নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে চট্টগ্রামে মুক্তিকামী জনতার ওপর গুলি চালায় জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে জীবন দিতে হয়েছে জিয়ার দায়িত্বে থাকা সেক্টরে।
বুধবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা ভুললে চলবে না, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ছিল একজন মেজর। জিয়াউর রহমানের জন্ম হলো কলকাতায়। তার পরিবার যখন পাকিস্তান ভারত ভাগ হয় তখন পাকিস্তানে ফিরে আসে। সে কিন্তু পূর্ববঙ্গে আসেনি। তারা গিয়েছিলো করাচিতে। সেখানেই পড়াশোনা করে। সেখানে আর্মিতে যোগ দেয়। সেখান থেকে কার্যাদেশ পেয়ে পূর্ববঙ্গে এসেছিলো দায়িত্ব পালন করতে। এটাই বাস্তবতা। তার মনে তো ওই পাকিস্তানটা রয়ে গেছে। তার প্রমাণও আছে। মেজর থেকে যে একে একে প্রমোশন পেলো এই প্রমোশনগুলো কে দিয়েছে? এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছে। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও হয়তো ভুলে যায়।
মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করেই ক্ষমতা দখল করেছিল জিয়াউর রহমান উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ৭৫ এর পর ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছিল। নানা অপপ্রচার চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি মুছে ফেলতে চাওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল বলেই জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের বাবা ছিলেন ওই সময় খাদ্যসচিব, তার ভুল তথ্যের কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অনেক দেশ সহায়তা করলেও বড় কিছু দেশ বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীনতার পর অল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব পরিকল্পনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার মধ্যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল বলেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
বিএনপির নেতারা যে বলে পঁচিশে মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেছে, তাহলে যুদ্ধটা করলো কে? বিজয়টা আনলো কে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করা, শুধু পরিচালনা না সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা। বিভিন্ন সেক্টর গঠন করা। সেই সেক্টরের একটির দায়িত্ব পায় জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান তো সেখানে একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে অধিনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলো জিয়াউর রহমান। এই কথা তাদের ভুলে গেলে চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্তরের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে বিজয়ী সদস্যরাই কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। এই সরকার গঠন করে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে শপথ নিলেন। শপথ নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করলেন এই সরকার। যেহেতু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তার সাথে সাথেই তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু আঁতেল আছে। বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যিনি। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুকে সময় দেওয়া হয়নি জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা না করে উল্টো বিরোধিতা করা হয়েছিল। যারা এখন দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না তারাই জাতির পিতার অবদানকে অস্বীকার করেছিল।
বিএনপির চোখে স্বৈরতন্ত্রের ঠুলি পরা বলেই চোখে গণতন্ত্র দেখতে পায় না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি বলেন, জনগণের ভোটে প্রত্যাখ্যাত দল বিএনপি, তাই তারা নির্বাচনে আসতে ভয় পান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের পাশে থাকারও নির্দেশ দেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা উন্নয়ন দেখতে পায় না তারাই জাতির পিতার অবদান অস্বীকার করেছিল। অনেক বড় দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও তাদের নাগরিকেরা সমথর্ন দিয়েছিল।
ভারতীয় পণ্য বর্জন করার আগে বউদের শাড়ি পোড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করছেন, আমার প্রশ্ন তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? তাহলে বউদের কাছ থেকে সে শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছে না? সবাই একটু এই কথাটা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপির বহু মন্ত্রীর বউ ভারত যেতো। শাড়ি কিনে এনে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতো। আমার পরিচিত অনেকজন দেখেছে, আমি নিজেও দেখেছি। একবার প্লেনে যাওয়ার সময় দেখি পাঁচজন এক সঙ্গে, আমি জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার? পাঁচ মন্ত্রীর বউ একই সাথে? কলকাতার এয়ারপোর্টে আমার চেনা জানা লোকজন ছিলো, তো আমি বললাম যাওয়ার সময় কয় সুটকেস আর ফেরার সময় কয়টা সুটকেস আমায় একটু খবর দিও। আমি যাচ্ছিলাম ব্যাঙ্গালুরে আমার সন্তানদের দেখতে। পরে ঠিকই জানালো, আসার সময় একটা করে সুটকেস নিয়ে আসলেও ফেরার সময় ৬/৭টা করে সুটকেস নিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, বললাম আমার তো আর শাড়ি কেনা লাগবে না। এরা যে নিয়ে যাচ্ছে ওখান থেকেই পাওয়া যাবে কিছু। এই হলো তাদের অবস্থা। আমি বিএনপি নেতাদের বলবো যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন সবার বাড়িতে যেয়ে তার বউদের ভারতীয় শাড়ি অফিসের সামনে এনে পোড়াবেন। সেদিন বিশ্বাস করবো যে আপনারা সত্যিকারে ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের দেশে গরম মশলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা যা কিছু ভারত থেকে আসছে তাদের কারো রান্না ঘরে যেনো ভারতীয় মশলা না দেখা যায়। তাদের রান্না করে খেতে হবে এসব মশলা দিয়ে। কাজেই এটা তারা খেতে পারবে কি না এই জবাবটা তাদের দিতে হবে। আপনারা রঙ ঢঙ করতে উস্তাদ, এটা আমরা আগেও দেখেছি। এখন বাস্তবতায় আসুন, আপনারা ভারতীয় পণ্য আসলেই বর্জন করছেন কিনা এই কথাটাই আমরা জানতে চাই।
মেট্রোরেল হয়েছে এটাই তারা চড়ে না প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে যেনো না উঠে খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছিলো, এখন কি তারা পদ্মা সেতু দিয়ে পার হয়, নাকি সাঁতরিয়ে পার হয় নাকি নৌকায়? তাও তো নৌকা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র নাই? তাহলে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কি? আব্রাহাম লিংকনের সংজ্ঞাটা হচ্ছে গভমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। আমি যখন আমেরিকায় গিয়েছিলাম তখন এদের জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের দেশে তো এই চর্চাটা করেন কিন্তু আমাদের দেশে যখন মার্শাল ল আসে তখন আপনারা এটাকে সমর্থন দেন কেন? জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল জারি করল তখন গণতন্ত্র কোথায় ছিলো? সে সরকার তো হয়ে গিয়েছিলো অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য আর্মি। তাহলে কি গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলে গেলো? আমি নির্বাচিত হলে গণতন্ত্র দেখে না। কিন্তু যখন ক্ষমতা দখল হয় তখন গণতন্ত্র দেখে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজ আমরা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করেছি। ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯টা বছর এই জাতির দুর্ভাগ্যের বছর। এ দেশের মানুষ ছিল শোষিত বঞ্চিত। সেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বাধীনতার বিজয় এনে দেওয়া একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারীর জন্য সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো, এই প্রমোশনগুলা একে একে কে দিয়েছ? এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছে। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও ভুলে যায়।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।