Dhaka শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেপজা ও শ্রম আইনের সংশোধনী আনার কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে: বাণিজ্য সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও শ্রম আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে শ্রম অধিকার সংক্রান্ত ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানের (এনএপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এসময় শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহী এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে আজ সভা করেছি। আমাদের কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামীতে আরও কী করতে হবে, তা নিয়েই কথা বলেছি। ২০২৬ সালে যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে, সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা অন্য দেশগুলো বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু অঙ্গীকার দেখতে চায়, সেগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছি। সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রম আইনে বেশ সংশোধনী আনা হয়েছে। বেজা বা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ সেখানে কিন্তু সংশোধনী আনা হয়েছে। এগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য ছিল বা তাদের কিছু চাওয়া ছিল, সেগুলো পূরণ করার জন্যই এ সংস্কার বা আইনের পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, এগুলো তাদের জানানো হবে ভালোভাবে। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যে পথচলা সেখানে আরও কি কি করতে হবে বা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের স্টেকহোল্ডার এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ উনাদের বলেছি প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা গত ১০ বছরে অনেক সংস্কার এনেছি। ২০১০ সাল থেকে ইতোমধ্যে তিনবার আমাদের শ্রম আইনে সংস্কার আনা হয়েছে। চারবার নিম্নতম মজুরি বোর্ড নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করেছে। সুতরাং আমরা প্রতিনিয়ত সংস্কারের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যে শিল্পায়ন হচ্ছে, সেখানে যে কর্মপরিবেশ, শ্রম অধিকার এসবগুলো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ধরেন, আমাদের বাণিজ্যে যারা বড় অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার আমরা রপ্তানি করি। শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আরও দশ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই না। বরং পৃথিবীর মধ্যে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করছি। কিন্তু তাদের কিছু দাবি আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনগুলো অনুমোদন করেছি, সে অনুযায়ী আমাদের শ্রম আইনে একটা ন্যূনতম থ্রেশহোল্ড আছে, একটি কারখানায় মোট শ্রমিকের ২০ ভাগ সদস্য যদি সংগঠন করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। এটাকে ১০ শতাংশ করার দাবি তারা করেছিল, আমরা পনেরো শতাংশ করে দিয়েছি।

তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, বেপজা আইনের ক্ষেত্রে সংগঠন করার অধিকার আছে, কিন্তু আমরা সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন বলি না, আইনে সেটাকে বলা হয়েছে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে তারা বলে যে ট্রেড ইউনিয়ন প্রবর্তন করতে হবে। বিষয়টি প্রায় একই। এখনও সংগঠন হচ্ছে, তখনও সংগঠন হবে। কিন্তু নামটি যেন শ্রম সংগঠন হয়। আমরা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বেপজা আইনটা সংশোধন করা হবে। সংশোধনটা কীভাবে হবে, সেটা সব অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। এখানে বিনিয়োগকারী আছেন, শ্রমিক আছেন, মালিকপক্ষ আছেন, সরকার আছে সবাই মিলেই ঠিক করা হবে কোন পর্যায়ে আমরা সংস্কারটা করবো। ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের বেপজা আইনে অনেক সংস্কার আনা হয়েছে। সেগুলো আমরা তাদের বলেছি এবং তারা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, শ্রম আইনে মোটাদাগে দুটি জিনিস তারা দাবি করেছে। তারা চাচ্ছে বেপজাতে শ্রম সংগঠন করার অধিকার দিতে আর থ্রেশহোল্ডটা কমিয়ে আনা অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শ্রম অধিকার সংক্রান্ত সমঝোতায় যেসব ইস্যু ছিল, সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা; প্রশ্নে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, সেটা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ থেকে ১৬ নভেম্বর একটা উচ্চপর্যায়ের দল ঢাকায় এসে সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর বাংলাদেশ যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রশংসাও করেছেন। বলেছেন, আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে, এখন তাদের চাওয়াগুলো আরও বেশি বাস্তবায়ন দেখতে চান। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেহেতু তাদের চাওয়াগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের ৬০ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়। যা মোট রপ্তানির ৬০ ভাগ। এটা একটা বিশাল বাজার, আমাদের এটা রক্ষা করতে হবে। আমরা তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করে যাচ্ছি।

বেপজা আইনের সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অংশীজন যারা আছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে কী করা হবে। এরইমধ্যে বেপজা আইনে অনেকগুলো সংশোধন আনা হয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, বিশেষ করে আইএলও আইনে ত্রিপক্ষীয়ভাবেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাও সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ মিলে ঠিক করবেন, কীভাবে করা হবে। বেপজার শ্রমিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি।

