আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ১৩টি দেশের মোট ৩৭ জন ব্যক্তির ওপর ভিসা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ২০ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় (ট্রেজারি) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। সেই দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র দপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে এসব ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যেসব দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লাইবেরিয়া, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সুদান, সিরিয়া, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে মাজিদ দাস্তজানি এবং মোহাম্মদ মাহদি খানপুর আরদেস্তানি নামের দুই ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা রয়েছেন। এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— ২০২০ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত জেনারেল কাসেম সোলায়মানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মার্কিন ঘাঁটিতে নজরদারি ও হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছিলেন তারা।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ধর্মীয়, বাণিজ্যিক এলাকা ও মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে নজরদারি ও সম্ভব্য হামলার জন্য লোকবল সংগ্রহ এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন মাজিদ দাস্তজানি এবং মাহদি খানপুর আরদেস্তানি।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দাপ্তরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় জাতিসংঘে ইরানি মিশনের কর্মকর্তাদের কাছে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে কেউই মন্তব্য করতে চাননি।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গিউ এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে রয়টার্সকে বলেন, ‘এ ধরনের ঢালাও পদক্ষেপ চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘণ এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। আমরা দৃঢ়ভাবে এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন তালেবান সদস্যরাও। নারী ও মেয়েদের দমনপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া, আফগানিস্তানের তথাকথিত নৈতিকতা প্রচার এবং অনৈতিকতা প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন চীনের মধ্যম শ্রেণির দুই কর্মকর্তাও। দেশটির জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়নে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, উইঘুর ও চীনের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দিয়ে জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগে তিনটি চীনা কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শিকারদের তালিকায় আরও রয়েছেন কঙ্গোর নেতা, হাইতির চারটি অপরাধী দলের প্রধান এবং উগান্ডা প্রিজন সার্ভিসের কমিশনার জেনারেল।
সমকামিতায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সম্প্রতি কঠোর আইন পাস করেছে উগান্ডা সরকার। এর বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া, লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের লোকদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং মার্কিন অর্থব্যবস্থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের থেকে নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্র কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ, তা এই নিষেধাজ্ঞায় প্রতিফলিত হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারবিষয়ক সর্বজনীন ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণায় সবার জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতার একটি মানদণ্ড তুলে ধরা হয়।