রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ভারতের কাছে তিস্তার পানি নয়, ক্ষমতা চেয়েছেন পতিত শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন যাবত আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি। পতিত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে রংপুর অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দাবিটি কখনোই গুরুত্ব দেননি। বরং সাংবাদিকরা তিস্তা নদীর চুক্তির সই হবে কি না তা জানতে চাইলে প্রতিবারই তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিস্তা নদী ও এর অববাহিকার মানুষ রক্ষা ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আমাদের এই আন্দোলন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত সফরে যান, তখন সাংবাদিকরা তিস্তা চুক্তি নিয়ে জানতে চাইলে উনি (শেখ হাসিনা) প্রতিবারই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ১৬ বছরে সেটা করতে পারেননি। পক্ষান্তরে আমরা যেটা জানি, হয়তো মোদী সরকার ওনাকে বলেছে, তিস্তার পানি নেবেন, না কি ক্ষমতায় থাকবেন? উনি ক্ষমতাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন, যার কারণে তিস্তা চুক্তি সম্ভব হয়নি।
দুলু বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা একটি প্রকল্প ছিল। এটিতে চীন অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। এর আওতায় ছিল স্যাটেলাইট শহর, হাউজিং, ইকোনোমিক্যাল জোন নির্মাণ। এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণারও কথা ছিল। ২০১৬ সালে এর সমীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু ভারতের আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা অনতিবিলম্বে ওই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।
তিনি বলেন, তিস্তা নদী একসময় সুখ-সমৃদ্ধির উৎস ছিল। এখন তা আর নেই, তিস্তা এখন উত্তরাঞ্চলের দুঃখের কারণ। উচ্ছল জলধারার এই নদীর পানি এখন হাঁটুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই তিস্তা নদী ও এর অববাহিকার মানুষ রক্ষায় পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।
তিস্তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা নিয়ে আপত্তি তুলে আসাদুল হাবীব দুলু বলেছেন, আমরা চাই না তিস্তায় ভাঙন রোধে বিক্ষিপ্তভাবে জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয় করা হোক। এর আগে কিছু কিছু কাজ করা হয়েছে যেটা কাজে লাগেনি। আমরা দাবি উচ্চারণ করেছি, মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন হোক। কোনো বিক্ষিপ্ত কাজ নয়। তাই এই আন্দোলন কোনো দল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আন্দোলন না। এটি সব মানুষের, রংপুরের মানুষের আন্দোলন।
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, জনগণের অর্থ অপচয় না করে বরং বিলম্ব হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সম্বিলিতভাবে করতে হবে। আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পাড়ে সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ কর্মসূচি ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদীর কাউনিয়া সেতু, মহিপুর সেতু এবং তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টসহ লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও নীলফামারী এই পাঁচ জেলার ১১ পয়েন্টে তাঁবু খাটিয়ে একই সময়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবন কাহিনি অর্থাৎ তাদের আনন্দ-বেদনার বিষয়গুলো নাটক, সংগীতের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী তুলে ধরা হবে, যা মানুষকে সংগঠিত করবে।
এ সময় রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।