নিজস্ব প্রতিবেদক :
মিথ্যা বলার পুরস্কার থাকলে তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেতেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসী ও হুকুমদাতাদের বিচারের দাবিতে প্রতীকী অনশন’ শীর্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নানা কথা বলেন। তাকে অনেকেই বলেন মিথ্যা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব। মিথ্যা বলায় যদি কোনো পুরস্কার থকত, তবে নিঃসন্দেহে তাকে কেউ টপকাতে পারত না। আর পেট্রোল বোমার নির্দেশদাতাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব। দলের মহাসচিব হিসেবে তিনি সেটার দায় এড়াতে পারেন না। সেটির অপরাধে তিনি অপরাধী। বিচার হলে সবারই হতে হবে।
বিএনপি নেতারাই দেশের অগ্নিসন্ত্রাসের ও পেট্রোলবোমার হামলার নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পেট্রোল বোমা কারা নিক্ষেপ করেছে, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট এবং প্রমাণিত। পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশ সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাওে লন্ডন থেকে এসেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, গয়েশ্বর রায় বাবু, মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির নেতারাই এই হামলার নির্দেশদাতা। তাদের নির্দেশে, তাদের অর্থায়নেই এই পেট্রোল বোমা হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। আজকে সেই পেট্রোল বোমা হামলার শিকার যারা, তারা বিচারের দাবি নিয়ে এসেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু তার দলের নেতৃত্বে যে অপরাধ হয়েছে- তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। সব অপরাধীরই বিচার হতে হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে অবরোধের সময় যেভাবে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে- তা শুধু দেশের ইতিহাসেই নয়, পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে সমসাময়িককালে কোথাও ঘটেনি। শুধু যারা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে, তাদের বিচার হলেই হবে না, যারা এর হুকুমদাতা-অর্থদাতা- তাদেরও বিচার হতে হবে। মামলা হয়েছে; মামলার কার্যক্রম চলছে। এই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। তাদের বিচার হলে এমন জঘন্য অপরাধ আর সংঘটিত হবে না। এটি চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অসহায় মানুষের ওপর, স্কুলগামী বালক-বালিকার ওপর, বিশ্ব ইজতেমা থেকে ফেরত মানুষের ওপর, বাসযাত্রীদের ওপর, অবরোধের কারণে থেমে থাকা ট্রাকে ঘুমন্ত চালকের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে তাদের শরীর অঙ্গার করে দিয়েছে, মানবতাকে ভুলুন্ঠিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, তাদেরকে অনুরোধ জানাবো, আসুন পেট্রোল বোমার শিকার হওয়াদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করুন। তাহলে এ ধরনের অপরাধ চিরতরে বন্ধ হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো এ দেশের নাগরিক ও মালিক। তারা রাজনীতি করে না, রাজনীতি বোঝে না এবং তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যায়নি, তারা প্রাত্যহিক কাজে জীবিকার তাগিদে বেরিয়েছিল। এই ধরনের ন্যাক্কারজনক মানবতাবিরোধী ঘটনা বিশ্বের কোথাও ঘটেনি।
পেট্রোল বোমা হামলার শিকার ও তাদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। তাই আমি মনে করি এই মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে হওয়া প্রয়োজন এবং অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতা ও অর্থদাতাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। এই অপরাধের উপযুক্ত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির সাথে আমি একাত্মতা প্রকাশ করছি।
এ সময় বিদেশি সংস্থা ও কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, তাদের উচিত এই অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া মানুষগুলোর সাথে সংহতি জানানো। তাহলে এই ধরনের অপরাধ চিরতরে বন্ধ হওয়ার পথ সুগম হবে।
পেট্রোলবোমায় আহত ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক, ঢাবি সমাজ কল্যাণ অনুষদের ডিন জিয়া রহমান, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী পীযুষ বন্দোপাধ্যায় ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।