Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার হবে : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশপাশি অপরাধের সঙ্গে জড়িত হাসিনার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদেরও বিচার হবে বলেও জানান তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি স্থানীয় সময় বুধবার (৫ মার্চ) প্রচারিত হয়।

সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

তিনি বলেন, বিচার হবে। শুধু তার (হাসিনা) নয়, তার সাথে জড়িত সকল লোক — তার পরিবারের সদস্য, তার ক্লায়েন্ট বা সহযোগীদেরও।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রমাণ সরকারের কাছে আছে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত নেই। তাই প্রশ্ন হলো আমরা কী তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারব কি না- এটি নির্ভর করছে ভারতের উপর এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্দেশনার ওপর।

এতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অধ্যাপক ইউনূস বলেন, (হাসিনাকে ফেরত চেয়ে) আমরা ‘আনুষ্ঠানিক চিঠি’ পাঠিয়েছি। কিন্তু নয়াদিল্লি থেকে এখনও ‘কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া’ পাওয়া যায়নি।

তবে শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে বলে জোর দিয়েছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাসিনা অবশ্যই আদালতের মুখোমুখি হবেন, আর সেটা সশরীরে বাংলাদেশে উপস্থিত থেকে হোক বা অনুপস্থিতিতে, ভারতে থেকেই হোক। ’

প্রফেসর ইউনূস সম্প্রতি “হাউস অব মিররস” বা আয়নাঘর নামে পরিচিত একটি কুখ্যাত গোপন কারাগার পরিদর্শন করেছেন। “দরিদ্রের ব্যাংকার” হিসেবে পরিচিত অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেছেন, সেখানে তিনি যা দেখেছেন তাতে তিনি হতবাক।

ড. ইউনূস বলেন, এটিই সবচেয়ে কুৎসিত জিনিস যা আপনি দেখতে পারেন, আপনি অনুভব করতে পারেন বা আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

হাসিনার বিরুদ্ধে তার নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশকে ব্যবহার করে শত শত নেতাকর্মীকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার তদারকি করার অভিযোগ রয়েছে। হাসিনা, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং প্রায় ৮০০ গোপন কারাগারের নেটওয়ার্ক তদারকি করার দায়ে অভিযুক্তদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অভিযুক্ত অপরাধের সাথে জড়িত লোকের সংখ্যা এবং পরিসর (বেশি হওয়ায়) কাজ করতে “সময় লাগছে”। তিনি বলেন, সবাই এই অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। পুরো সরকার এর সাথে জড়িত ছিল। সুতরাং এটা বের করা কঠিন যে— কারা সত্যিই এবং উৎসাহের সাথে এই অপরাধগুলো করছিল, আর কারা উচ্চপদস্থদের আদেশের অধীনে এসব কাজ করেছিল এবং কারা পুরোপুরি এসব অপরাধের সমর্থনকারী না হলেও এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গিয়েছিল।

হাসিনা, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশকে গত বছরের জুলাই এবং আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনগুলোতে প্রায় সরকারের সহিংস দমন-পীড়নে ১৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন।

প্রফেসর ইউনূস ভুক্তভোগীদের পরিবার কত দ্রুত ন্যায়বিচার দেখতে পাবে এবং তার চোখের সামনে সেই বিচার হবে কিনা তা নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করে চলেছেন। এমন অবস্থায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে নতুন নির্বাচন হতে পারে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কিছু অপরাধী শাস্তি পাবে, কিছু তখনও প্রক্রিয়াধীন থাকবে, কিছু তখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশ ছেড়ে পলায়নের পর তার পরিবারের সদস্যসহ অনেকের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ বের হয়ে আসছে এবং দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত চলছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তাদের একজন ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নী।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলাটি খুবই গুরুতর। দেশে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে।

মূলত বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে নাম আসার পর গত জানুয়ারি মাসে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশটির দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধির পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য তারা এখন একটি “নিরাপদ অঞ্চলের” সম্ভাবনা নিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করছেন।

তিনি বাংলাদেশের কক্সবাজারে বড় সমস্যার কথাও স্বীকার করেছেন। এখানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির রয়েছে এবং সেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে এবং সহিংসতা, মাদক এবং আধাসামরিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, এই উত্তেজনা “হারিয়ে যাবে না”।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার হবে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ১১:৪৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশপাশি অপরাধের সঙ্গে জড়িত হাসিনার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদেরও বিচার হবে বলেও জানান তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি স্থানীয় সময় বুধবার (৫ মার্চ) প্রচারিত হয়।

সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

তিনি বলেন, বিচার হবে। শুধু তার (হাসিনা) নয়, তার সাথে জড়িত সকল লোক — তার পরিবারের সদস্য, তার ক্লায়েন্ট বা সহযোগীদেরও।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রমাণ সরকারের কাছে আছে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত নেই। তাই প্রশ্ন হলো আমরা কী তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারব কি না- এটি নির্ভর করছে ভারতের উপর এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্দেশনার ওপর।

এতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অধ্যাপক ইউনূস বলেন, (হাসিনাকে ফেরত চেয়ে) আমরা ‘আনুষ্ঠানিক চিঠি’ পাঠিয়েছি। কিন্তু নয়াদিল্লি থেকে এখনও ‘কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া’ পাওয়া যায়নি।

তবে শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে বলে জোর দিয়েছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাসিনা অবশ্যই আদালতের মুখোমুখি হবেন, আর সেটা সশরীরে বাংলাদেশে উপস্থিত থেকে হোক বা অনুপস্থিতিতে, ভারতে থেকেই হোক। ’

প্রফেসর ইউনূস সম্প্রতি “হাউস অব মিররস” বা আয়নাঘর নামে পরিচিত একটি কুখ্যাত গোপন কারাগার পরিদর্শন করেছেন। “দরিদ্রের ব্যাংকার” হিসেবে পরিচিত অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেছেন, সেখানে তিনি যা দেখেছেন তাতে তিনি হতবাক।

ড. ইউনূস বলেন, এটিই সবচেয়ে কুৎসিত জিনিস যা আপনি দেখতে পারেন, আপনি অনুভব করতে পারেন বা আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

হাসিনার বিরুদ্ধে তার নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশকে ব্যবহার করে শত শত নেতাকর্মীকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার তদারকি করার অভিযোগ রয়েছে। হাসিনা, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং প্রায় ৮০০ গোপন কারাগারের নেটওয়ার্ক তদারকি করার দায়ে অভিযুক্তদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অভিযুক্ত অপরাধের সাথে জড়িত লোকের সংখ্যা এবং পরিসর (বেশি হওয়ায়) কাজ করতে “সময় লাগছে”। তিনি বলেন, সবাই এই অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। পুরো সরকার এর সাথে জড়িত ছিল। সুতরাং এটা বের করা কঠিন যে— কারা সত্যিই এবং উৎসাহের সাথে এই অপরাধগুলো করছিল, আর কারা উচ্চপদস্থদের আদেশের অধীনে এসব কাজ করেছিল এবং কারা পুরোপুরি এসব অপরাধের সমর্থনকারী না হলেও এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গিয়েছিল।

হাসিনা, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশকে গত বছরের জুলাই এবং আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনগুলোতে প্রায় সরকারের সহিংস দমন-পীড়নে ১৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন।

প্রফেসর ইউনূস ভুক্তভোগীদের পরিবার কত দ্রুত ন্যায়বিচার দেখতে পাবে এবং তার চোখের সামনে সেই বিচার হবে কিনা তা নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করে চলেছেন। এমন অবস্থায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে নতুন নির্বাচন হতে পারে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কিছু অপরাধী শাস্তি পাবে, কিছু তখনও প্রক্রিয়াধীন থাকবে, কিছু তখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশ ছেড়ে পলায়নের পর তার পরিবারের সদস্যসহ অনেকের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ বের হয়ে আসছে এবং দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত চলছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তাদের একজন ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নী।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলাটি খুবই গুরুতর। দেশে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে।

মূলত বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে নাম আসার পর গত জানুয়ারি মাসে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশটির দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধির পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য তারা এখন একটি “নিরাপদ অঞ্চলের” সম্ভাবনা নিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করছেন।

তিনি বাংলাদেশের কক্সবাজারে বড় সমস্যার কথাও স্বীকার করেছেন। এখানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির রয়েছে এবং সেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে এবং সহিংসতা, মাদক এবং আধাসামরিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, এই উত্তেজনা “হারিয়ে যাবে না”।