নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সারাদেশে অর্ধদিবস ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চলমান থাকবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি হাইওয়ে এবং রেলপথও এই ব্লকেডের আওতায় থাকবে।
বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহবাগে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় হাইকোর্টের বারান্দায় যেতে চাই না। আমরা আমাদের পড়ার টেবিলে থাকতে চাই, রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। ছাত্ররা কোটার বিরুদ্ধে তাদের রায় রাজপথে জানান দিয়ে যাচ্ছে এবং জানান দিয়ে যাবে, যতক্ষণ না আমাদের দাবি না মানা হয়। আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, আমরা এক দফা বলেছি।
তিনি বলেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে, নির্দেশনা আসতে হবে যে- একটি কমিশন গঠন করে যৌক্তিক সমাধানের দিকে সরকার এই কোটা ব্যবস্থাকে নিয়ে যাবে। এই দাবিতে আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে, প্রতিটি রাজপথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে।
আসিফ আরো বলেন, ২০১৮ সালে যে পরিপত্র দেওয়া হয়েছিল হাইকোর্ট সেটি বাতিল করেছে। আমরা এই আইনের প্রক্রিয়ায় হাইকোর্টের বারান্দায় যেতে চাই না। আমরা আমাদের রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। যতদিন না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের যে এক দফা দাবি জানিয়েছি সে ব্যাপারে সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য আসতে হবে। একটি কমিশন গঠন করে এই কোটা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম, সব গ্রেডে আইন পাস করে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছি আমরা। ২০১৮ সালের পরিপত্রে কোন কোটাই নেই। কোটা নিয়ে কয়েক বছর পরপর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও হাইকোর্ট সেটি অবৈধ ঘোষণা করতে পেরেছে। ত্রুটিযুক্ত পরিপত্র পরিপত্র খেলার একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এর স্থায়ী সমাধান তখনই হবে যখন জাতীয় সংসদ থেকে আইন পাস করে বাস্তবায়ন করা হবে। নির্বাহী বিভাগ যদি চায় তবে আজকে আমাদের শেষ সংবাদ সম্মেলন হবে।
কী স্টেপ নিলে তারা রাজপথে নামবে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি নির্বাহী বিভাগ থেকে একটি আদেশ জারি করে বা একটি ত্রুটিহীন পরিপত্র জারি করা হয় তবে আমাদের রাজপথে আর দেখবেন না। ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ ৫% কোটার কথা প্রস্তাব করেছি। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কোনোভাবেই নাতিপুতি নামক পোষ্যকোটা ছাত্রসমাজ মানবে না। যাদের কাছে আমাদের দাবি তারা যদি দেখেও না দেখার ভান করে তবে আমরা বলবো তারাই চাচ্ছেন আমরা যেন রাজপথে অবস্থান করি।
প্রসঙ্গত, আজ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা কোনও ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত মানছি না। আমাদের এক দফা দাবি, সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) কোটা রেখে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে।