নিজস্ব প্রতিবেদক :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ফলে জ্বালাও-পোড়াও দলরা আরও সচেতন হবে। এ ভিসা নীতি নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের অঙ্গীকার রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে জ্বালাও-পোড়াও চাই না। গতবার তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি বগি জ্বালিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও আর রাস্তা দখল করে আন্দোলন কেউ চায় না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে সরকার সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, আমেরিকা বলেছে, তাদের যে নীতি সরকারি দল বা অন্যদের জন্য যেমন তেমনি অপজিশনের জন্যও। তাদের ওপরও বর্তাবে। তারা ইনশাআল্লাহ সাবধান হবে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা প্রধানমন্ত্রী যে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন চান। সেটাকেই আরও শক্তিশালী করবে এ নতুন নীতি।
ড. মোমেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে গত ৩ মে আমাকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের অঙ্গীকার লক্ষ্য রেখেই নতুন এ ভিসা নীতি করা হয়েছে। এটা তো ভালোই। আমাদের নীতিকেই তো তারা সমর্থন করেছে।
মন্ত্রী বলেন, এ ভিসা নীতি নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এর ফলে সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েনও হবে না।
মোমেন বলেন, শুধু সরকার চাইলেই ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হয় না। এখানে সব দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় সবই করবো।
সম্প্রতি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের নীতি নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে তো আর গুজব রটনাকারীর অভাব নেই। তাই বিভিন্ন রকম বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। যে বক্তব্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দিয়েছেন, সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা চাচ্ছেন, সেটিকে আরও জোরালো করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই এ দেশের গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক মন্তব্য করে মন্ত্রী আরও বলেন, এ দেশে গেল ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই একটি গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া চলছে। হাজার হাজার নির্বাচন হচ্ছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার এসেছে। কিন্তু ২০০৮ সালের আগে যদি দেখেন, যারা ভোটারবিহীন নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, তাদের কিন্তু এ দেশের মানুষ গদিতে রাখেনি, কয়েক দিন পর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সবসময়ই জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখে, জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতায় আসতে চায়।
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন চাই, যা হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বদ্ধপরিকর। এ জন্য যত ধরনের প্রক্রিয়া দরকার, তা করা হচ্ছে। যাতে কারচুপির ভোট না হয়, সে জন্য ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে। কেউ কেউ রাতের অন্ধকারে ভোট হওয়ার কথা বলছে, সে কারণে আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। আমরা একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। এখন সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায় নির্বাচন কমিশনের। সরকার তাদের সহায়তা করবে। তবে আমি প্রায়ই বলি, সরকারের আন্তরিকতা ও নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছা থাকলেই অনেক সময় অসহিংস নির্বাচন হয় না; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারি দল, বিরোধী দল ও সুশীল সমাজসহ প্রত্যেকের সহযোগিতা দরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি প্রকাশ করেছে, তাতে সেই কথাই বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা বলেছে, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) যে নীতি প্রকাশ করলাম, এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আগ্রহ সেটিকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে’, এটা ভালোর জন্যই হয়েছে।