নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এরইমধ্যে প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের বাংলাদেশ সফর বিষয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এই জলবিদ্যুৎ চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
তিনি বলেন, ভুটানের রাজার সফরে নতুন করে তিনটা সমঝোতা স্মারক সই হবে। এরমধ্যে রয়েছে ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক। এছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি আছে আমাদের সঙ্গে সেটার নবায়ন হবে।
ভুটানের রাজার সফরসূচি নিয়ে ড. হাছান জানান, ২৫-২৮ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন ভুটানের রাজা। সফরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে অংশগ্রহণ করবেন। সোমবার সকালে বিমানবন্দরে ভুটানের রাজাকে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি। বিমানবন্দরে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
সফরের শুরুর দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন ভুটানের রাজা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরের প্রথম দিন আমি রাজার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবো। ২৬ মার্চ ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন রাজা।
বাংলাদেশ সফরকালে ভুটানের রাজা পদ্মা সেতু পরিদর্শন করবেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এছাড়া তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। তিনি পদ্মা ব্রিজ পরিদর্শন করবেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করবেন। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পরিদর্শনের জন্য বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করে তিনি সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। স্থলবন্দরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করবে। সেখানে তাকে বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রাজার সফরে কোন বিষয়গুলো আলোচনা হবে তা তুলে ধরেন ড. হাছান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা, আইসিটি ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া কানেক্টিভিটি বিষয়ক বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগে সমন্বিত সহযোগিতা, কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট চুক্তি এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রস্তাব এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
রাজার সফরের তাৎপর্য তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশে প্রথম কোনো উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর এটি। এ সফরে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে (বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে) ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। থিম্পুতে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন। ট্রানজিট এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ। বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সফর বাংলাদেশ ভুটানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে।
যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে তাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তোমরা ভারতে চিকিৎসা করতে যাবা, পেঁয়াজ খাবা, গরুর মাংস খাবা, শাড়ি পরবা, ভারত থেকে আসা অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করবা। আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবা! ভারতীয় পণ্য বর্জন করে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা কি ঠিক রাখা যাবে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির উদ্দেশ্য ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে পণ্যের মূল্য বাড়ানো। না হলে এ রমজানের সময় ঈদের আগে এ ডাক কেন? আর সমস্ত ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে কখনও বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা ঠিক রাখা যাবে?
হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত থেকে কি না আসে। আর যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছি, দেখা যাবে যে ভারতের পেঁয়াজ দিয়েই উনি ছোলা-পেঁয়াজু খেয়েছেন। ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়ে ছোলা-পেঁয়াজু খেয়ে তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন! আবার তার স্ত্রী ভারতীয় শাড়ি পরেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজের ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে ড. হাছান বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে কয়দিন আগে মেজর হাফিজ সাহেব ভারতে গেলেন চিকিৎসা করতে। তোমরা ভারতে চিকিৎসা করতে যাবা, পেঁয়াজ খাবা, ভারত থেকে আসা গরুর মাংস খাবা, শাড়ি পরবা, ভারত থেকে আসা অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করবা। আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ এবং ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক এবং কয়েক হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আমরা একে অপরের সহযোগী। এই সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের এ অঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত করতে হবে। এ সহযোগিতা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে অব্যাহত রাখতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















