স্পোর্টস ডেস্ক :
২০০৩ সালে মুলতানে একদম কাছে গিয়েও পুড়তে হয়েছিলো ১ উইকেটে হারের যন্ত্রণায়। সেদিন চোখে জল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজনরা। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে ঘরে-বাইরে অনেকগুলো টেস্ট খেললেও জয় ছিলো অধরা। ২১ বছর পর অবশেষে রাওয়ালপিন্ডিতে এলো ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে প্রথমবার পাকিস্তানকে হারালো বাংলাদেশ।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ জিতেছে ১০ উইকেটে। অথচ চতুর্থ দিন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল এই টেস্ট এগুচ্ছে নিষ্প্রাণ ড্রয়ের দিকে। শেষ দিনে পেস-স্পিনের মিশেলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চিত্রপট বদলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। দলকে পাইয়ে দেন রোমাঞ্চকর এক জয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে গেলে জয়ের জন্য স্রেফ ৩০ রানের লক্ষ্য পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মামুলি সেই লক্ষ্য দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান তুলে নেন ৬ ওভার ৩ বলেই। সেখানে জাকির ১৫ রানে এবং জাকির অপরাজিত ছিলেন ৯ রানে।
বিদেশের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের উইকেটের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়। কার্যত টেস্টে ১০ উইকেটের ব্যবধানে এই প্রথম কোনো ম্যাচ জিতল শান্তরা। এর আগে ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছিল সর্বোচ্চ ৮ উইকেটে। তবে সেই ম্যাচ ছাড়িয়ে শীর্ষে এখন শান্ত-সাকিবদের রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জয়।
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। পরে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৫৬৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হলে সফরকারীদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় স্রেফ ৩০ রানের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪তম টেস্টে এসে প্রথম জয় পেলো বাংলাদেশ। এর আগে তাদের মাটিতে আগে কখনো ড্রও করতে পারেনি তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই ড্র করতে পেরেছিল বাংলাদেশ, ২০১৫ সালে খুলনায় হয়েছিল সেটি।
শেষদিনের শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে শান মাসুদকে আউট করেন হাসান মাহমুদ। শুরুতে অবশ্য আম্পায়ার আউট দেননি। পরে রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায় মাসুদের ব্যাট ছুঁয়েই বল যায় উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লিটন দাসের গ্লাভসে। ৩৭ বলে ১৪ রান করেছিলেন মাসুদ।
এরপর ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে দলের হাল ধরেন বাবর আজম। এবার দলকে সাফল্য এনে দেন নাহিদ রানা। তার বল ইনসাইড এজ হয়ে চলে যায় ৫০ বলে ২২ রান করা বাবরের স্টাম্পে। পরের ওভারে এসে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলে দেন সাকিব আল হাসান।
তার বলে স্টাম্পিং হন চার বলে কোনো রান না করা সৌদ শাকিল। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ডাক মারেন এই ব্যাটার। তাকে ফেরানোর পর মরিয়া হয়ে ওঠেন নানাদিক থেকে চাপের মুখে থাকা সাকিব। প্রতিটি বলই তিনি করছিলেন ভীষণ মনোযোগ দিয়ে।
৩৩তম ওভারের প্রথম বলে রিজওয়ানের প্যাডে বল লাগলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিতে চায় তারা, কিন্তু ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে ১৫ সেকেন্ড সময়।
সাকিব পরের বল করতে গেলে উইকেট থেকে সরে যান রিজওয়ান। তখন হাওয়ায় বল ছুড়ে মারেন সাকিব, সেটি লিটন ধরেন। আম্পায়ার এরপর এ নিয়ে অসন্তোষও জানান। ওই ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়ে যান আব্দুল্লাহ শফিক। ৮৬ বলে ৩৭ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।
এই চাপ আরও বেড়ে যায় এক বল পরই সালমান আগা আউট হলে। কোনো রান করার আগেই স্লিপে দাঁড়ানো সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সেশনের বাকি সময়টুকু শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে কাটিয়ে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
বিরতি থেকে ফেরার এক ওভার পরই মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ আউট হন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এরপর নাসিম শাহকে আউট করেন সাকিব। তবুও বাংলাদেশের জয়ের পথে কাঁটা হয়েছিলেন রিজওয়ান। তার ব্যাটে চড়েই লড়াই করার স্বপ্ন দেখতে থাকে পাকিস্তান।
আগের ইনিংসে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলা রিজওয়ান এবারও পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরি। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন খুররম শেহজাদও। বাংলাদেশের হতাশাটা লম্বা হতে দেননি মিরাজ। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন রিজওয়ান। ৮০ বলে ৫১ রান আসে এই উইকেটরক্ষকের ব্যাট থেকে।
তার বিদায়ের পর পাকিস্তানের অলআউট হতেও আর বেশি সময় লাগেনি। ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা, বাংলাদেশের বিপক্ষে যেটি তাদের টেস্টে সর্বনিম্ন। মিরাজ চার ও সাকিব নেন তিন উইকেট। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় স্রেফ ৩০ রানের।
রান তাড়ায় নেমে কোনো উইকেটই হারাতে হয়নি বাংলাদেশকে। দুই ওপেনারই বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। সালমান আগাকে সুইপ করে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন জাকির। এরপর ড্রেসিংরুমের দিকে যায় ক্যামেরা, তখন প্রতিটি সদস্যই উচ্ছ্বাসে ভাসছেন; তাদের সঙ্গে হয়তো দেশের মানুষও। টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে এখন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত বাদে সবাইকে হারাল বাংলাদেশ।