বরিশাল জেলা প্রতিনিধি :
মেয়াদ শেষ হওয়ার চারদিন আগে মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে লিখিতপত্র দিয়ে অব্যাহতি নেন তিনি। একই সঙ্গে প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে হেঁটে নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাড়িতে যান তিনি।
এসময় নগরীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এর আগে সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল ও সম্মাননা স্মারক দিয়ে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানান।
নগর ভবন থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে সবার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমি বিদায় বলবো না, শেষ কর্মদিবস বলবো। জনগণের কাতারে আবার ফিরে যাচ্ছি, সবাই দোয়া করবেন। এ কর্মকালীন যদি কারও মনে ব্যথা দিয়ে থাকি, তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ যা করেছি সবকিছু এ নগর ভবনের জন্য করেছি। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিস্বার্থ ছিল না। নতুন মেয়র আসছেন, তাকে সবধরনের সহযোগিতা করবেন। আমি ছিলাম, আছি, থাকবো। আমাকে যে কোনো বিষয়ে ডাকলে আপনারা কাছে পাবেন।
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা আজকে আমাকে যে ভালোবাসা দিলেন তার ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না। আমার পূর্বপুরুষ আপনাদের সেবায় ছিলেন। আমি মেয়র ছিলাম। আজকে সাধারণ মানুষের কাতারে চলে এলাম। আপনাদের মাঝে আমাকে আজকে যেভাবে বরণ করলেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ নগরবাসীর কাছে।
তিনি আরও বলেন, আমার কার্যকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছি। কারও কোনো বেতন-ভাতা বকেয়া রাখিনি। সবার সব বকেয়া ক্লিয়ার করে দিয়ে গেলাম। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর জন্য দোয়া করবেন। আমার শুভকামনা থাকবে সিটি করপোরেশনের প্রতি, যাতে নগরীকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট নগরীতে রূপান্তর করতে পারেন নতুন মেয়র।
তিনি বলেন, মানুষ কাজ করলে ভুলত্রুটি হবেই। আমিও মানুষ। আমি বরিশালবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার কোনো ব্যক্তি স্বার্থ ছিল না। আমি যে কাজ করেছি প্রতিটি কাজই আমি বরিশালের স্বার্থে করেছি। আমার কর্মকালের সময়ে যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা করে দিবেন। বরিশালবাসীকে বারবার সেবা করার সুযোগ আমি চাই।
সাদিক বলেন, জনগণ এমপি প্রার্থী হিসেবে আমাকে চাইছেন। আমরা রাজনীতি করি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আপনারা দেখেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সামনের নির্বাচনেও তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। শেষবারের মতো আমি এই কথাই বলব, ’মোর পরিচয় এই হোকে আমি বরিশালবাসীর লোক’।
পরে মেয়র সাদিক হেঁটে দুই কিলোমিটার দূরে কালীবাড়ি রোডের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। এসময় সাদিক অনুসারী নেতাকর্মীরা ‘সাদিক ভাই ভয় নাই, রাজ পথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পথে কালীবাড়ি রোডের সামনে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা জানায় সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ।
এদিকে সাদিক আবদুল্লাহর বিদায়ী সংবর্ধনা উপলক্ষে নগরীজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
নগরীর হাটখোলা এলাকার বাসিন্দা শেখ বৃষ্টি জাগো নিউজকে বলেন, মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাংলাবাজার এলাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ৩০ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায় গিয়ে পৌঁছেছি। তাও বিকল্প পথে গিয়ে। এতে চিকিৎসকের দেওয়া সিরিয়াল মিস করাসহ নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে।
অন্যদিকে সাদিক আবদুল্লাহ তার মেয়রের মেয়াদকাল পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার চারদিন আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে নানান সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, চাচার হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে অনীহার কারণেই চারদিন আগে তিনি অব্যাহিত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দায়িত্ব নেবেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।