স্পোর্টস ডেস্ক :
মেসিকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি লিওনেল স্কালোনি। ‘নরক’ খ্যাত লাপাজে তাকে ডাগ আউটে রেখেই কাতার বিশ্বকাপ জেতা অন্যদের ওপরেই ভরসা রাখেন আর্জেন্টিনার এই কোচ। নিরাশ করেননি তারা। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয় তুলে নিয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসিরা কষ্টসাধ্য জয় পেয়েছিলেন। একমাত্র ফ্রি-কিক গোলেই সেই জয় নিশ্চিত করেছিলেন বিশ্বজয়ী মহাতারকা। কিন্তু চোটের অস্বস্তি নিয়ে তিনি সেদিন মাঠ ছেড়েছিলেন, যা সতীর্থদের বাড়তি চাপেই রাখার কথা। সেসব দুশ্চিন্তা পাশ কাটিয়ে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অভিজ্ঞ আনহেল ডি মারিয়া। দলের নেতৃত্বভার নেয়ার পাশাপাশি খেলার কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছিলেন তিনি। পুরো মাঠে তার পদচারণা। খেলালেন, গোল করালেন। তাতেই সব প্রতিন্ধকতা জয় করে ঘরে ফিরতে যাচ্ছে লা আলবিসেলেস্তারা।
আর্জেন্টিনার হয়ে গোল তিনটি করেন এনজো ফার্নান্দেজ, নিকোলাস তালিয়াফিকো এবং নিকোলাস গঞ্জালেজ।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে লাপাজের এস্তাদিও হার্নান্দো সাইলস স্টেডিয়ামে ৬০ শতাংশ বলই দখলে ছিল আর্জেন্টিনার। অন্যদিকে ৩৯ মিনিটে দুই হলুদ কার্ডের পর লাল কার্ড হজম করে মাঠ ছাড়তে হয় বলিভিয়ার রবার্তো ফার্নান্দেজকে। ঘরের মাঠের বিরূপ পরিস্থিতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করা তো দূরে থাক, স্বাগতিকরা উল্টো ১০ জনের দল নিয়ে আরও চাপে পড়ে যায়।
এদিন শুরু থেকেই যথারীতি বলের দখল রেখে খেলায় মনোযোগ দেয় আর্জেন্টিনা। তবে প্রথম দিকে একটু সতর্কই মনে হচ্ছিল দলটিকে। হয়তো উচ্চতা নিয়ে আগে থেকে যে উদ্বেগ ছিল সেটা এবং মেসির না থাকা এতে ভূমিকা রেখেছে। এ সময় দূরপাল্লার শটে একাধিকবার বলিভিয়াকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। অন্য দিকে বলিভিয়া চেষ্টা করেছে ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে এগিয়ে যেতে।
যদিও দ্রুত ম্যাচে ফিরে এসে বলিভিয়াকে সে সুযোগ দেয়নি আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে ১৩ মিনিটে এনজোর দুর্দান্ত এক শট আঙুল ছুঁয়ে ঠেকিয়ে দেন বলিভিয়ার গোলরক্ষক। তবে ৩১ মিনিটে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় এনজো। হুলিয়ান আলভারেজের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে আনহেল দি মারিয়া সেটি পাঠান বক্সে। দারুণ ফিনিশিংয়ে দলকে এগিয়ে দেন চেলসি মিডফিল্ডার।
৩৯তম মিনিটেই ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বহিস্কার হন রবার্ট ফার্নান্দেজ। তারই সুযোগ নিয়ে বিরতির আগমুহূর্তে লিড ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তালিয়াফিকো। ডি মারিয়ার ফ্রি কিক বলটি তিনি হেডে লক্ষ্যভেদ করেন। ২-০ ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় স্কালোনির শিষ্যরা।
বিরতির পরও বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা খেলায় আধিপত্য ধরে রাখে। তবে খেলার গতি ঠিক আগের মতো ছিল না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাঠের উচ্চতা-ই হয়তো এই প্রভাব ফেলেছে। তবে ৭০ ও ৭২ মিনিটে নেওয়া আলভারেজ ও ডি মারিয়ার দূরপাল্লার শটেও হতে পারত গোল। তবে সেবার জালের দেখা না পেলেও ৮৩ মিনিটে ঠিকই সফরকারী আলবিসেলেস্তে বাহিনী তৃতীয় গোল আদায় করে নেয়। বদলি নামা এজিকিয়েল পালাসিওসের পাস থেকে নিকোলাস গনসালেস সফল লক্ষ্যভেদ করেন।
ম্যাচ শেষে এনজো ফার্নান্দেজ বলেন, আমার নিঃশ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছিলো। উচ্চতা অনেক বেশি। তবে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছি। ম্যাচটাতেও খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমাদের। সময় যত গড়াচ্ছিলো, তত যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। তবে, গোল করতে পেরে, দলকে জেতাতে পেরে খুব ভালো লাগছে এখন।
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ডি মারিয়া আর্জেন্টাইন মিডিয়া টিওয়াইসি স্পোর্টসকে বলেন, মাত্র দুই ম্যাচ গেলো। আমরা জানতাম, ৬টা পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো যেভাবেই আসুক না কেন। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরতে পেরেছি, নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এটা যেন আমার জন্য অবিশ্বাস্য একটি অনভূতি।
এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাছাইয়ের টেবিলে শীর্ষস্থান দখল করে নিল আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে ইন্টার মায়ামি ও জাতীয় দলের হয়ে টানা ম্যাচ খেলার ধকলও কিছুটা সামলাতে পারলেন মেসি। বয়স ও ক্লান্তির কথা মাথায় রেখেই এদিন তাকে বাইরে রেখেছিলেন স্কালোনি।
আগামী মাসে আবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবে কাতার বিশ্বকাপজয়ীরা। ১৩ অক্টোবর ভোরে তারা মুখোমুখি হবে প্যারাগুয়ের।