Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদক কারবারে বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মাদক ব্যবসার সঙ্গে টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

‘সিআইডির জালে মাদকের গডফাদাররা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে সিআইডি ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মাদক মামলার মূল হোতা তথা গডফাদারদের মাদক ব্যবসা থেকে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ (ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা), ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পায়। এসব মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৭৮.৪৪ কোটি টাকা।

বদির দুই ভাইয়ের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান বলেন, আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুর বিভিন্নভাবে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনে। এরপর তাদের নিয়োজিত সহযোগীরা বিভিন্নস্থানে পৌঁছে দেয়। ইতোমধ্যে বদির ভাইদের ৬.৯ একর জমি শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এক কোটি টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ জমির তথ্য পাওয়া গেছে। জমির তথ্য এখনো ডিজিটালাইজড হয়নি। ফলে মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত জানাতে পারবো।

তিনি বলেন, সিআইডি ইতোমধ্যে উল্লিখিত মামলাসমূহের মধ্যে ৩টি মামলায় গডফাদারদের ৯.১৪ একর জমি ও ২টি বাড়ি যার মূল্য ৮.১১ কোটি টাকা ক্রোক এবং মাদক সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং বিভিন্ন মামলায় ব্যাংকে রাখা ১ কোটি ১ লাখ ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ফ্রিজ করেছে। আরও ৩৫.১৭৩ একর জমি, ১২টি বাড়ি ও ১টি গাড়ি যার মূল্য ৩৬.৮২ কোটি টাকা ক্রোকের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, আপনারা জানেন দেশে প্রতি বছর অন্তত ৮০ হাজার মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা হয়ে থাকে। তাবে যারা গ্রেফতার হন তাদের বেশিরভাগই মাদক বহনকারী ও সেবনাকারী। অনেক সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই দুই শ্রেণির মধ্যেই তাদের তদন্ত শেষ করেন। ফলে আড়ালে থেকে যান মাদকের মূল গডফাদাররা। কিন্তু সিআইডি ২০২১ সাল থেকে মাদকের গডফাদারদের গ্রেফতার ও তাদরে সম্পদ ক্রোক করে সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। তারা মাদক কারবার ছেড়ে বৈধ ব্যবসা করবেন। পাশাপাশি নতুন করে কেউ এই পেশায় জড়াতে উৎসাহ পাবে না। কারণ আপনারা জানেন মাদক একটি পুঁজি ছাড়া ব্যবসা। ফলে অনেকেই সহজ আয়ের সুযোগ নিতে গিয়ে অবৈধ কারবারে জড়িয়ে যান।

মাদকের গডফাদার হিসেবে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির নাম বার বার উঠে এসেছে। ৩৫ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি বদি বা তার ভাইয়ের মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, মাদক মামলার মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। বদির বিরুদ্ধেও যদি আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ পাই তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। যার বিরুদ্ধেই তথ্য-প্রমাণ পাব ধরা হবে, ছাড় দেওয়া হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজারে পর্যায়ক্রমে মাদকের সব গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক ব্যবসায় যারা অবৈধভাবে সম্পদ ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের অবৈধ সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। দেশ প্রেমিক নাগরিকদের প্রতি মাদক গড ফাদারদের তথ্য সিআইডিকে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মাদক কারবারে বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি

প্রকাশের সময় : ০২:৫২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মাদক ব্যবসার সঙ্গে টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

‘সিআইডির জালে মাদকের গডফাদাররা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে সিআইডি ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মাদক মামলার মূল হোতা তথা গডফাদারদের মাদক ব্যবসা থেকে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ (ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা), ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পায়। এসব মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৭৮.৪৪ কোটি টাকা।

বদির দুই ভাইয়ের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান বলেন, আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুর বিভিন্নভাবে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনে। এরপর তাদের নিয়োজিত সহযোগীরা বিভিন্নস্থানে পৌঁছে দেয়। ইতোমধ্যে বদির ভাইদের ৬.৯ একর জমি শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এক কোটি টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ জমির তথ্য পাওয়া গেছে। জমির তথ্য এখনো ডিজিটালাইজড হয়নি। ফলে মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত জানাতে পারবো।

তিনি বলেন, সিআইডি ইতোমধ্যে উল্লিখিত মামলাসমূহের মধ্যে ৩টি মামলায় গডফাদারদের ৯.১৪ একর জমি ও ২টি বাড়ি যার মূল্য ৮.১১ কোটি টাকা ক্রোক এবং মাদক সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং বিভিন্ন মামলায় ব্যাংকে রাখা ১ কোটি ১ লাখ ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ফ্রিজ করেছে। আরও ৩৫.১৭৩ একর জমি, ১২টি বাড়ি ও ১টি গাড়ি যার মূল্য ৩৬.৮২ কোটি টাকা ক্রোকের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, আপনারা জানেন দেশে প্রতি বছর অন্তত ৮০ হাজার মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা হয়ে থাকে। তাবে যারা গ্রেফতার হন তাদের বেশিরভাগই মাদক বহনকারী ও সেবনাকারী। অনেক সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই দুই শ্রেণির মধ্যেই তাদের তদন্ত শেষ করেন। ফলে আড়ালে থেকে যান মাদকের মূল গডফাদাররা। কিন্তু সিআইডি ২০২১ সাল থেকে মাদকের গডফাদারদের গ্রেফতার ও তাদরে সম্পদ ক্রোক করে সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। তারা মাদক কারবার ছেড়ে বৈধ ব্যবসা করবেন। পাশাপাশি নতুন করে কেউ এই পেশায় জড়াতে উৎসাহ পাবে না। কারণ আপনারা জানেন মাদক একটি পুঁজি ছাড়া ব্যবসা। ফলে অনেকেই সহজ আয়ের সুযোগ নিতে গিয়ে অবৈধ কারবারে জড়িয়ে যান।

মাদকের গডফাদার হিসেবে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির নাম বার বার উঠে এসেছে। ৩৫ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি বদি বা তার ভাইয়ের মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, মাদক মামলার মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। বদির বিরুদ্ধেও যদি আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ পাই তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। যার বিরুদ্ধেই তথ্য-প্রমাণ পাব ধরা হবে, ছাড় দেওয়া হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজারে পর্যায়ক্রমে মাদকের সব গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক ব্যবসায় যারা অবৈধভাবে সম্পদ ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের অবৈধ সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। দেশ প্রেমিক নাগরিকদের প্রতি মাদক গড ফাদারদের তথ্য সিআইডিকে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।