Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যশোরে পুলিশের লাঠিপেটায় আহত ২০ শিক্ষার্থী

যশোর জেলা প্রতিনিধি : 

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানববন্ধন কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের লাঠিপেটা ও ধাওয়ায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

বুধবার (৩১ জুলাই) যশোর শহরের ধর্মতলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সময় এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

পায়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হুইলচেয়ারে করে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সিনথিয়া রেজা। এ সময় তাঁর চারপাশে আহত শিক্ষার্থী একই কলেজের আরিশা জান্নাত, ঢাকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার, যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী কান্তা আক্তারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, এ পর্যন্ত যশোরে কোনো সহিংসতা হয়নি, তাই তাঁরা আজ রজনীগন্ধা ফুল হাতে কর্মসূচিতে এসেছিলেন। ওই ফুল পুলিশকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ উল্টো তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। মেয়েদের গায়ে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা হাত দিয়েছেন। সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন না। তাঁরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলা করে মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এই আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না। ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরে যাবেন না। রাজপথের আন্দোলন চলছে, চলবে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আন্দোলনকারী এক ছাত্রী বলেন, বিগত আন্দোলনের দিনগুলোতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা করলেও যশোরের পুলিশ ভাইয়েরা আমাদের কোনো বাধা দেয়নি, বরং আমাদের আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সহোযোগিতা করেছে। আজকে আমরা আন্দোলনে আসার সময় পুলিশ ভাইদের জন্য ফুল নিয়ে আসি। তাদেরকে ফুল দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু তারা আমাদের ফুলও নেয়নি। আজ তাদের আচরণের মতো ফুলগুলোও মরে গেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের হাতে একটি লাঠিসোঁটাও ছিল না। পুলিশ আমাদের মিছিলে বাধা দেয় একপর্যায়ে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছিল না। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাদের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন , তাদের আন্দোলকারীদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাধা দিয়ে আটক করে আমাদের আন্দোলন প্রতিহত করা যাবে না। আমরা রাজপথে ছিলাম, থাকব।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. প্রার্থ প্রতীম চক্রবর্তী জানান, আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের শরীরে বেশি আঘাত লেগেছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। শহরের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

যশোরে পুলিশের লাঠিপেটায় আহত ২০ শিক্ষার্থী

প্রকাশের সময় : ১০:৫২:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

যশোর জেলা প্রতিনিধি : 

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানববন্ধন কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের লাঠিপেটা ও ধাওয়ায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

বুধবার (৩১ জুলাই) যশোর শহরের ধর্মতলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সময় এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

পায়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হুইলচেয়ারে করে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সিনথিয়া রেজা। এ সময় তাঁর চারপাশে আহত শিক্ষার্থী একই কলেজের আরিশা জান্নাত, ঢাকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার, যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী কান্তা আক্তারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, এ পর্যন্ত যশোরে কোনো সহিংসতা হয়নি, তাই তাঁরা আজ রজনীগন্ধা ফুল হাতে কর্মসূচিতে এসেছিলেন। ওই ফুল পুলিশকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ উল্টো তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। মেয়েদের গায়ে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা হাত দিয়েছেন। সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন না। তাঁরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলা করে মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এই আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না। ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরে যাবেন না। রাজপথের আন্দোলন চলছে, চলবে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আন্দোলনকারী এক ছাত্রী বলেন, বিগত আন্দোলনের দিনগুলোতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা করলেও যশোরের পুলিশ ভাইয়েরা আমাদের কোনো বাধা দেয়নি, বরং আমাদের আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সহোযোগিতা করেছে। আজকে আমরা আন্দোলনে আসার সময় পুলিশ ভাইদের জন্য ফুল নিয়ে আসি। তাদেরকে ফুল দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু তারা আমাদের ফুলও নেয়নি। আজ তাদের আচরণের মতো ফুলগুলোও মরে গেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের হাতে একটি লাঠিসোঁটাও ছিল না। পুলিশ আমাদের মিছিলে বাধা দেয় একপর্যায়ে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছিল না। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাদের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন , তাদের আন্দোলকারীদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাধা দিয়ে আটক করে আমাদের আন্দোলন প্রতিহত করা যাবে না। আমরা রাজপথে ছিলাম, থাকব।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. প্রার্থ প্রতীম চক্রবর্তী জানান, আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের শরীরে বেশি আঘাত লেগেছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। শহরের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।