স্পোর্টস ডেস্ক :
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের চারটিতে দুই দল ম্যাচ জিতেছিল দুইটি করে। ফলে পঞ্চম ও শেষ ম্যাচটি পরিণত হয় অলিখিত ফাইনালে। ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এর আগে কোন দলই ২-০ থেকে ফিরে এসে সিরিজ জেতেনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয়টা পেয়েছে স্বাগতিক হিসেবে খেলা উইন্ডিজই। নিকোলাস পুরান-ব্রেন্ডন কিংদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে তারা। সিরিজ জিতে নিয়েছে ৩-২ ব্যবধানে।
রোববার (১৩ আগস্ট) ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। আগের দুই ম্যাচেই সফল ছিল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। সেই ফর্ম টেনে আনা হলো এদিনও। আগের দিনের মত ওপেনিং জুটি অবশ্য সফল হয়নি। শুভমান গিল আর জশস্বী জয়সওয়াল দুজনেই ফিরেছেন দুই অঙ্কের রান স্পর্শ করার আগেই। দুজনেই স্পিনার আকিল হোসাইনের শিকার।
শুভমান গিলও খেলতে পারলেন না। ব্যাটে-বলে সংযোগ হচ্ছে না বুঝতে পেরেও অকারণে হাঁটু মুড়ে সুইপ করতে গেলেন। আকিল হোসেনের সোজা বল এসে লাগল তার প্যাডে। দুই ওপেনারকে হারিয়ে তখন কিছুটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেই চাপ কাটিয়ে দেন সূর্যকুমার যাদব এবং তিলক বার্মা।
টি-টোয়েন্টিতে সূর্যকুমারকে নিয়ে এমনিতেই কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু সুযোগ পেয়ে আবার নিজেকে মেলে ধরলেন তিলক বার্মা। যেভাবে তিনি সূর্যকুমারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একের পর এক শট খেললেন, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আউট হলেন তিনি। রোস্টন চেজের গুড লেংথ বল ব্যাটের একটু আগে পড়েছিল। স্লোয়ার বল ঠিক করে বুঝতে পারেননি তিলক। সোজা ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন। ডান দিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাল ক্যাচ নেন চেজ।
পাঁচে নামা সাঞ্জুর কাছে সুযোগ ছিল মঞ্চটা কাজে লাগানোর; কিন্তু আবারও ব্যর্থ কেরলের এই ব্যাটার। সুযোগ পেয়ে তিনি তা হেলায় হারালেন। শুরুটা ভাল হয়েছিল। সূর্যকুমারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে আরও বেশি রান উঠতে পারত ভারতের। সাঞ্জু হেলায় সেই সুযোগ নষ্ট করলেন। রোমারিও শেফার্ডের স্লোয়ারে সহজ ক্যাচ দিলেন উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানের হাতে।
হার্দিক পান্ডিয়ার শুরুটা ভাল হয়নি। উল্টো দিকে সূর্য চালিয়ে খেলতে থাকায় হার্দিকের ধীরগতির ইনিংস অতটা চোখেও পড়ছিল না। ১৮ বলে ১৪ করে ফেরেন তিনি। এরপর সূর্য আউট হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ইনিংস। মাঝে দু’বার অল্প সময়ের জন্যে বৃষ্টি এসে খেলা থামিয়েছে। কিন্তু ভারতের ভাগ্য তাতে ফেরেনি। ১৬৫ রানেই আটকে যায় তাদের ইনিংস।
ওভারপ্রতি ৮ এর বেশি লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি উইন্ডিজের। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই আর্শদ্বীপের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন কাইল মায়ার্স। কিন্তু ওখানেই শেষ ভারতের সাফল্য। নিকোলাস পুরানকে সঙ্গে নিয়ে লডারহিলের মাঠে ঝড় তুলেছেন ব্রেন্ডন কিং।
দুজন মিলে রান তুলেছেন ওভারপ্রতি ৯ এর বেশি গড় নিয়ে। এদের মধ্যে কিং ছিলেন আরও বেশি বিধ্বংসী। দুজনের জুটি থেকে এসেছে ১০৭ রান।
লক্ষ্যমাত্রার যখন আর ৫১ রান বাকি, তখনই বৃষ্টি এসে বন্ধ করে খেলা। বৃষ্টির গতিবেগ ছিল না। কিন্তু মাঠের প্রচণ্ড বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। ফলে আম্পায়াররা খেলা শুরু করতে চাইছিলেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর খেলা শুরু হয়। এরপরই চমকে দেন হার্দিক। বল করতে আনেন তিলক বার্মাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, আইপিএলেও আগে বল করেননি তিলক। কিন্তু এ দিন প্রথম বলে প্রায় আউট করে ফেলেছিলেন পুরানকে। অল্পের জন্যে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরের বলে ফিরে যান পুরান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটে লাগায় ডিআরএসে এলবিডব্লিউ হয়নি। কিন্তু লেগ স্লিপে দাঁড়ানো হার্দিক ক্যাচ নেওয়ায় আউট হন পুরান।
পরের দিকে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন। নিজের বোলিংয়ে কিংয়ের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তিলক। শেষ দিকে আরও একটি চমক দেন হার্দিক। বল করান জশস্বিকে দিয়েও। ততক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পকেটে চলে গিয়েছিল ম্যাচ।
তবে অন্যপাশে কিং ছিলেন অবিচল। ৫৫ বলে ৮৫ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন এই ওপেনার। চার নাম্বারে আসা শাই হোপও সঙ্গ দিয়েছেন তাকে। ১৩ বলে ২২ রানের ছোট ইনিংসটা জয়কে করেছে আরও সহজ। শেষ পর্যন্ত ২ ওভার বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিক উইন্ডিজ।
ম্যাচসেরা হয়েছেন শেফার্ড। ১৭৬ রান করে সিরিজের সেরা পুরান।