নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত কয়েক মাস ধরে মাছ বাজারে সেই বাড়তি দাম এখনও চলমান রয়েছে। ফলে মাছ কেনা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। মাছের বাড়তি দামের কারণে এখন পাঙাশ-তেলাপিয়া কিনতেও ক্রেতাদের হিসাব করতে হচ্ছে। সবজি ও ব্রয়লার মুরগীর বাজারে স্বস্তি এসেছে। কেজিতে দাম কমেছে ১০ থেকে ৪০ টাকা হারে। বাজারে হুট করে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ৪০ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
শুক্রবার (০৯) সকালে রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে বাজার দরের এ চিত্র দেখা গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে করলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ও জালি প্রতি পিস ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, মূলা ৪০, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হুমায়ন কবির বলেন, সবজির দাম বাড়তিই। তবে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে দাম। কয়েক মাস থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৬০/৭০ এর ঘরে ছিল সব সবজির দাম। তবে আজকের বাজারে ৪০/৫০ টাকায় কিছু সবজি পাওয়া যাচ্ছে।আবার অনেক সবজি আছে যেগুলো এখনও ৭০/৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে সবজি বিক্রেতা রুহুল আমিন বাচ্চু বলেন, গত কিছুদিন ধরে সবজির যে দাম ছিল সেই তুলনায় আজ দাম কিছুটা কম। আসলে কিছুদিন আগ পর্যন্ত নতুন করে সবজি উঠছিল না, যা ছিল তা আগের বা পুরাতন গাছের সবজি। নতুন করে কিছু কিছু সবজি উঠতে শুরু করার কারণে দাম কমছে। আমরা যখন যে দামে সবজি কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। কিছুদিন আগে পাইকারি বাজারেই আমাদের বেশি দামে সবজি কেনা লেগেছে তাই বেশি দামেই বিক্রি করেছি, এখন তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারছি তাই বিক্রিও করছি কম দামে।
খিলগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুবকর সবজির দাম নিয়ে বলেন, সবজির বাজার এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সবজির বাজার নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। বৃষ্টি হলে সবজির ফলন ভাল হয়। তখন পাইকারি বাজারে দামও কম থাকে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে বাজারে সবজি বেশি পরিমাণে আসছে তাই দাম কিছুটা কম।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, কাতল ৪০০ টাকা, রুই ৩৫০-৩৮০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, কাচকি মাছ ৩৫০ টাকা, চিংড়ি আকার অনুযায়ী ৬০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ছোট বোয়াল ৬০০, বাইম মাছ ৭০০ টাকা ও রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছের বাজার এখন উচ্চবিত্ত মানুষের বাজার। মাছের দাম দিন দিন যে হারে বাড়ছে তাতে আর কিছু দিন পর নিম্ন আয়ের মানুষ মাছের বাজারে যেতে সাহস করবে না। মাছ কেনা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এক সময় পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিল গরিবের মাছ, কিন্তু এখন এই দুই মাছের কেজি পৌঁছেছে ২০০ টাকায়। এই মাছ কিনতেও এখন হিসাব করতে হচ্ছে।
বাড্ডা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মো. ইমরানকে মাছের বাজার দরে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গত ২-৩ মাস ধরে মাছের দাম নাগালের ক্রয় ক্ষমতার চলে যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাছসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য তালিকা থেকে মাছের নাম বাদ দিতে হবে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা মাছের বাজারে ক্রেতাদের অস্বস্তির বিষয়ে বলছেন, মাছের খাবারের দাম যখন থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে তখন থেকেই মাছের দাম বাড়তি। এছাড়া নানা কারণে মাছের পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে এর প্রভাব মাছেও পড়েছে। এছাড়া গত কয়েক দিনের গরমের কারণে মাছ চাষিরা চাষ করা মাছ বাজারে কম এনেছেন। ফলে বাজারে মাছের সংকট সৃষ্টি হওয়ার দাম বেড়েছে।
মাছের দাম নিয়ে শাহজাদপুর মাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতা সিদ্দিক হোসেন বলেন, ক্রেতারা মনে করে আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করি। কিন্তু এটা সত্য না। মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কেজি প্রতি। এই দামের প্রভাব সরাসরি খুচরা বাজারেও পড়ে। আমরা তো তাদের দর কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে এনে বিক্রি করছি। তাই তো দাম বেশি।
সবজির পাশাপাশি কমেছে ব্রয়লার মুরগির দামও। কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২১০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। একইসঙ্গে কমেছে সোনালি মুরগির দামও। আজ সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।
মুরগির দাম কমলেও কমেনি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বাজারে প্রতি ডজন ডিম কিনতে গুণতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
ডিমের মতো একই চিত্র দেখা গেছে মাছের বাজারেও। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মাছের সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে।
প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। কোথাও কোথাও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারভেদে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া মুদি দোকান ঘুরে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আজকের দাম-দর। চিনি, সয়াবিন তেল, ডালের দাম রয়েছে আগের মতোই। মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১৩০ টাকা, আটা ১৩০ টাকা (২ কেজির প্যাকেটে), খোলা ময়দা ৬৩ টাকা, সয়াবিন তেল (প্যাকেট) ১৯৯ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা এবং খোলা সরিষার তেল ২৫০ টাকা লিটার।