নিজস্ব প্রতিবেদক :
বয়স শুধুই একটি সংখ্যা-এ কথার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তাওহিদুর রহমান তকু। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রায় ৫০ বছর বয়সেও তিনি উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বুকে নিয়ে হাজির হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভর্তি পরীক্ষায়।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কলা ও আইন অনুষদের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রথম শিফটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের চতুর্থ তলার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে সাংবাদিকদের চোখে ধরা পড়েন তকু, যিনি শারীরিক বয়সের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং জ্ঞান অর্জনের অদম্য ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
নওগাঁর সন্তান তাওহিদুর রহমান তকু জীবনের একটি বড় সময় পার করেছেন নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে। মানসিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন পড়াশোনার বাইরে ছিলেন তিনি। তবে শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন কখনোই তার মন থেকে হারিয়ে যায়নি। শেষ পর্যন্ত গত বছর এইচএসসি সম্পন্ন করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ নেন।
তকু বলেন, আমি দীর্ঘদিন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন ছাড়িনি। অবশেষে গত বছর এইচএসসি পাশ করি এবং এবার জবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। ইংরেজি বিষয়ে প্রস্তুতি ভালো নয়, তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এই পরীক্ষায় ভালো ফল না করলেও দমে যেতে চান না তকু। তিনি বলেন, যদি এবার জবিতে সুযোগ না পাই, তবে আবার চেষ্টা করব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেব ইনশাআল্লাহ।
জবিতে চান্স পেলে এখানেই পড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি যদি এখানে সুযোগ পাই, তাহলে জগন্নাথেই পড়ব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.তাজাম্মুল হক বলেন, তকু নামের যে বয়স্ক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন পরীক্ষায় তার ব্যাপারে জেনেছি। নিয়ম অনুযায়ী তিনি পরীক্ষায় বসেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাটা শুনেছি। তিনি আজ বি ইউনিটে পরীক্ষা দিচ্ছেন। কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো।’
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও আইন অনুষদের ‘বি’ ইউনিটে ৭৮৫টি আসনের বিপরীতে ৪২ হাজার ৯৭৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ব্যতিক্রমী পরীক্ষার্থী তাওহিদুর রহমান তকু, যিনি বয়সের সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে শিক্ষা অর্জনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরীক্ষার হলে বসেছেন। তার এ প্রচেষ্টা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।