Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুন্সিগঞ্জে অস্ত্রসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

পদ্মায় গরুর ট্রলারে ডাকাতি করে পালানোর সময় স্পিড বোটে থাকা ডাকাত দলের সদস্যদের প্রায় ৮০ কিলোমিটার নৌপথ ধাওয়া করে মুন্সিগঞ্জ সদরে এসে চারটি পাইপগান, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ আন্ত:জেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নৌপুলিশ। পালিয়ে যাওয়া ১৩ ডাকাতকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।

মঙ্গলবার (২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

গ্রেফতার ডাকাত হলেন, শরিয়তপুর জেলার রহমান, নড়িয়া এলাকার ইবাত আলী, চাঁদপুর জেলার তাজুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার মহসিন, মেহেদী ও শিহাব, নারায়নগঞ্জ জেলার শাহিন।

আটককৃত ডাকাতরা রাজবাবাড়ীর দৌলতদিয়াঘাট এলাকায় ডাকাতি করে পালিয়ে যাচ্ছিল। এসময় তাদের পিছু নিয়ে মুন্সিগঞ্জে এসে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে নৌপুলিশ। ডাকাতদলের কাছ থেকে অস্ত্র ছাড়াও গুলি, বিপুল পরিমান নগদ অর্থ ৩৩ লাখ টাকা ও একটি স্পিডবোট জব্দ করা হয়।

আরিচা ঘাটে দুপুর আড়াইটার দিকে পৌঁছে তারা একটি গরুর ট্রলারে ডাকাতি করে। ডাকাতের খবর পেয়ে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ডাকাতদের ধাওয়া করে। ডাকাতরা মাওয়ার দিকে আসলে পুলিশের সাথে গুলি বিনিময় হয়। এরপর তারা পথ পরিবর্তন করে কালিরচরের শাখা নদী ব্যবহার করে ঢুকে মেঘনা নদীতে ঢুকে যায়।

ধাওয়া কালে ডাকাতরা পুলিশের উপর গুলি করে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টাগুলি চালায়। এতে তারা মেঘনা নদী থেকে মুন্সিগঞ্জের ভেতলের খালে ঢুকে যায়। পরে বাঘাইকান্দি এসে পৌঁছে তারা স্পিডবোট রেখে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় অভিযান চালিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৭ জনকে আটক করা হয়।

ডাকাতির শিকার গরু ব্যবসায়ীরা হলেন- হেলাল উদ্দিন, মোস্তাক বেপারী, মোশারফ হোসেন, দুলাল খান, ইউসুফ বেপারী, জিন্না খান, লোকমান বেপারী, ইমতাজ শেখ, শাহজাহান বিশ্বাস, লিয়াকত বিশ্বাস, আলিমসহ ৭০ থেকে ৮০ জন।

এ সময় ডাকাত দলের মারধরে আহত উত্তর দৌলতদিয়া কিয়ামুদ্দিন পাড়ার নিমাই মোল্যার ছেলে বাবলু মোল্যা (৪০) গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। আর দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মন্ডলপাড়ার হায়াত আলীর ছেলে ট্রলারের মাঝি ইদ্রিস মাঝি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ডাকাতি হওয়া ট্রলারে থাকা হান্নান বেপারী বলেন, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে ৭০-৮০ জন গরু-ছাগল ব্যবসায়ী দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্য আসি। দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরি ঘাটের অদূরে স্পিডবোটে ১৫-২০ জনের মুখোশধারী ও মুখোশ ছাড়া প্যান্ট ও লুঙ্গি পড়া ডাকাত দল এসে প্রথমে মাঝিকে কুপিয়ে জখম করে। এসময় অস্ত্র দিয়ে সবাইকে মারধর করে কাছে থাকা টাকা নিয়ে তারা চলে যায়।

রাজবাড়ী লক্ষীকোল এলাকার গরু ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন সরদার ও মুনতাজ বেপারী বলেন, ট্রলারটি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কিছুদূর থাকতেই ডান পাশ দিয়ে একটি স্পিডবোট আসতে দেখতে পাই। প্রথমে আমরা মনে করেছিলেন যাত্রী পারাপারের বোট। পরে স্পিডবোটটি আমাদের ট্রলারের কাছে এসে অস্ত্রসস্ত্র হাতে মুখোশ পড়া ১৫-২০ জনের একদল ডাকাত ট্রলারে ওঠে। এ সময় আমাদের মারধর কাছে থাকা গরু বিক্রির অন্তত এক কোটি টাকা লুটে নিয়ে যায়।

নৌ-পুলিশ ফরিদপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আশিক সাইদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জেএম সিরাজুল কবির নদী পথে টহল ও ডাকাতদের ধাওয়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই দলের সাতজনকে আটকসহ মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হয়। বাকিদের আটকে এখনও অভিযান চলমান রয়েছে।

নৌপুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ২০ জন ডাকাতির পরিকল্পনা করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়াঘাট থেকে একটি ২০০ হর্সপাওয়ারের স্পিডবোট নিয়ে আরিচা ঘাটে রওনা হয়। আরিচা ঘাটে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে পৌঁছে তারা একটি গরুর ট্রলারে ডাকাতি করে।

ডাকাতির খবর পেয়ে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ডাকাতদের ধাওয়া করেন। ডাকাতরা মাওয়ার দিকে এসে তারা কলিকালের কাল হয়ে ঢুকে মেঘনা নদীতে চলে আসে। ধাওয়া দেওয়ায় ডাকাতরা পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। এতে তারা মেঘনা নদী থেকে মুন্সিগঞ্জের ভেতর খাল হয়ে ঢুকে যায়। পরে বাঘাইকান্দি পৌঁছে তারা স্পিডবোট রেখে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় অভিযান চালিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৭ জনকে আটক করা হয়।

মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান আল মামুন জানান, চারটি পাইপগান, দেশীয় অস্ত্র, ১১ রাউন্ড গুলি ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত স্পিডবোট জব্দ করা হয়েছে। একই সাথে দুই ধাপে ডাকাতি করা ৩৩ লক্ষ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ২০ জনের মধ্যে বাকি ১৩ জনকে আটকের চেষ্টা চলছে।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মুন্সিগঞ্জে অস্ত্রসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ০১:৪৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০২৩

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

পদ্মায় গরুর ট্রলারে ডাকাতি করে পালানোর সময় স্পিড বোটে থাকা ডাকাত দলের সদস্যদের প্রায় ৮০ কিলোমিটার নৌপথ ধাওয়া করে মুন্সিগঞ্জ সদরে এসে চারটি পাইপগান, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ আন্ত:জেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নৌপুলিশ। পালিয়ে যাওয়া ১৩ ডাকাতকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।

মঙ্গলবার (২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

গ্রেফতার ডাকাত হলেন, শরিয়তপুর জেলার রহমান, নড়িয়া এলাকার ইবাত আলী, চাঁদপুর জেলার তাজুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার মহসিন, মেহেদী ও শিহাব, নারায়নগঞ্জ জেলার শাহিন।

আটককৃত ডাকাতরা রাজবাবাড়ীর দৌলতদিয়াঘাট এলাকায় ডাকাতি করে পালিয়ে যাচ্ছিল। এসময় তাদের পিছু নিয়ে মুন্সিগঞ্জে এসে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে নৌপুলিশ। ডাকাতদলের কাছ থেকে অস্ত্র ছাড়াও গুলি, বিপুল পরিমান নগদ অর্থ ৩৩ লাখ টাকা ও একটি স্পিডবোট জব্দ করা হয়।

আরিচা ঘাটে দুপুর আড়াইটার দিকে পৌঁছে তারা একটি গরুর ট্রলারে ডাকাতি করে। ডাকাতের খবর পেয়ে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ডাকাতদের ধাওয়া করে। ডাকাতরা মাওয়ার দিকে আসলে পুলিশের সাথে গুলি বিনিময় হয়। এরপর তারা পথ পরিবর্তন করে কালিরচরের শাখা নদী ব্যবহার করে ঢুকে মেঘনা নদীতে ঢুকে যায়।

