Dhaka শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণকাজ, ভোগান্তিতে দুই পাড়ের হাজারো মানুষ

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুনবতী ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিতব্য আকদিয়া ব্রিজ পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ৮১ মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটির পুরাতন কাঠামো ভেঙে নতুন নির্মাণ শুরুর কথা থাকলেও বারবার ঠিকাদার পরিবর্তন ও কাজে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই পাড়ের হাজারো মানুষ। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা- যা স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে প্রতিদিন, দীর্ঘ হয়েছে জনভোগান্তি।

জানা গেছে, ২০০০ সালের মার্চ মাসে প্রায় ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণের কাজ পায় সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাতিজা তোফায়েল আহমেদের প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলি এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের মে মাসে এলজিইডি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে এবং ৬৮ লাখ টাকা জরিমানা করে। নতুনভাবে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স আমিন ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু নতুন ঠিকাদারও গত ৯ মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পাড়ে মানুষ অপেক্ষা করছেন নৌকার জন্য। স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। প্রতিদিন ভাড়ায় পারাপার হতে হচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষকে।

স্থানীয় বুধড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শরীফ জানায়, গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন ২০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে স্কুলে যাই। অনেক সময় ভাড়া না থাকলে যেতে পারি না।

গুনবতী আল-ফারাবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রোকসানা বলে, অনেক দূর হেঁটে আসি, কিন্তু নদী পারাপারে গুনতে হয় ভাড়া। টাকা না থাকলে স্কুলে যাওয়া হয় না। এভাবে চার বছর ধরে কষ্ট করে পড়াশোনা করছি।

আকদিয়া গ্রামের গৃহবধূ সালমা জানান, রাতে কেউ অসুস্থ হলে মাঝিদের বাড়ি গিয়ে বাড়তি টাকা চুক্তিতে পা ধরে আনতে হয়।

ঘাটের নৌকার মাঝি সোলেমান বলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত থাকি। এরপর রোগী এলে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। ঝুঁকি নিয়েও মাঝেমধ্যে নদী পার করতে হয়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. আমিন দাবি করেন, কাজ পাওয়ার পর অনেক কাজ করা হয়েছে। এখন বর্ষার পানির জন্য কাজ বন্ধ আছে, পানি কমলে আবার কাজ শুরু করব।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, সময়মতো কাজ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পলি এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে জরিমানা করা হয়েছে। নতুন দরপত্রে ঠিকাদার আমিন ইন্টারন্যাশনাল কাজ শুরু করেছে। পানি কমলে নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সেনাবাহিনীর সমর্থন না থাকলে এই সরকার টিকবে না : ফরহাদ মজহার

মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণকাজ, ভোগান্তিতে দুই পাড়ের হাজারো মানুষ

প্রকাশের সময় : ১২:২৭:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুনবতী ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিতব্য আকদিয়া ব্রিজ পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ৮১ মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটির পুরাতন কাঠামো ভেঙে নতুন নির্মাণ শুরুর কথা থাকলেও বারবার ঠিকাদার পরিবর্তন ও কাজে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই পাড়ের হাজারো মানুষ। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা- যা স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে প্রতিদিন, দীর্ঘ হয়েছে জনভোগান্তি।

জানা গেছে, ২০০০ সালের মার্চ মাসে প্রায় ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণের কাজ পায় সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাতিজা তোফায়েল আহমেদের প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলি এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের মে মাসে এলজিইডি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে এবং ৬৮ লাখ টাকা জরিমানা করে। নতুনভাবে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স আমিন ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু নতুন ঠিকাদারও গত ৯ মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পাড়ে মানুষ অপেক্ষা করছেন নৌকার জন্য। স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। প্রতিদিন ভাড়ায় পারাপার হতে হচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষকে।

স্থানীয় বুধড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শরীফ জানায়, গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন ২০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে স্কুলে যাই। অনেক সময় ভাড়া না থাকলে যেতে পারি না।

গুনবতী আল-ফারাবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রোকসানা বলে, অনেক দূর হেঁটে আসি, কিন্তু নদী পারাপারে গুনতে হয় ভাড়া। টাকা না থাকলে স্কুলে যাওয়া হয় না। এভাবে চার বছর ধরে কষ্ট করে পড়াশোনা করছি।

আকদিয়া গ্রামের গৃহবধূ সালমা জানান, রাতে কেউ অসুস্থ হলে মাঝিদের বাড়ি গিয়ে বাড়তি টাকা চুক্তিতে পা ধরে আনতে হয়।

ঘাটের নৌকার মাঝি সোলেমান বলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত থাকি। এরপর রোগী এলে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। ঝুঁকি নিয়েও মাঝেমধ্যে নদী পার করতে হয়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. আমিন দাবি করেন, কাজ পাওয়ার পর অনেক কাজ করা হয়েছে। এখন বর্ষার পানির জন্য কাজ বন্ধ আছে, পানি কমলে আবার কাজ শুরু করব।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, সময়মতো কাজ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পলি এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে জরিমানা করা হয়েছে। নতুন দরপত্রে ঠিকাদার আমিন ইন্টারন্যাশনাল কাজ শুরু করেছে। পানি কমলে নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।