এসব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হবে কিনা, জানতে চাইলে সচিব বলেন, তাদের চাওয়াগুলো যে পূরণ হয়েছে, যেমন বেপজা আইনে সংস্কার করা হয়েছে, শ্রম আইনটিই বেপজার মতো প্রযোজ্য হবে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধন আনা হয়েছে, এ অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। এজন্য কয়েকদিন লাগবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।

মানসম্পন্ন পণ্য কম দামে দিতে পারার কারণেই রপ্তানি হচ্ছে এমন মন্তব্য করে সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, আমরা কারও দয়াদাক্ষিণ্যে রপ্তানি করি না। সব নিয়ম মেনে কোয়ালিটি পণ্য কমদামে দিতে পারি বলেই রপ্তানি হচ্ছে।

বাণিজ্য নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা প্রায় ২০০ দেশে পণ্য রপ্তানি করি। এরমধ্যে কয়েকটি দেশে খুব বেশি রপ্তানি করি। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য থাকবে, কীভাবে প্রতিযোগিতা মূল্যে কমপ্লায়েন্স অর্জন করে এবং ক্রেতার রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করেই রপ্তানি করতে হয়। আমরা কারও দয়াদাক্ষিণ্যে রপ্তানি করি না। আমাদের শ্রমিক, উদ্যোক্তারা অনেক পরিশ্রম করেন। সব নিয়ম মেনে কোয়ালিটি পণ্য কমদামে দিতে পারি বলেই রপ্তানি হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি বাজার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য যা যা করণীয় তা করবো স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে। আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতা, রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু দেখে এবং আন্তর্জাতিক যে রিকোয়ারমেন্ট আমাদের মানতে হবে, সেটা মেনেই করবো।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা ২৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি, সেটা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি, কিন্তু সেখানে কোনো শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মধ্যে বলা যায় অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে রপ্তানি করতে হয়।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি না- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তপন কান্তি বলেন, গেলো বৃহস্পতিবারও বলেছি, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, সব দেশের শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নত করতে। আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের চলমান যে আলোচনা বলতে পারেন, ত্রি প্লাস ফাইভ অর্থাৎ পাঁচজন রাষ্ট্রদূত ও তিনজন সচিব মিলে যে একটা প্ল্যাটফর্ম আছে, সেই বৈঠকটা এই মাসে করার কথা। সে জন্যই আজ বসেছিলাম। এতকাল যে অগ্রগতি হয়েছে, তা কীভাবে জানানো যায়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কারের ভবিষ্যৎ পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেব না : নাহিদ ইসলাম

বেপজা ও শ্রম আইনের সংশোধনী আনার কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে: বাণিজ্য সচিব

প্রকাশের সময় : ০৩:১৫:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও শ্রম আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে শ্রম অধিকার সংক্রান্ত ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানের (এনএপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এসময় শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহী এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে আজ সভা করেছি। আমাদের কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামীতে আরও কী করতে হবে, তা নিয়েই কথা বলেছি। ২০২৬ সালে যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে, সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা অন্য দেশগুলো বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু অঙ্গীকার দেখতে চায়, সেগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছি। সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রম আইনে বেশ সংশোধনী আনা হয়েছে। বেজা বা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ সেখানে কিন্তু সংশোধনী আনা হয়েছে। এগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য ছিল বা তাদের কিছু চাওয়া ছিল, সেগুলো পূরণ করার জন্যই এ সংস্কার বা আইনের পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, এগুলো তাদের জানানো হবে ভালোভাবে। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যে পথচলা সেখানে আরও কি কি করতে হবে বা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের স্টেকহোল্ডার এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ উনাদের বলেছি প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা গত ১০ বছরে অনেক সংস্কার এনেছি। ২০১০ সাল থেকে ইতোমধ্যে তিনবার আমাদের শ্রম আইনে সংস্কার আনা হয়েছে। চারবার নিম্নতম মজুরি বোর্ড নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করেছে। সুতরাং আমরা প্রতিনিয়ত সংস্কারের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যে শিল্পায়ন হচ্ছে, সেখানে যে কর্মপরিবেশ, শ্রম অধিকার এসবগুলো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ধরেন, আমাদের বাণিজ্যে যারা বড় অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার আমরা রপ্তানি করি। শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আরও দশ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই না। বরং পৃথিবীর মধ্যে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করছি। কিন্তু তাদের কিছু দাবি আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনগুলো অনুমোদন করেছি, সে অনুযায়ী আমাদের শ্রম আইনে একটা ন্যূনতম থ্রেশহোল্ড আছে, একটি কারখানায় মোট শ্রমিকের ২০ ভাগ সদস্য যদি সংগঠন করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। এটাকে ১০ শতাংশ করার দাবি তারা করেছিল, আমরা পনেরো শতাংশ করে দিয়েছি।

তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, বেপজা আইনের ক্ষেত্রে সংগঠন করার অধিকার আছে, কিন্তু আমরা সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন বলি না, আইনে সেটাকে বলা হয়েছে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে তারা বলে যে ট্রেড ইউনিয়ন প্রবর্তন করতে হবে। বিষয়টি প্রায় একই। এখনও সংগঠন হচ্ছে, তখনও সংগঠন হবে। কিন্তু নামটি যেন শ্রম সংগঠন হয়। আমরা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বেপজা আইনটা সংশোধন করা হবে। সংশোধনটা কীভাবে হবে, সেটা সব অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। এখানে বিনিয়োগকারী আছেন, শ্রমিক আছেন, মালিকপক্ষ আছেন, সরকার আছে সবাই মিলেই ঠিক করা হবে কোন পর্যায়ে আমরা সংস্কারটা করবো। ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের বেপজা আইনে অনেক সংস্কার আনা হয়েছে। সেগুলো আমরা তাদের বলেছি এবং তারা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, শ্রম আইনে মোটাদাগে দুটি জিনিস তারা দাবি করেছে। তারা চাচ্ছে বেপজাতে শ্রম সংগঠন করার অধিকার দিতে আর থ্রেশহোল্ডটা কমিয়ে আনা অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শ্রম অধিকার সংক্রান্ত সমঝোতায় যেসব ইস্যু ছিল, সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা; প্রশ্নে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, সেটা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ থেকে ১৬ নভেম্বর একটা উচ্চপর্যায়ের দল ঢাকায় এসে সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর বাংলাদেশ যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রশংসাও করেছেন। বলেছেন, আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে, এখন তাদের চাওয়াগুলো আরও বেশি বাস্তবায়ন দেখতে চান। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেহেতু তাদের চাওয়াগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের ৬০ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়। যা মোট রপ্তানির ৬০ ভাগ। এটা একটা বিশাল বাজার, আমাদের এটা রক্ষা করতে হবে। আমরা তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করে যাচ্ছি।

বেপজা আইনের সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অংশীজন যারা আছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে কী করা হবে। এরইমধ্যে বেপজা আইনে অনেকগুলো সংশোধন আনা হয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, বিশেষ করে আইএলও আইনে ত্রিপক্ষীয়ভাবেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাও সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ মিলে ঠিক করবেন, কীভাবে করা হবে। বেপজার শ্রমিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি।

এসব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হবে কিনা, জানতে চাইলে সচিব বলেন, তাদের চাওয়াগুলো যে পূরণ হয়েছে, যেমন বেপজা আইনে সংস্কার করা হয়েছে, শ্রম আইনটিই বেপজার মতো প্রযোজ্য হবে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধন আনা হয়েছে, এ অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। এজন্য কয়েকদিন লাগবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।

মানসম্পন্ন পণ্য কম দামে দিতে পারার কারণেই রপ্তানি হচ্ছে এমন মন্তব্য করে সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, আমরা কারও দয়াদাক্ষিণ্যে রপ্তানি করি না। সব নিয়ম মেনে কোয়ালিটি পণ্য কমদামে দিতে পারি বলেই রপ্তানি হচ্ছে।

বাণিজ্য নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা প্রায় ২০০ দেশে পণ্য রপ্তানি করি। এরমধ্যে কয়েকটি দেশে খুব বেশি রপ্তানি করি। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য থাকবে, কীভাবে প্রতিযোগিতা মূল্যে কমপ্লায়েন্স অর্জন করে এবং ক্রেতার রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করেই রপ্তানি করতে হয়। আমরা কারও দয়াদাক্ষিণ্যে রপ্তানি করি না। আমাদের শ্রমিক, উদ্যোক্তারা অনেক পরিশ্রম করেন। সব নিয়ম মেনে কোয়ালিটি পণ্য কমদামে দিতে পারি বলেই রপ্তানি হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি বাজার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য যা যা করণীয় তা করবো স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে। আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতা, রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু দেখে এবং আন্তর্জাতিক যে রিকোয়ারমেন্ট আমাদের মানতে হবে, সেটা মেনেই করবো।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা ২৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি, সেটা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি, কিন্তু সেখানে কোনো শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মধ্যে বলা যায় অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে রপ্তানি করতে হয়।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি না- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তপন কান্তি বলেন, গেলো বৃহস্পতিবারও বলেছি, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, সব দেশের শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নত করতে। আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের চলমান যে আলোচনা বলতে পারেন, ত্রি প্লাস ফাইভ অর্থাৎ পাঁচজন রাষ্ট্রদূত ও তিনজন সচিব মিলে যে একটা প্ল্যাটফর্ম আছে, সেই বৈঠকটা এই মাসে করার কথা। সে জন্যই আজ বসেছিলাম। এতকাল যে অগ্রগতি হয়েছে, তা কীভাবে জানানো যায়।