Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগদানের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সব গুছিয়ে দেওয়ার পরে এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির কথা। পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি তো শুনতে রাজি না। আজ না, ৭৭ বছর বয়স। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। তাহলে আমার রাজনীতির বয়স কত? স্কুল জীবন থেকে মিছিল করা শুরু করেছি। এই পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণী কথা বলেন, তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ শতভাগ দেই। কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসবো? সবাই একটু টের পাক যে (বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের অবস্থা) কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছুটা লোডশেডিং দেওয়া হয়। তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে, লোডশেডিং আছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আক্কেলটা ঠিক হবে যে, এই অবস্থা তো ছিল। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেবো?

সবাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও ভর্তুকির সুযোগটা অর্থশালী-বড়লোকরা নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে একটা স্লট ঠিক করবো। এখন থেকে কত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, তাদের জন্য এক দাম। আর তার থেকে যারা বেশি ব্যবহার করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, ওইভাবে কয়েকটা স্লট করে দেবো। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। সেইভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। এটার ওপর কাজ চলছে, এভাবে আমরা করে দেবো।

সংসদের বাইরের কোনও দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালো, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনও বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।

বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না।

বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত তরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি করো। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আসো।

তিনি বলেন, এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না, আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করতো? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকতো না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলো। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কতো দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার-টাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরো মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।

পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনও একজনের বক্তব্যের উদ্বৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারতো না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করতো। ফেন চাইতো, নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ মাংস ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক শিটকাতো। এখন আর শিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন কোন বিবেচনায় দেওয়া হবে তা জানিয়েছেন তিনি বলেন, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনায় দেখব, বিবেচনা করব। প্রতি ছয় মাস পর পর আমি কিন্তু সার্ভে করি। কারো পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই। আমরা প্রপার সচেতন বলে নির্বাচনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই এবং নির্বাচনে জয়ী হই।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছেন, জনগণের আস্থা, বিশ্বাস কতটুকু অর্জন করেছেন, আমরা সেটাকেই বিবেচনা নিই। সেটা বিবেচনায় নিই বলে আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করত, তাহলে বাংলাদেশের এত পরিবর্তন হতো না।

তিনি বলেন, কতগুলো দুর্যোগ এসেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। এই করোনার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মী, অনেক সংসদ সদস্য মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ সম্পৃক্ত ও দল সুসংগঠিত না হলে কোনো সমস্যা মোকাবিলা কঠিন হয়ে যায়। আমরা পারি শুধু একটাই কারণে– আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ। যখনই মানুষের জন্য ডাক দিয়েছি তারা ছুটে গেছে মানুষের কাছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:৫৯:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগদানের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সব গুছিয়ে দেওয়ার পরে এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির কথা। পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি তো শুনতে রাজি না। আজ না, ৭৭ বছর বয়স। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। তাহলে আমার রাজনীতির বয়স কত? স্কুল জীবন থেকে মিছিল করা শুরু করেছি। এই পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণী কথা বলেন, তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ শতভাগ দেই। কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসবো? সবাই একটু টের পাক যে (বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের অবস্থা) কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছুটা লোডশেডিং দেওয়া হয়। তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে, লোডশেডিং আছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আক্কেলটা ঠিক হবে যে, এই অবস্থা তো ছিল। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেবো?

সবাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও ভর্তুকির সুযোগটা অর্থশালী-বড়লোকরা নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে একটা স্লট ঠিক করবো। এখন থেকে কত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, তাদের জন্য এক দাম। আর তার থেকে যারা বেশি ব্যবহার করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, ওইভাবে কয়েকটা স্লট করে দেবো। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। সেইভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। এটার ওপর কাজ চলছে, এভাবে আমরা করে দেবো।

সংসদের বাইরের কোনও দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালো, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনও বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।

বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না।

বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত তরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি করো। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আসো।

তিনি বলেন, এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না, আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করতো? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকতো না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলো। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কতো দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার-টাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরো মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।

পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনও একজনের বক্তব্যের উদ্বৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারতো না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করতো। ফেন চাইতো, নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ মাংস ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক শিটকাতো। এখন আর শিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন কোন বিবেচনায় দেওয়া হবে তা জানিয়েছেন তিনি বলেন, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনায় দেখব, বিবেচনা করব। প্রতি ছয় মাস পর পর আমি কিন্তু সার্ভে করি। কারো পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই। আমরা প্রপার সচেতন বলে নির্বাচনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই এবং নির্বাচনে জয়ী হই।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছেন, জনগণের আস্থা, বিশ্বাস কতটুকু অর্জন করেছেন, আমরা সেটাকেই বিবেচনা নিই। সেটা বিবেচনায় নিই বলে আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করত, তাহলে বাংলাদেশের এত পরিবর্তন হতো না।

তিনি বলেন, কতগুলো দুর্যোগ এসেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। এই করোনার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মী, অনেক সংসদ সদস্য মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ সম্পৃক্ত ও দল সুসংগঠিত না হলে কোনো সমস্যা মোকাবিলা কঠিন হয়ে যায়। আমরা পারি শুধু একটাই কারণে– আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ। যখনই মানুষের জন্য ডাক দিয়েছি তারা ছুটে গেছে মানুষের কাছে।