গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মামলা বাণিজ্যর সঙ্গে যেই জড়িত থাকবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেঃ কর্নেল (অবঃ) জাহাঙ্গীর আলম।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সকল থানার মামলাগুলো অনলাইন ভিত্তিক করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের ওপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মামলা বাণিজ্য সঙ্গে পুলিশ অথবা যে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে অনেককে শাস্তির আওতায় আনাও হয়েছে। এছাড়া মামলার সংখ্যা এবং আসামির সংখ্যা বেশী হাওয়ায় তা তদন্ত করতে সময় লাগছে।
তিনি বলেন, দেশের অনেক থানায় নিজস্ব ভবন না থাকার কারণে ভাড়া করা ভবনে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার পুলিশের থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা কেমন এই বিষয়ে পরিদর্শন করতে এসেছি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের কেউ যদি মামলা বাণিজ্য দুর্নীতিতে জড়িত হন, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পদমর্যাদার ৮৪ জনকে আমরা অ্যাটাচ করে রেখেছি। ইতিমধ্যে আমি ৩০-৪০ জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। যদি আরও ৩০-৪০ জনকে বাড়ি পাঠাতে হয়, একটুও কুণ্ঠিত হব না, যদি কোনো রকম দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। এটা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটা যদি আমরা কোনো অবস্থায় কন্ট্রোলের ভেতরে আনতে পারতাম, তাহলে কিন্তু দেশ অনেক অনেক আগাইয়া যাইত। এ জন্য আমি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আপনারা লোকজনকে সচেতন করেন। আপনারা যদি সত্য কথা লেখেন, তাহলে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ বাহিনীর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগে বলা হতো জিডি এবং মামলা পুলিশ নিতে চায় না। এ জন্য আমরা ইতিমধ্যে মামলার গ্রহণ প্রক্রিয়া অনলাইনে করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখন জিডি ঘরে বসেই করা যায়। ফলে মামলা করার জন্য এখন আর মানুষকে থানায় যেতে হবে না, তাই হয়রানি পোহাতে হবে না।
তিনি আরো বলেন, আপনারা বলেন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের কথা। এখন থেকে জিজ্ঞাসা করার জন্য আমরা কাচের মতো ঘর করে দিব। অন্যরা দেখতে পারবে, তার সাথে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে কি না।
৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা যায় কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন, আগে ১০-১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা অসংখ্য মানুষের নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করত। এবার হইছে কি? আপনারাই ১০-১৫ জনের নাম দিছেন, ২০০-২৫০ বেনামি লোককে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এর জন্য মামলার তদন্তে দেরি হচ্ছে। এসব মামলায় যেমন দোষী লোকজন আছে, মোটামুটি নির্দোষ অনেক মানুষ রয়েছে।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্য আমরা দেখব, যারা দোষী তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসব আর যারা নির্দোষ, সে যাতে কোনোমতে সাজা না পায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় পরিদর্শনকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ডক্টর নাজমুল করিম খান,অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নুর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী মোহাম্মদ রাশেদসহ গাজীপুর মেট্রোপলিটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।