নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন দেশে-বিদেশে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হিসেবে গণ্য হয়েছে। যার কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটা উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন এ অবস্থান থেকে সরে আসবে না। ভবিষ্যতেও খারাপ নির্বাচনের নজির সৃষ্টি করে ইজ্জত খোয়াতে চাই না।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নওগাঁ-২ আসনের স্থগিত হওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য, নিষ্কন্টক ও স্বচ্ছ করা কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট সবার দায় রয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম বলেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য করতে পেরেছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার নিদর্শন সৃষ্টি করেছে। এ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ না হতো তাহলে এত বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারতেন না। এমনকি সারা দেশে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরা পরাজিত হতেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে ভিন্ন মতামত থাকবেই। এগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিচলিত নয়। আমরা চেয়েছিলাম শুধু দেশে না, আন্তর্জাতিক মহলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করেছি।
নির্বাচনের ছাড়া দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন কারোর কাম্য না উল্লেখ করে রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে মানুষের কাছে আস্থার জায়গা করে তুলতে হবে। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলে দেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে না।
মতবিনিময়ে উপস্থিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) এইচএম আখতারুল আলম এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) মেহেদী মাহমুদ রেজা অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর অনুসারী নেতাকর্মীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। ভোটকেন্দ্রে গেলে ভোটের পরে ওই সমস্ত ভোটারের নানাভাবে ক্ষতি করা হবে- এমন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কিছু শিক্ষক সংগঠনের নেতা ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, যাদের অনেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এ ধরনের ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আহবান জানান তারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এসব অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচনও আমাদের কাছে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বরং এ নির্বাচনে আমাদের আরও কড়া নজর থাকবে। এ নির্বাচনে কোনো খারাপ নজির সৃষ্টি হোক এটা কোনোভাবেই আমরা চাই না। ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোট দিতে বাধা দেওয়া কিংবা ভোট জালিয়াতি করার অভিযোগ পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হতে পারে। এমনকি গাইবান্ধার একটি আসনে উপনির্বাচনের মতো প্রয়োজন পড়লে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করা হবে।
সভায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গোলাম মাওলা সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ কবীর, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ, রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশেদুল হকসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও প্রার্থীরা।