ধাওয়া কালে ডাকাতরা পুলিশের উপর গুলি করে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টাগুলি চালায়। এতে তারা মেঘনা নদী থেকে মুন্সিগঞ্জের ভেতলের খালে ঢুকে যায়। পরে বাঘাইকান্দি এসে পৌঁছে তারা স্পিডবোট রেখে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় অভিযান চালিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৭ জনকে আটক করা হয়।

ডাকাতির শিকার গরু ব্যবসায়ীরা হলেন- হেলাল উদ্দিন, মোস্তাক বেপারী, মোশারফ হোসেন, দুলাল খান, ইউসুফ বেপারী, জিন্না খান, লোকমান বেপারী, ইমতাজ শেখ, শাহজাহান বিশ্বাস, লিয়াকত বিশ্বাস, আলিমসহ ৭০ থেকে ৮০ জন।

এ সময় ডাকাত দলের মারধরে আহত উত্তর দৌলতদিয়া কিয়ামুদ্দিন পাড়ার নিমাই মোল্যার ছেলে বাবলু মোল্যা (৪০) গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। আর দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মন্ডলপাড়ার হায়াত আলীর ছেলে ট্রলারের মাঝি ইদ্রিস মাঝি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ডাকাতি হওয়া ট্রলারে থাকা হান্নান বেপারী বলেন, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে ৭০-৮০ জন গরু-ছাগল ব্যবসায়ী দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্য আসি। দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরি ঘাটের অদূরে স্পিডবোটে ১৫-২০ জনের মুখোশধারী ও মুখোশ ছাড়া প্যান্ট ও লুঙ্গি পড়া ডাকাত দল এসে প্রথমে মাঝিকে কুপিয়ে জখম করে। এসময় অস্ত্র দিয়ে সবাইকে মারধর করে কাছে থাকা টাকা নিয়ে তারা চলে যায়।

রাজবাড়ী লক্ষীকোল এলাকার গরু ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন সরদার ও মুনতাজ বেপারী বলেন, ট্রলারটি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কিছুদূর থাকতেই ডান পাশ দিয়ে একটি স্পিডবোট আসতে দেখতে পাই। প্রথমে আমরা মনে করেছিলেন যাত্রী পারাপারের বোট। পরে স্পিডবোটটি আমাদের ট্রলারের কাছে এসে অস্ত্রসস্ত্র হাতে মুখোশ পড়া ১৫-২০ জনের একদল ডাকাত ট্রলারে ওঠে। এ সময় আমাদের মারধর কাছে থাকা গরু বিক্রির অন্তত এক কোটি টাকা লুটে নিয়ে যায়।

নৌ-পুলিশ ফরিদপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আশিক সাইদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জেএম সিরাজুল কবির নদী পথে টহল ও ডাকাতদের ধাওয়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই দলের সাতজনকে আটকসহ মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হয়। বাকিদের আটকে এখনও অভিযান চলমান রয়েছে।

নৌপুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ২০ জন ডাকাতির পরিকল্পনা করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়াঘাট থেকে একটি ২০০ হর্সপাওয়ারের স্পিডবোট নিয়ে আরিচা ঘাটে রওনা হয়। আরিচা ঘাটে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে পৌঁছে তারা একটি গরুর ট্রলারে ডাকাতি করে।

ডাকাতির খবর পেয়ে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ডাকাতদের ধাওয়া করেন। ডাকাতরা মাওয়ার দিকে এসে তারা কলিকালের কাল হয়ে ঢুকে মেঘনা নদীতে চলে আসে। ধাওয়া দেওয়ায় ডাকাতরা পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। এতে তারা মেঘনা নদী থেকে মুন্সিগঞ্জের ভেতর খাল হয়ে ঢুকে যায়। পরে বাঘাইকান্দি পৌঁছে তারা স্পিডবোট রেখে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় অভিযান চালিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৭ জনকে আটক করা হয়।

মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান আল মামুন জানান, চারটি পাইপগান, দেশীয় অস্ত্র, ১১ রাউন্ড গুলি ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত স্পিডবোট জব্দ করা হয়েছে। একই সাথে দুই ধাপে ডাকাতি করা ৩৩ লক্ষ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ২০ জনের মধ্যে বাকি ১৩ জনকে আটকের চেষ্টা চলছে।