Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মার্কিন শুল্ক নিয়ে এত ভয়ের কিছু নেই : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকাভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি ততটা ভয়ের কিছু নেই। কারণ, বাণিজ্য অর্থনীতিতে চূড়ান্ত শত্রু বলে কিছু নেই।

শনিবার (১৭ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক এবং বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা’—শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম। শুল্ক আরোপের প্রভাব আমাদের প্রতিযোগীদের (দেশ) ওপরেও পড়ছে। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় আমরা খুব বেশি হারছি না।

তিনি বলেন, বাণিজ্য অর্থনীতিতে চূড়ান্ত শত্রু বলে কিছু নেই। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এরইমধ্যে সমঝোতা শুরু হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপে যতটা শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, বাস্তবে তার প্রভাব ততটা তীব্র হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিষাক্ত শুল্ক চিকিৎসা’ হিসেবে আখ্যা দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসার পর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও বেশি আছে রাজনীতি। কিন্তু পাল্টা শুল্ক আরোপের যে নীতি ট্রাম্প নিয়েছেন, তা সফল হবে কি না, সে বিষয়ে দৃঢ় সংশয় আছে তাঁর। অর্থাৎ এই নীতি দিয়ে তিনি (ট্রাম্প) যে লক্ষ্য থেকে অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন না তিনি। বাজার এই নীতি সেভাবে গ্রহণ করবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রথম কথা হলো, যে নীতিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা তেমন একটা সঠিক নয়। শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে সূচক (পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর কিছু নয়। তারা বলছে, পণ্যের ক্ষেত্রে যার সঙ্গে যত বাণিজ্য ঘাটতি, তার ওপর তত বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য তারা বিবেচনায় নেয়নি। আবার চলতি বছর যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, পরবর্তী বছর তা একই থাকবে না, পরিবর্তিত হবে।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, তাহলে কী বছর বছর তারা শুল্কহার বদলাবে; বছর বছর শুল্ক বদলালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা দরকার, তা থাকবে না।

তিনি বলেন, নীতি যৌক্তিক না হলে তাকে স্থায়িত্ব দেওয়া খুবই কষ্টকর। বাজার তা গ্রহণ করে না। তবে দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনেক দিনের জমে থাকা যেসব সংস্কারের কথা আমরা বলে থাকি, এই দুর্যোগের সময়টা সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ।

এ সময় ড. দেবপ্রিয় এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিজের তালিকা) গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে দুই বছর রয়েছে। এই সময়টা আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছি কি না সেটা দেখতে হবে। শুধু ট্রেড পলিসি দিয়ে এই ট্যারিফ মোকাবিলা করা যাবে না, পণ্য বৈচিত্র্যকরণে যেতে হবে। আমাদের শক্তির জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে। আমাদের মনোযোগ পণ্যের চেয়ে সেবা খাতে বেশি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইউএস ট্যারিফ বিষয়ে আমাদের সরকারের প্রাথমিক রি-অ্যাকশনটা ঠিকই ছিল। আমাদের হাত-পা কাঁপানোর দরকার নেই।’ তিনি সরকারের সংস্কার কাজে ব্যক্তি/বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যতালিকা (এজেন্ডা) দেওয়া হয়নি।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০০টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি তৃতীয় যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো হিসাবের মধ্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আমরা তাদের পণ্য কিনব, কিন্তু তা মোট বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে না—আমরা তা বরদাশত করব না। যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি না হলে আমরা আমদানি নীতি সংশোধন করে তৃতীয় দেশ থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দেব। ইতিমধ্যে গাড়ির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আছে।’ এ ছাড়া বাণিজ্য বাধা দূর করতে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে নেওয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আন্দোলনের সময় ঝুঁকি নিয়ে সেবা দেওয়া চিকিৎসকরা জুলাইয়ের নায়ক : প্রধান উপদেষ্টা

মার্কিন শুল্ক নিয়ে এত ভয়ের কিছু নেই : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশের সময় : ১০:২০:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকাভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি ততটা ভয়ের কিছু নেই। কারণ, বাণিজ্য অর্থনীতিতে চূড়ান্ত শত্রু বলে কিছু নেই।

শনিবার (১৭ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক এবং বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা’—শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম। শুল্ক আরোপের প্রভাব আমাদের প্রতিযোগীদের (দেশ) ওপরেও পড়ছে। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় আমরা খুব বেশি হারছি না।

তিনি বলেন, বাণিজ্য অর্থনীতিতে চূড়ান্ত শত্রু বলে কিছু নেই। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এরইমধ্যে সমঝোতা শুরু হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপে যতটা শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, বাস্তবে তার প্রভাব ততটা তীব্র হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিষাক্ত শুল্ক চিকিৎসা’ হিসেবে আখ্যা দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসার পর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও বেশি আছে রাজনীতি। কিন্তু পাল্টা শুল্ক আরোপের যে নীতি ট্রাম্প নিয়েছেন, তা সফল হবে কি না, সে বিষয়ে দৃঢ় সংশয় আছে তাঁর। অর্থাৎ এই নীতি দিয়ে তিনি (ট্রাম্প) যে লক্ষ্য থেকে অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন না তিনি। বাজার এই নীতি সেভাবে গ্রহণ করবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রথম কথা হলো, যে নীতিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা তেমন একটা সঠিক নয়। শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে সূচক (পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর কিছু নয়। তারা বলছে, পণ্যের ক্ষেত্রে যার সঙ্গে যত বাণিজ্য ঘাটতি, তার ওপর তত বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য তারা বিবেচনায় নেয়নি। আবার চলতি বছর যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, পরবর্তী বছর তা একই থাকবে না, পরিবর্তিত হবে।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, তাহলে কী বছর বছর তারা শুল্কহার বদলাবে; বছর বছর শুল্ক বদলালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা দরকার, তা থাকবে না।

তিনি বলেন, নীতি যৌক্তিক না হলে তাকে স্থায়িত্ব দেওয়া খুবই কষ্টকর। বাজার তা গ্রহণ করে না। তবে দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনেক দিনের জমে থাকা যেসব সংস্কারের কথা আমরা বলে থাকি, এই দুর্যোগের সময়টা সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ।

এ সময় ড. দেবপ্রিয় এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিজের তালিকা) গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে দুই বছর রয়েছে। এই সময়টা আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছি কি না সেটা দেখতে হবে। শুধু ট্রেড পলিসি দিয়ে এই ট্যারিফ মোকাবিলা করা যাবে না, পণ্য বৈচিত্র্যকরণে যেতে হবে। আমাদের শক্তির জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে। আমাদের মনোযোগ পণ্যের চেয়ে সেবা খাতে বেশি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইউএস ট্যারিফ বিষয়ে আমাদের সরকারের প্রাথমিক রি-অ্যাকশনটা ঠিকই ছিল। আমাদের হাত-পা কাঁপানোর দরকার নেই।’ তিনি সরকারের সংস্কার কাজে ব্যক্তি/বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যতালিকা (এজেন্ডা) দেওয়া হয়নি।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০০টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি তৃতীয় যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো হিসাবের মধ্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আমরা তাদের পণ্য কিনব, কিন্তু তা মোট বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে না—আমরা তা বরদাশত করব না। যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি না হলে আমরা আমদানি নীতি সংশোধন করে তৃতীয় দেশ থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দেব। ইতিমধ্যে গাড়ির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আছে।’ এ ছাড়া বাণিজ্য বাধা দূর করতে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে নেওয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান।