Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণসহ সংস্কার কাজ চলছে প্রায় দুই মাস ধরে। জেলার সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাচ্ছে তাই ভাবে কাজ সম্পাদন করলেও অজ্ঞাত কারণে সড়কে অনুপস্থিত কর্তাব্যীক্তরা। নিম্নমানের ইট ও বালুর ব্যবহার এবং সড়কের পাশের মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। কালভার্ট নির্মানে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার লোকাল রড।

প্রকল্পের কাজ দেখভালে যান না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। বড় ধরনের অনিয়ম হচ্ছে কাজে। এতে স্থানীয় সচেতন অনেকেই কাজ দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন। তবে কাজে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণসহ সংস্কার প্রকল্পের আওতায় ২৯ কিলোমিটার তিন ভাগে ২৭০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গাংনীর তেরাইল ডিগ্রি কলেজ থেকে খলিশাকুন্ডি ব্রিজের পূর্বপাশ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার একটি প্যাকেজ। এ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স রিমি নির্মাণ সংস্থা। এ প্যাকেজটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বামন্দী বাজারের অদূরে অস্থায়ী কার্যালয় ও ফিল্ড স্থাপন করেছে।

সেখানে প্রকাশ্যে নিম্নমানের ইট ভেঙে বানানো হচ্ছে খোয়া। এই খোয়া ও নিম্নমানের বালু দিয়েই সম্প্রসারিত অংশের ডব্লিউবিএম সম্পন্ন হচ্ছে। সঠিকভাবে কমপেকশন করা হচ্ছে না মর্মে এলাকার লোকজন বারবার বলার পরেও তাতে কর্ণপাত করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের পাশে দেখা মিলছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করলেও অভিযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ।

তাদের অভিযোগ, সঠিকভাবে কমপেকশন না হলে ও নিম্নমানের দ্রব্য ব্যবহার হলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাবে। নিয়ম অনুযায়ী এলাকার বাইরে থেকে মাটি এনে রাস্তার দুই পাশ ভরাট করার শর্ত থাকলেও তা অগ্রাহ্য হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাস্তার পাশে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করেছে। এতে জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তা ছাড়া একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তার পাশে দেওয়া ওই মাটি ধসে রাস্তা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটিতে রয়েছে কয়েকটি কালভার্ট। কালভার্ট নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, খোয়া আর ঢাকার লোকাল পূর্বাচল রড। স্থানীয়রা এ বিষয়টিতে বাধা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকিতে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা। ফলে নবনির্মিত এসব কালভার্ট জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে অভিযোগ করছেন এ সড়কে চলাচলকারীরা।

স্থানীয় আকুবপুর গ্রামের রাজা মিয়া জানান, এ সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তা ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও স্থানীয় হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বড় প্রকল্পের আওতাভুক্ত করেছে। তিন ধাপে কয়েকশ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের সুনাম অর্জন হওয়ার কথা। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকৌশলীদের আঁতাতে তা ভেস্তে যাচ্ছে। একই মন্তব্য করেছেন পথচারী হাড়াভাঙ্গা গ্রামের জুরাইস ইসলাম ও আমিরুল ইসলামসহ অনেকেই।

একই অভিযোগ তুলে স্থানীয় মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘আমার পরিষদের সামনে দিয়ে কাজ হচ্ছে। রাস্তার পাশের মাটি কেটে রাস্তায় দেওয়ায় রাস্তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের ইট, বালু দিয়ে রাস্তা করা হলেও প্রকৌশলীদের দেখা পাইনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারভাবে ৯০ কোটি টাকার কাজে পুকুর চুরি করছে। জনস্বার্থে সড়কটির কাজ ভালো হওয়া দরকার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) সুমন রহমান সময়ের আলোকে বলেন, মান ঠিক রেখেই কাজ করা হচ্ছে। বাকিটা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবসময় কাজের সাইটে থাকি, যদি না থাকতে পারি তখন কার্যসহকারী সোয়েব আবু শাহীন সালাউদ্দীন থাকে। ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের মাধ্যমে যদি খারাপ মালামাল নিয়ে থাকে, সেটার দায়িত্ব তাদের। আমাদের কাজ আমরা বুঝে নেব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, কমপেকশনের সময়টা আমি দেখিনি তাই ওটা বলতে পারব না। কয়েক দিন আমি কাজের সাইটে গিয়ে খারাপ দেখতে পাইনি। তবে স্থানীয় মালামাল সরবরাহকারীরা অনেক সময় নিম্নমানের মালামাল দিয়ে থাকে। সেগুলো অনেক সময় পরিবর্তন করা হয়। নিম্নমানের কোনো কাজ হবে না। এরপরেও যদি দেখতে পাই তা হলে অবশ্যই আমার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণসহ সংস্কার কাজ চলছে প্রায় দুই মাস ধরে। জেলার সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাচ্ছে তাই ভাবে কাজ সম্পাদন করলেও অজ্ঞাত কারণে সড়কে অনুপস্থিত কর্তাব্যীক্তরা। নিম্নমানের ইট ও বালুর ব্যবহার এবং সড়কের পাশের মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। কালভার্ট নির্মানে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার লোকাল রড।

প্রকল্পের কাজ দেখভালে যান না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। বড় ধরনের অনিয়ম হচ্ছে কাজে। এতে স্থানীয় সচেতন অনেকেই কাজ দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন। তবে কাজে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণসহ সংস্কার প্রকল্পের আওতায় ২৯ কিলোমিটার তিন ভাগে ২৭০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গাংনীর তেরাইল ডিগ্রি কলেজ থেকে খলিশাকুন্ডি ব্রিজের পূর্বপাশ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার একটি প্যাকেজ। এ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স রিমি নির্মাণ সংস্থা। এ প্যাকেজটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বামন্দী বাজারের অদূরে অস্থায়ী কার্যালয় ও ফিল্ড স্থাপন করেছে।

সেখানে প্রকাশ্যে নিম্নমানের ইট ভেঙে বানানো হচ্ছে খোয়া। এই খোয়া ও নিম্নমানের বালু দিয়েই সম্প্রসারিত অংশের ডব্লিউবিএম সম্পন্ন হচ্ছে। সঠিকভাবে কমপেকশন করা হচ্ছে না মর্মে এলাকার লোকজন বারবার বলার পরেও তাতে কর্ণপাত করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের পাশে দেখা মিলছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করলেও অভিযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ।

তাদের অভিযোগ, সঠিকভাবে কমপেকশন না হলে ও নিম্নমানের দ্রব্য ব্যবহার হলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাবে। নিয়ম অনুযায়ী এলাকার বাইরে থেকে মাটি এনে রাস্তার দুই পাশ ভরাট করার শর্ত থাকলেও তা অগ্রাহ্য হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাস্তার পাশে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করেছে। এতে জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তা ছাড়া একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তার পাশে দেওয়া ওই মাটি ধসে রাস্তা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটিতে রয়েছে কয়েকটি কালভার্ট। কালভার্ট নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, খোয়া আর ঢাকার লোকাল পূর্বাচল রড। স্থানীয়রা এ বিষয়টিতে বাধা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকিতে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা। ফলে নবনির্মিত এসব কালভার্ট জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে অভিযোগ করছেন এ সড়কে চলাচলকারীরা।

স্থানীয় আকুবপুর গ্রামের রাজা মিয়া জানান, এ সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তা ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও স্থানীয় হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বড় প্রকল্পের আওতাভুক্ত করেছে। তিন ধাপে কয়েকশ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের সুনাম অর্জন হওয়ার কথা। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকৌশলীদের আঁতাতে তা ভেস্তে যাচ্ছে। একই মন্তব্য করেছেন পথচারী হাড়াভাঙ্গা গ্রামের জুরাইস ইসলাম ও আমিরুল ইসলামসহ অনেকেই।

একই অভিযোগ তুলে স্থানীয় মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘আমার পরিষদের সামনে দিয়ে কাজ হচ্ছে। রাস্তার পাশের মাটি কেটে রাস্তায় দেওয়ায় রাস্তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের ইট, বালু দিয়ে রাস্তা করা হলেও প্রকৌশলীদের দেখা পাইনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারভাবে ৯০ কোটি টাকার কাজে পুকুর চুরি করছে। জনস্বার্থে সড়কটির কাজ ভালো হওয়া দরকার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) সুমন রহমান সময়ের আলোকে বলেন, মান ঠিক রেখেই কাজ করা হচ্ছে। বাকিটা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবসময় কাজের সাইটে থাকি, যদি না থাকতে পারি তখন কার্যসহকারী সোয়েব আবু শাহীন সালাউদ্দীন থাকে। ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের মাধ্যমে যদি খারাপ মালামাল নিয়ে থাকে, সেটার দায়িত্ব তাদের। আমাদের কাজ আমরা বুঝে নেব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, কমপেকশনের সময়টা আমি দেখিনি তাই ওটা বলতে পারব না। কয়েক দিন আমি কাজের সাইটে গিয়ে খারাপ দেখতে পাইনি। তবে স্থানীয় মালামাল সরবরাহকারীরা অনেক সময় নিম্নমানের মালামাল দিয়ে থাকে। সেগুলো অনেক সময় পরিবর্তন করা হয়। নিম্নমানের কোনো কাজ হবে না। এরপরেও যদি দেখতে পাই তা হলে অবশ্যই আমার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।