Dhaka শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ করে দিয়েছে। সে কারণে দেশ আজ অনেক এগিয়ে গেছে। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পালটা নিষেধাজ্ঞা না হলে আমাদের অর্থনীতিকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারতাম। বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা হয়েছে।

রোববার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ফরেন ইনভেস্টরস্ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এর ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। দেশের এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে রয়েছে আমাদের বেসরকারি খাত। আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি, এটা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। গত ১৫ বছরে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বেসরকারি খাত আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি, তখন থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল বেসরকারি খাতকে আরও উজ্জিবিত করা। তাদের জন্য সব কিছু উন্মুক্ত করে দেওয়া। এবং বিদেশি বিনিয়োগ যাতে আসে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১, আমরা বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দি। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে, গ্যাস উত্তোলন থেকে সার্বিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা চালাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিকি’র যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এ বছর চেম্বারটি ৬০ বছরে পর্দাপন করল। শীর্ষস্থানীয় একটি চেম্বার হিসেবে ফিকি বাংলাদেশের ২১টিরও বেশি খাতে বিশ্বের ৩৫টি দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। ছয় দশকের এ যাত্রায় চেম্বারের ২০০টিরও বেশি সদস্য-প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব অর্জনে অবদান রেখেছে। এছাড়া ফিকি দেশের ৯০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ এফডিআই-এর প্রতিনিধিত্ব করছে, যা আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিশেষ গুরুত্ব বহণ করে। আমি ফিকি’র ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এর প্রাক্তন ও বর্তমান সকল সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ঐতিহাসিক ৬ দফার পঞ্চম দফা ছিল বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে জাতির পিতার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো নির্ধারণ ও শিল্প-বাণিজ্য পুনর্জীবিত করা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ভারত ও রাশিয়া সফর করেন, ফলে বেশকিছু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়। জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার আগেই ১৯৭২ সালে জাতির পিতা চিলির সান্তিয়াগোতে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সংস্থা (আঙ্কটাড) এর তৃতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ ডেলিগেশন প্রেরণ করেন। জাতির পিতার দূরদর্শী পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ঐ অধিবেশনেই আঙ্কটাড এর সদস্য পদ লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চাইতেন আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তৃত হোক, রপ্তানি ‘এক পণ্য নির্ভর’ না হয়ে এতে বৈচিত্র আসুক। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে জাতির পিতা ১৯৭৫ সালে চীনে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেন। চীনের বিভিন্ন কর্পোরেশনের সঙ্গে দুটি রপ্তানি ও দুটি আমদানি চুক্তি সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতির পিতার দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, আইডিবি ও ন্যাম এর সদস্যপদ লাভ করে। খুলে যায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দুয়ার।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছে। আমরা বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

তিনি বলেন, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০.৩১ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্রের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খাত ছাড়াও, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে ব্যক্তিখাতে ভোগ বৃদ্ধি, যাকে প্রাথমিকভাবে সহায়তা করছে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শক্তিশালি গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ ও জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

তিনি বলেন, দেশের এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে রয়েছে আমাদের বেসরকারি খাত। ১৯৯৬ সালে আমরা বেসরকারি খাতের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করে দেই। গত ১৫ বছরে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্নমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। এরফলে বেসরকারি খাত আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের ওপর ভিত্তি করে আজকের এই টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। আশা করা হচ্ছে ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করেছি। এগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আমরা পাঁচটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা গঠন করেছি। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (এইচটিপিএ) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ)। বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে ওয়ান স্টপ পরিষেবা চালু করা হয়েছে।

কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ব্লু ইকোনমি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে এ দেশ। সে সময় যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলো এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে যাতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আসুন সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই। আমাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। একজন মানুষও এদেশে দরিদ্র থাকবে না। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে।

আবহাওয়া

গাজীপুরে শাপলা বিলে নৌকাডুবিতে ২ বন্ধুর মৃত্যু

বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:১৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ করে দিয়েছে। সে কারণে দেশ আজ অনেক এগিয়ে গেছে। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পালটা নিষেধাজ্ঞা না হলে আমাদের অর্থনীতিকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারতাম। বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা হয়েছে।

রোববার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ফরেন ইনভেস্টরস্ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এর ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। দেশের এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে রয়েছে আমাদের বেসরকারি খাত। আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি, এটা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। গত ১৫ বছরে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বেসরকারি খাত আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি, তখন থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল বেসরকারি খাতকে আরও উজ্জিবিত করা। তাদের জন্য সব কিছু উন্মুক্ত করে দেওয়া। এবং বিদেশি বিনিয়োগ যাতে আসে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১, আমরা বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দি। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে, গ্যাস উত্তোলন থেকে সার্বিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা চালাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিকি’র যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এ বছর চেম্বারটি ৬০ বছরে পর্দাপন করল। শীর্ষস্থানীয় একটি চেম্বার হিসেবে ফিকি বাংলাদেশের ২১টিরও বেশি খাতে বিশ্বের ৩৫টি দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। ছয় দশকের এ যাত্রায় চেম্বারের ২০০টিরও বেশি সদস্য-প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব অর্জনে অবদান রেখেছে। এছাড়া ফিকি দেশের ৯০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ এফডিআই-এর প্রতিনিধিত্ব করছে, যা আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিশেষ গুরুত্ব বহণ করে। আমি ফিকি’র ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এর প্রাক্তন ও বর্তমান সকল সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ঐতিহাসিক ৬ দফার পঞ্চম দফা ছিল বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে জাতির পিতার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো নির্ধারণ ও শিল্প-বাণিজ্য পুনর্জীবিত করা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ভারত ও রাশিয়া সফর করেন, ফলে বেশকিছু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়। জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার আগেই ১৯৭২ সালে জাতির পিতা চিলির সান্তিয়াগোতে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সংস্থা (আঙ্কটাড) এর তৃতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ ডেলিগেশন প্রেরণ করেন। জাতির পিতার দূরদর্শী পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ঐ অধিবেশনেই আঙ্কটাড এর সদস্য পদ লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চাইতেন আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তৃত হোক, রপ্তানি ‘এক পণ্য নির্ভর’ না হয়ে এতে বৈচিত্র আসুক। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে জাতির পিতা ১৯৭৫ সালে চীনে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেন। চীনের বিভিন্ন কর্পোরেশনের সঙ্গে দুটি রপ্তানি ও দুটি আমদানি চুক্তি সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতির পিতার দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, আইডিবি ও ন্যাম এর সদস্যপদ লাভ করে। খুলে যায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দুয়ার।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছে। আমরা বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

তিনি বলেন, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০.৩১ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্রের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খাত ছাড়াও, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে ব্যক্তিখাতে ভোগ বৃদ্ধি, যাকে প্রাথমিকভাবে সহায়তা করছে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শক্তিশালি গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ ও জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

তিনি বলেন, দেশের এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে রয়েছে আমাদের বেসরকারি খাত। ১৯৯৬ সালে আমরা বেসরকারি খাতের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করে দেই। গত ১৫ বছরে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্নমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। এরফলে বেসরকারি খাত আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের ওপর ভিত্তি করে আজকের এই টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। আশা করা হচ্ছে ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করেছি। এগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আমরা পাঁচটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা গঠন করেছি। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (এইচটিপিএ) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ)। বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে ওয়ান স্টপ পরিষেবা চালু করা হয়েছে।

কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ব্লু ইকোনমি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে এ দেশ। সে সময় যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলো এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে যাতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আসুন সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই। আমাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। একজন মানুষও এদেশে দরিদ্র থাকবে না। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে।