Dhaka সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে ব্যালটে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার ভিডিও ভাইরাল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায় ‘সিল মারো ভাই সিল মারো।’ সেই সময় আরেক যুবক বলেন, ‘নৌকা মার্কায় সিল মারো।’

২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের এক নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনে তিনজন দাঁড়িয়ে আছেন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাদের একের পর এক ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন। এক যুবক বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিয়ে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পাশে থাকা আরেক যুবক ব্যালট ভাঁজ করছেন।

ভিডিওতে আরেকটি বুথের চিত্র দেখা যায়, সেখানে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছে আরেকজন নারী। তার সামনে উপস্থিত পাঁচ-ছয়জন যুবক। এক যুবকের গলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান আলমের ছবিসংবলিত কার্ড ঝুলছিল। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হেসে হেসে একের পর এক ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন। আর যুবকরা ওই টেবিলে রেখেই ব্যালটে নৌকা প্রতীকে একের পর এক সিল মারেন। তখন এক যুবককে বলতে শোনা যায়— ‘সিল মারো ভাই সিল মারো।’ তখন আরেক যুবক বলে ওঠেন ‘নৌকা মার্কায় সিল মারো।’

সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে নৌকা প্রতীকের আরেক সমর্থক বলেন, আরে আপনে ছিঁড়েন না। ছেঁড়া দিয়া দেন। আমরা সিল মারি।

এ সময় একজন বলেন, ‘আরে আমি দিমু, ঠাস ঠাস ঠাস। আরেক সমর্থক বলেন, ‘আস্তে আস্তে’।

ভিডিওতে আবার প্রথমে দেখা যাওয়া নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বুথের চিত্র দেখা যায়। এ সময় ওই নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আরেকজন নারী পোলিং এজেন্টও সহায়তা করেন। তারা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে দিচ্ছেন। নৌকার সমর্থকরা ব্যালটে সিল মারছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়ে ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে অনাস্থা জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের বিচার বিভাগীয় কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানান।

তার দাবি, ভিডিওটি আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের। তিনি বলেন, আশুগঞ্জের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই এমন কারচুপি হয়েছে। কোনো কেন্দ্রেই ভোটার ছিল না। অথচ ফলাফলে ভোটার দেখানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

নির্বাচন কমিশনের তদন্তে আস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করলে কোনো লাভ হবে না। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও সংবাদিকদের জানিয়েছেন।

নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু অস্বীকার করে বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। অনিয়মে না জড়াতে কর্মী-সমর্থকদের প্রতি কড়া নির্দেশনা ছিল।

৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও আশুগঞ্জের শরীফপুর কেন্দ্রের উল্লেখসহ বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট ছাপানোর অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য (এম.পি) জিয়াউল হক মৃধা। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দায়ের করা অভিযোগে তিনি ভোট নিয়ে চলা তদন্তের প্রতি অনাস্থা দিয়ে বিচার বিভাগীয় কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। গত দুই দিনে তারা অন্তত সংশ্লিষ্ট দুইশ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসনের তদন্তকারি কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা পুলিশের কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীন। বুধবার তারা উপজেলা পরিষদে সংশ্লিষ্টদেরকে ডেকে কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার তারা অভিযোগ উঠা কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা যাওয়ার আগেই ওইসব কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত হন। এ সময় কাউকেই অনিয়মের কথা বলতে শোনা যায়নি।

এ বিষয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন মুখ খুলতে রাজি নন। তবে তিনি জানান, তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিবেন।

গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ইতোমধ্যে ভোটের ফলও প্রকাশ করেছেন। তবে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখার কথা জানায়।

আবহাওয়া

সারাদেশের সব পোশাক কারখানা ৫ আগস্ট বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে ব্যালটে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশের সময় : ০৫:৫০:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায় ‘সিল মারো ভাই সিল মারো।’ সেই সময় আরেক যুবক বলেন, ‘নৌকা মার্কায় সিল মারো।’

২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের এক নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনে তিনজন দাঁড়িয়ে আছেন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাদের একের পর এক ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন। এক যুবক বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিয়ে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পাশে থাকা আরেক যুবক ব্যালট ভাঁজ করছেন।

ভিডিওতে আরেকটি বুথের চিত্র দেখা যায়, সেখানে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছে আরেকজন নারী। তার সামনে উপস্থিত পাঁচ-ছয়জন যুবক। এক যুবকের গলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান আলমের ছবিসংবলিত কার্ড ঝুলছিল। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হেসে হেসে একের পর এক ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন। আর যুবকরা ওই টেবিলে রেখেই ব্যালটে নৌকা প্রতীকে একের পর এক সিল মারেন। তখন এক যুবককে বলতে শোনা যায়— ‘সিল মারো ভাই সিল মারো।’ তখন আরেক যুবক বলে ওঠেন ‘নৌকা মার্কায় সিল মারো।’

সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে নৌকা প্রতীকের আরেক সমর্থক বলেন, আরে আপনে ছিঁড়েন না। ছেঁড়া দিয়া দেন। আমরা সিল মারি।

এ সময় একজন বলেন, ‘আরে আমি দিমু, ঠাস ঠাস ঠাস। আরেক সমর্থক বলেন, ‘আস্তে আস্তে’।

ভিডিওতে আবার প্রথমে দেখা যাওয়া নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বুথের চিত্র দেখা যায়। এ সময় ওই নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আরেকজন নারী পোলিং এজেন্টও সহায়তা করেন। তারা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে দিচ্ছেন। নৌকার সমর্থকরা ব্যালটে সিল মারছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়ে ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে অনাস্থা জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের বিচার বিভাগীয় কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানান।

তার দাবি, ভিডিওটি আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের। তিনি বলেন, আশুগঞ্জের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই এমন কারচুপি হয়েছে। কোনো কেন্দ্রেই ভোটার ছিল না। অথচ ফলাফলে ভোটার দেখানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

নির্বাচন কমিশনের তদন্তে আস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করলে কোনো লাভ হবে না। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও সংবাদিকদের জানিয়েছেন।

নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু অস্বীকার করে বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। অনিয়মে না জড়াতে কর্মী-সমর্থকদের প্রতি কড়া নির্দেশনা ছিল।

৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও আশুগঞ্জের শরীফপুর কেন্দ্রের উল্লেখসহ বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট ছাপানোর অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য (এম.পি) জিয়াউল হক মৃধা। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দায়ের করা অভিযোগে তিনি ভোট নিয়ে চলা তদন্তের প্রতি অনাস্থা দিয়ে বিচার বিভাগীয় কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। গত দুই দিনে তারা অন্তত সংশ্লিষ্ট দুইশ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসনের তদন্তকারি কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা পুলিশের কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীন। বুধবার তারা উপজেলা পরিষদে সংশ্লিষ্টদেরকে ডেকে কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার তারা অভিযোগ উঠা কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা যাওয়ার আগেই ওইসব কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত হন। এ সময় কাউকেই অনিয়মের কথা বলতে শোনা যায়নি।

এ বিষয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন মুখ খুলতে রাজি নন। তবে তিনি জানান, তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিবেন।

গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ইতোমধ্যে ভোটের ফলও প্রকাশ করেছেন। তবে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখার কথা জানায়।