Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে ডুবোচর জেগে উঠায় ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রী ও নৌযান শ্রমিকরা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার সাথে দ্বীপজেলা ভোলার নৌ পথে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ভোলা-লক্ষ্ণীপুর নৌরুট। মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর; তার সঙ্গে নাব্য সংকট তো আছেই। এ কারণে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় ঘাটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে লক্ষ্মীপুর ও ভোলা নৌপথে ফেরি ও অন্যান্য নৌযান চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নাব্য সংকটে দুর্ভোগ কাটেনি এ পথে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের। একদিকে মজু চৌধুরীর হাট থেকে রহমতখালী চ্যানেল হয়ে মতিরহাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথ দীর্ঘদিন থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন আবার মূল মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে।

এতে নতুন করে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট থেকে ভোলার ইলিশা ঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত ২০-২৫ কিলোমিটার নৌপথ ঘুরে যেতে ফেরি ও নৌযানগুলোর সময় লাগছে ৪-৫ ঘণ্টা। অনেক সময় শেষ ভাটায় ফেরি এবং লঞ্চগুলো ডুবোচরে আটকে ৮-১০ ঘণ্টাও অপেক্ষায় থাকতে হয় জোয়ারের জন্য। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। অতিরিক্ত সময় লাগায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহনে থাকা কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য।

অনেক সময় মৃত্যু ঘটছে অ্যাম্বুলেন্সে বহনকারী রোগীর। অপরদিকে মজু চৌধুরী হাট ও ইলিশা ঘাটের দুই পাড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে অনেক যানবাহনকে ২-৩ দিনও ঘাট এলাকায় অপেক্ষায় থাকতে হয়। তখন থাকা-খাওয়া ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের।
দীর্ঘদিন থেকে এ রুট দিয়ে চলাচলকারী বাসযাত্রী আলম মিয়া বলেন, মেঘনা নদীর বিভিন্ন জায়গায় ডুবোচর জেগে ওঠায় ভাটার সময় প্রায়ই চরে ফেরি আটকে যায়। এতে আমাদের অনেক সময় ৬-৭ ঘণ্টা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তখন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

ফেরি কুসুমকলির দ্বিতীয় মাস্টার মাসুদ আকন্দ বলেন, ইলিশা ঘাট থেকে মজু চৌধুরীর ঘাট আসতে আগে ফেরির রুট অনেক ওপরে ছিল। কিন্তু এখন ডুবোচর জাগায় অনেক দূর ঘুরে আসতে হয়। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত ঘুরে আসতে হয়।

নাব্য সংকট কাটিয়ে চ্যানেল সচল রাখতে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ-র পাঁচটি ড্রেজার। কিন্তু ঠিকমতো ড্রেজিং করা হচ্ছে না বলে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুরে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ-র পন্টুন সারেং কামরুল রশিদ বলেন, মজু চৌধুরীর হাটে বিআইডব্লিউটিএ-র পক্ষ থেকে দুটি ফেরি ঘাট ও একটি লঞ্চ ঘাটের কার্যক্রম সচল আছে। আগে যেমন জোয়ার-ভাটার ওপর ফেরিসহ এসব নৌযান চলাচল করতে হতো এখন কিন্তু তা নয়।

