Dhaka শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ১৭ রোহিঙ্গা নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা চলতি সপ্তাহে সমুদ্রে ডুবে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কয়েক ডজন নিখোঁজ রয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে এই ঘটনা ঘটেছে বলে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

প্রতি বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের শিবির থেকে বিপজ্জনক সমুদ্র যাত্রা করে।

রাখাইনের সিটওয়ে শহরের একটি বেসরকারি এনজিওর একজন উদ্ধারকর্মী জানান, মালয়েশিয়ার পথে রওনা হওয়া নৌকাটিতে ৫০ জনেরও বেশি লোক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা বুধবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত ১৭টি মৃতদেহ পেয়েছি এবং আটজনকে জীবিত করেছি। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। উদ্ধারকারীরা এখনও বাকিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। যদিও নৌকায় থাকা মানুষের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। রোববার রাতে সাগরে সমস্যায় পড়লে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করা নৌকাটি। রাতে উত্তাল সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে ভেঙে যায়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের ক্যাম্প গুলো থেকে বিপদজনক সমুদ্রযাত্রা করে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইনে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস রয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এই রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে সেখানে যাওয়া অভিবাসী হিসেবে মনে করে। কয়েকশ বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করে এলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নেই। এমনকি দেশটিতে রোহিঙ্গারা স্বাধীনভাবে চলাচলও করতে পারেন না এবং অন্যান্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী, ৩৯টি জাহাজে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ২০২২ সালে আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যা আগের বছরের চেয়ে ৭০০ জন বেশি। অন্তত ৩৪৮ জন রোহিঙ্গা গত বছর সমুদ্রে মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, গত বছর সমুদ্রে অন্তত ৩৪৮ জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা ঠেকাতে আঞ্চলিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, এই অঞ্চলের সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষকে দুর্দশাগ্রস্ত লোকজনকে উদ্ধার ও সমুদ্রযাত্রা ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী অনেক নৌকা ভেসে গেছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে ‘বর্ণবাদের’ সঙ্গে তুলনা করেছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমন অভিযানের সময় দেশটির সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মতো নৃশংসতা চালায়। সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ এই অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দায়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনা করেছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মানবাধিকারবিষয়ক একজন দূত গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি নিরাপদ নয়। সূত্র: এএফপি।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

যারা নির্বাচন বিলম্ব করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শক্তি নয় : সালাহউদ্দিন আহমদ

মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ১৭ রোহিঙ্গা নিহত

প্রকাশের সময় : ০৭:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা চলতি সপ্তাহে সমুদ্রে ডুবে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কয়েক ডজন নিখোঁজ রয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে এই ঘটনা ঘটেছে বলে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

প্রতি বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের শিবির থেকে বিপজ্জনক সমুদ্র যাত্রা করে।

রাখাইনের সিটওয়ে শহরের একটি বেসরকারি এনজিওর একজন উদ্ধারকর্মী জানান, মালয়েশিয়ার পথে রওনা হওয়া নৌকাটিতে ৫০ জনেরও বেশি লোক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা বুধবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত ১৭টি মৃতদেহ পেয়েছি এবং আটজনকে জীবিত করেছি। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। উদ্ধারকারীরা এখনও বাকিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। যদিও নৌকায় থাকা মানুষের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। রোববার রাতে সাগরে সমস্যায় পড়লে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করা নৌকাটি। রাতে উত্তাল সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে ভেঙে যায়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের ক্যাম্প গুলো থেকে বিপদজনক সমুদ্রযাত্রা করে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইনে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস রয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এই রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে সেখানে যাওয়া অভিবাসী হিসেবে মনে করে। কয়েকশ বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করে এলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নেই। এমনকি দেশটিতে রোহিঙ্গারা স্বাধীনভাবে চলাচলও করতে পারেন না এবং অন্যান্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী, ৩৯টি জাহাজে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ২০২২ সালে আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যা আগের বছরের চেয়ে ৭০০ জন বেশি। অন্তত ৩৪৮ জন রোহিঙ্গা গত বছর সমুদ্রে মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, গত বছর সমুদ্রে অন্তত ৩৪৮ জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা ঠেকাতে আঞ্চলিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, এই অঞ্চলের সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষকে দুর্দশাগ্রস্ত লোকজনকে উদ্ধার ও সমুদ্রযাত্রা ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী অনেক নৌকা ভেসে গেছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে ‘বর্ণবাদের’ সঙ্গে তুলনা করেছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমন অভিযানের সময় দেশটির সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মতো নৃশংসতা চালায়। সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ এই অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দায়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনা করেছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মানবাধিকারবিষয়ক একজন দূত গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি নিরাপদ নয়। সূত্র: এএফপি।