলো নির্ধারিত সময়েই ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে, ট্রেনগুলোও সময়মতো স্টেশনে প্রবেশ করছে।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঢাকায় পৌঁছাতে পারছেন। পথে বড় কোনো যানজট নেই। ঢাকায় প্রবেশের গাজীপুর, আমিনবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সাধারণত ঈদের পরদিন ও তৃতীয় দিন থেকেই ঢাকায় লোকজন ফিরতে শুরু করে। তবে এবার ঈদ পরবর্তী ছুটি লম্বা হওয়ায় এখনো চাপ বাড়েনি।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে রাতে বাসে ঢাকায় ফিরেছেন নুবায়েত হোসেন। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে নামার পর তিনি বলেন, ভাবছিলাম যাওয়ার সময় যেমন ভোগান্তি হয়েছিল, ফেরার সময় হয়তো তার কিছুটা হলেও হবে। কিন্তু সবকিছু খুব স্বাভাবিক ছিল। এমনকি আমাদের বাসটা নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকায় এসে গেছে। পুরো পথে কোথাও কোনো যানজট চোখে পড়েনি।
নেত্রকোনার মদন থেকে সকালে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে এসে নেমেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহমিদা বেগম। তিনি বলেন, বাড়িতে ছিলাম ৫ দিন। ঝামেলামুক্তভাবে আসার জন্য আগে আগেই ফিরলাম, যাতে ঢাকায়ও কিছুদিন থাকা যায়। ২ দিন পর থেকে আবার ঢাকায় ফেরার চাপ শুরু হয়ে যাবে। তখন ঢাকায় আসতে যাওয়ার সময়ের মতো ভোগান্তি হবে। সাধারণত ঈদের পর রাস্তায় অস্থিরতা থাকে, কিন্তু এবার দেখলাম পরিস্থিতি শান্ত।
একটি আন্তঃজেলা বাসের চালক সুজন মিয়া বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় ঈদের আগে চাপ অনেক বেশি ছিল, কারণ বেশিরভাগ মানুষ একই সময়ে রওনা দেন। কিন্তু ফেরার সময় মানুষ ধীরে ধীরে ফিরছেন বলে সড়কে চাপটা নেই। এতে করে এখনও কোথাও ভোগান্তি হয়নি।
ঢাকায় ফিরতে থাকা অনেকেই জানিয়েছেন, এবার ফিরতি পথেও ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি আছে। আগেভাগেই টিকিট বুক করায় ঝামেলা হয়নি, তবে বেশি টাকা দেওয়া লাগছে।
এদিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে ট্রেনগুলো ঢাকায় ফিরছে। ট্রেনে যাত্রীদের চাপ আছে, তবে অতিরিক্ত নয়। হয়তো আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের ট্রেনগুলোতে চাপ বাড়বে।
চট্টগ্রামে থেকে আসা মেহেবুবা আক্তার বলেন, এবার আমাদের ঈদযাত্রা অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক স্বস্তিদায়ক ছিল। আমি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী, অফিস খোলা তাই তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়েছে। ঈদযাত্রায় রেলের এই সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ পেতে পারে।
শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়। এবার ৫ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ জুন ছুটি শেষ হবে।
রাজশাহী থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেসের যাত্রী তানজিল আহমেদ বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় আমাদের ভোগান্তি পেতে হয়নি। একেবারে ঠিক সময়ে ট্রেন চলে আসছে। আর কোনো অসুবিধাও হয়নি। ঈদের সময় সহ সব সময় যদি ট্রেনের সেবা এমন থাকে তাহলে সাধারণ যাত্রীরা স্বস্তিতে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবে এবং ট্রেন তাদের যে দুর্নাম সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকার স্টেশন মাস্টার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছুটি কাটিয়ে মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যার খবর আমাদের কাছে নেই। যাত্রীদের কাছে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল শুনে আমাদের ভালো লাগছে। আমরা ঈদ করতে যেতে পারিনি তবে এর জন্য কোনো কষ্ট নেই। মনে হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে আছি।