নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করে হত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ৪ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, সভায় বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়-ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে পর পর এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের বিষয় নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও নজরদারির অভাবের কারণে ভয়াবহ পরিণতির স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সভা মনে করে এ অনির্বাচিত সরকারের ব্যর্থতার কারণে সামগ্রিকভাবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের তোষণ নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সভায় বঙ্গবাজারসহ অন্যান্য স্থানে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং অবিলম্বে বঙ্গবাজারসহ সব বাজারে অগ্নিনির্বাপন ও সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দাবি জানায়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি জার্মান মিডিয়া হাউস ‘ডয়চে ভেলে’ কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ায় র্যাবের অপকর্মের ডকুমেন্টারি প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে এ ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে যে, অনির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সভা অবিলম্বে সংবিধানবিরোধী, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জোর দাবি জানায়। সভা র্যাব কর্তৃক বেআইনিভাবে গুম, হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় এবং এসব সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘনের জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।
মহাসচিব বলেন, সভায় বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনা অজুহাতে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ কর্তৃক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এ ধরনের হামলা ও গ্রেফতার থেকে প্রমাণ হয় যে, গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করে হত্যা, গুম, খুন ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায়। সভা অবিলম্বে গ্রেফতারদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সভায় নওগাঁয় র্যাবের দ্বারা সরকারি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। অবিলম্বে দায়ী ব্যাব কর্মকর্তা ও সরকারের যুগ্ম-সচিব আজিজুল হকের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য যথাযথ কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ফখরুল বলেন, সভায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশ স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক মো. আবুল আসাদসহ অন্যান্য সাংবাদিক এবং নাগরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবিলম্বে এ নিবর্তনমূলক কালো আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সভায় ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।