বিআইডব্লিওটিসির ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থাপক কাউছার আহাম্মেদ জানান, নাব্য সংকটের কারণে সময় বেশি লাগায় ফেরিগুলোর ট্রিপ সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব কম পাচ্ছে। তবে বিআইডব্লিওটিএ যদি মূল নদীসহ রহমতখালী চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করলে চলমান এ দুর্ভোগ কমবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌপথে কিষাণী, কাবেরী, কনকচাঁপা, কুসুমকলি ও কলমীলতা নামে পাঁচটি রো রো ফেরি ও ১১টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এসব নৌযানের মাধ্যমে এ পথে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী চলাচল করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে ডুবোচর জেগে উঠায় ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৫:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রী ও নৌযান শ্রমিকরা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার সাথে দ্বীপজেলা ভোলার নৌ পথে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ভোলা-লক্ষ্ণীপুর নৌরুট। মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর; তার সঙ্গে নাব্য সংকট তো আছেই। এ কারণে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় ঘাটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে লক্ষ্মীপুর ও ভোলা নৌপথে ফেরি ও অন্যান্য নৌযান চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নাব্য সংকটে দুর্ভোগ কাটেনি এ পথে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের। একদিকে মজু চৌধুরীর হাট থেকে রহমতখালী চ্যানেল হয়ে মতিরহাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথ দীর্ঘদিন থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন আবার মূল মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে।

এতে নতুন করে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট থেকে ভোলার ইলিশা ঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত ২০-২৫ কিলোমিটার নৌপথ ঘুরে যেতে ফেরি ও নৌযানগুলোর সময় লাগছে ৪-৫ ঘণ্টা। অনেক সময় শেষ ভাটায় ফেরি এবং লঞ্চগুলো ডুবোচরে আটকে ৮-১০ ঘণ্টাও অপেক্ষায় থাকতে হয় জোয়ারের জন্য। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। অতিরিক্ত সময় লাগায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহনে থাকা কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য।

অনেক সময় মৃত্যু ঘটছে অ্যাম্বুলেন্সে বহনকারী রোগীর। অপরদিকে মজু চৌধুরী হাট ও ইলিশা ঘাটের দুই পাড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে অনেক যানবাহনকে ২-৩ দিনও ঘাট এলাকায় অপেক্ষায় থাকতে হয়। তখন থাকা-খাওয়া ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের।
দীর্ঘদিন থেকে এ রুট দিয়ে চলাচলকারী বাসযাত্রী আলম মিয়া বলেন, মেঘনা নদীর বিভিন্ন জায়গায় ডুবোচর জেগে ওঠায় ভাটার সময় প্রায়ই চরে ফেরি আটকে যায়। এতে আমাদের অনেক সময় ৬-৭ ঘণ্টা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তখন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

ফেরি কুসুমকলির দ্বিতীয় মাস্টার মাসুদ আকন্দ বলেন, ইলিশা ঘাট থেকে মজু চৌধুরীর ঘাট আসতে আগে ফেরির রুট অনেক ওপরে ছিল। কিন্তু এখন ডুবোচর জাগায় অনেক দূর ঘুরে আসতে হয়। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত ঘুরে আসতে হয়।

নাব্য সংকট কাটিয়ে চ্যানেল সচল রাখতে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ-র পাঁচটি ড্রেজার। কিন্তু ঠিকমতো ড্রেজিং করা হচ্ছে না বলে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুরে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ-র পন্টুন সারেং কামরুল রশিদ বলেন, মজু চৌধুরীর হাটে বিআইডব্লিউটিএ-র পক্ষ থেকে দুটি ফেরি ঘাট ও একটি লঞ্চ ঘাটের কার্যক্রম সচল আছে। আগে যেমন জোয়ার-ভাটার ওপর ফেরিসহ এসব নৌযান চলাচল করতে হতো এখন কিন্তু তা নয়।

বিআইডব্লিওটিসির ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থাপক কাউছার আহাম্মেদ জানান, নাব্য সংকটের কারণে সময় বেশি লাগায় ফেরিগুলোর ট্রিপ সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব কম পাচ্ছে। তবে বিআইডব্লিওটিএ যদি মূল নদীসহ রহমতখালী চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করলে চলমান এ দুর্ভোগ কমবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌপথে কিষাণী, কাবেরী, কনকচাঁপা, কুসুমকলি ও কলমীলতা নামে পাঁচটি রো রো ফেরি ও ১১টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এসব নৌযানের মাধ্যমে এ পথে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী চলাচল করেন।