নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর সদরঘাটে নেই ঈদযাত্রার চিরাচরিত ভিড়। ঈদুল আজহার আগের দিন নৌপথে রাজধানী ছাড়ার একমাত্র নদী বন্দরেও যাত্রীর তেমন চাপ নেই। চাপ না থাকলেও সকাল থেকেই রয়েছে যাত্রীর আনাগোনা। ফলে যাত্রী পূর্ণ হয়ে গেলেই ছেড়ে দিচ্ছে লঞ্চ।
বুধবার (২৮ জুন) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২টি লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার সদরঘাট দিয়ে এক লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়েছে।
সদরঘাটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বৃষ্টি থাকায় বুধবার সদরঘাটে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম। এমনিতেও পদ্মা সেতু হওয়ায় লঞ্চের যাত্রী কমে গেছে। তাই এখন আর ঈদে আগের মতো সেই উপচে পড়া ভিড় থাকে না সদরঘাটে।
পটুয়াখালী দশমিনার মাছুয়াখালী গ্রামের মো. বাদল হোসেন কর্মসূত্রে থাকেন নারায়ণগঞ্জে। ভোর ৫টায় সদরঘাটে আসেন তিনি। বাদল ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে চলাচল করা পূবালী-১২ লঞ্চে উঠেছেন। তিনি বলেন, ভোর থেকে সদরঘাটে আছি। ১২টা বেজে গেলো তারপরও লঞ্চ পুরোপুরি ভারলো না।
ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়াগামী এমভি তাসরিফ-১ লঞ্চের স্টাফ নাসির উদ্দিন জানান, তারা যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। যাত্রী পূর্ণ হলেই লঞ্চ ছেড়ে যাবে। গতকালের চেয়ে আজকে যাত্রী কম। বেশির ভাগই বাড়ি চলে গেছে। আজ সারা দিনই লঞ্চ চলবে।
যাত্রীরা ঘাটে এসে গন্তব্যের লঞ্চ খুঁজছেন। তাদের টানতে ঢাকা-নাজিরপুর-বরগুনাগামী এমভি শাহরুখ-২ এর স্টাফ লঞ্চের সামনে পন্টুনে হাঁকডাক করছেন, আসেন আসেন, কোনো টাইম নাই, ভরলেই ছাড়বে, ভরলেই ছাড়বে।
সদরঘাটের বিভিন্ন লঞ্চের স্টাফরা জানান, কাচাকাছি দূরত্বের লঞ্চগুলো যাত্রী ভরলেই ছড়ে যায়। বেশি দূরত্বেরগুলো যাত্রী পূর্ণ হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ছেড়ে যাবে। অধিক দূরত্বের লঞ্চগুলো সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে যায়।
এদিকে, সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ঘাটে পৌঁছাতে অনেক যাত্রী ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। অনেকেই ভিজে গেছেন। কেউ কেউ পন্টুনে ছাউনির নিচে অবস্থান করছেন আর কেউ লঞ্চে অবস্থান করছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে বরগুনা যাওয়ার জন্য আসা এক নারী যাত্রী কোলে শিশু নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই লঞ্চে ওঠেন। তিনি জানান, বাড়ি যাওযার জন্য তাড়াতাড়ি ঘাটে চলে এসেছি। আসার পথে বৃষ্টিতে ভোগান্তি হয়েছে।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদ হলেও যাত্রী খুবই কম। লঞ্চ চালিয়ে তারা ক্রমাগত লোকসান গুনছেন। ডলার শিপিং লাইন্সের (লঞ্চের নাম মর্নিং সান) ম্যানেজার মো. লাভলু জানান, লঞ্চ চালিয়ে আর লাভের মুখ দেখছেন না তারা। ঈদের সময় কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন এমন আশা থাকলেও সেই আশার গুড়ে বালি। গত পাঁচ মাস ধরে তারা লঞ্চের কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারছেন না বলেও জানান লাভলু।
বিআইডব্লিউটির ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) যুগ্ম-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. কবির হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে যাত্রীদের সদরঘাটে আসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যখন বৃষ্টি থেমে যাচ্ছে তখন যাত্রী বাড়ছে, লঞ্চ ভরে গেলে ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ আছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২টি লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে।
মো. কবির হোসেন বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল সদরঘাট দিয়ে এক লাখ লোক ঢাকা ছেড়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে সদরঘাটে যাত্রী অনেকটা কম। ঈদের আগের দিন হিসেবে আজ তেমন ভিড় নেই।