Dhaka বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানিতে বড় বাধা দালাল চক্র : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বড় বাধা দালাল চক্র বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শ্রমশক্তি রফতানির পুরোটাই দালাল বেষ্টিত। পদে পদে দালালদের প্রতারণার জন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই শ্রমশক্তি রফতানি খাতকে দালাল মুক্ত করতে না পারলে উন্নতি সম্ভব না।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও প্রবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিকদের মুক্তির কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা অনেক কষ্ট করে বিদেশ গেছেন। সেখানে আইন অমান্য করলে কি শাস্তি হবে সবই জানতো, তারপরও দেশের জন্য আইন ভাঙল। পরবর্তীতে ওই দেশের সরকারকে অনুরোধ করলাম, তিনি তাদের মুক্তি দিলেন।

তিনি বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আনোয়ার ইব্রাহিম এখানে আসলেন। তখন খবর পেলাম ১৭ হাজার শ্রমিক মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারেনি। তারা সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। আনোয়ার ইব্রাহিমকে বললাম, তাদের নিয়ে যেতে হবে। বন্ধু (আনোয়ার ইব্রাহিম) মানুষ না করতে পারেনি। তিনি জানান, ঠিক আছে নিয়ে যাব। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে এগুলো নিয়ে কাজ করলাম। তখন দেখা গেছে, পুরো জগতটা দালাল-সিন্ডিকেট ভরা। সরকার এখান থেকে অনেকদূরে। এ হলো বিদেশ যারা যেতে চাচ্ছেন, তাদের কপাল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাপান সফরে গেলাম। তারা বলল, লোক দরকার। আমরা বললাম, আমরা তো লোক নিয়ে বসে আছি। কত লোক লাগবে। বলল, জানাবে। তারা নেপাল থেকে ৭ হাজার লোক নিয়েছে। আমি জানতে চাইলাম, বাংলাদেশ থেকে কত নিয়েছে? বলল, মাত্র ২ হাজার। শুনে অবাক হলাম, নেপাল থেকে এতো হলে, বাংলাদেশ থেকে কম কেন। আমাকে জিজ্ঞেস করল, কত দিতে পারব। আমি বললাম একলাখ লোক দিতে পারবো। শুধু ভাষা শিখলে ওখানে যেতে পারবেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাপানের বহু শহরে টেক্সি বন্ধ হয়ে গেছে, ড্রাইভার নেই। মাইলের পর মাইল খালি জমি পড়ে আছে, জনশূন্য। তারা বলল, লোক পাঠাও আমরা যাতে এগুলো চালু করতে পারি। চাষাবাদ করতে পারি।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে তারুণ্যের অভাব আর আমরা হলাম তারুণ্যের খনি। এটা আমাদের মাথায় ঢুকছে না, এটা সোনার খনির থেকেও যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর চেয়ে তরুণ জনসংখ্যা কোথায় পাবে? সারা দুনিয়াকে আসতে হবে এখানে। তৈরি থাকলে যে কোনো জায়গায় যেতে চান তারা। সাধ্য সাধনা করে তাদের নিয়ে যাবে। এখন অনুরোধ আছে পোল্যান্ডে ইস্ট, ইউরোপের কান্ট্রিতে। প্রথম প্রস্তাব হলো আমাদের লোক দরকার, তোমাদের লোক দাও। এটা ক্রমে বাড়বে, কমবে না। ওদের তরুণ কমবে, আমাদের তরুণ বাড়বে। সারা দুনিয়া এখন বাংলাদেশের হাতে। যদি আমরা আমাদের এ রাস্তাগুলো তৈরি করতে পারি, দালালের কবল থেকে বাঁচতে পারি, নিয়ম শৃঙ্খলাগুলো রাখতে পারি। যেটুকু সাফল্যের কথা আমরা এখন আলোচনা করছি, এটা হলো সামান্য, ওপরের দিকে ভেতরে এখনো ঢুকিনি। সেজন্য জাতি হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এমন একটা ভাগ্যবান জাতি, যেখানে অনন্য সোনার খনি। এ সোনার খনি থেকে যদি আমরা সোনা না আনি আমাদের কপালের কোনো পরিবর্তন হবে না। আমাদের এ সোনা ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করার জন্য সারা দুনিয়া এক পায়ে খাড়া। আমরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করি। আশা করি, সেই প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি পাবো। আমাদের তরুণরা সারা দুনিয়ার যে কোনো তরুণের চেয়ে কম না, শুধু সেই সুযোগটা তাদের দেওয়া।

 

আবহাওয়া

হাদির ওপর হামলা : ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার

বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানিতে বড় বাধা দালাল চক্র : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০২:৩২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বড় বাধা দালাল চক্র বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শ্রমশক্তি রফতানির পুরোটাই দালাল বেষ্টিত। পদে পদে দালালদের প্রতারণার জন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই শ্রমশক্তি রফতানি খাতকে দালাল মুক্ত করতে না পারলে উন্নতি সম্ভব না।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও প্রবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিকদের মুক্তির কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা অনেক কষ্ট করে বিদেশ গেছেন। সেখানে আইন অমান্য করলে কি শাস্তি হবে সবই জানতো, তারপরও দেশের জন্য আইন ভাঙল। পরবর্তীতে ওই দেশের সরকারকে অনুরোধ করলাম, তিনি তাদের মুক্তি দিলেন।

তিনি বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আনোয়ার ইব্রাহিম এখানে আসলেন। তখন খবর পেলাম ১৭ হাজার শ্রমিক মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারেনি। তারা সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। আনোয়ার ইব্রাহিমকে বললাম, তাদের নিয়ে যেতে হবে। বন্ধু (আনোয়ার ইব্রাহিম) মানুষ না করতে পারেনি। তিনি জানান, ঠিক আছে নিয়ে যাব। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে এগুলো নিয়ে কাজ করলাম। তখন দেখা গেছে, পুরো জগতটা দালাল-সিন্ডিকেট ভরা। সরকার এখান থেকে অনেকদূরে। এ হলো বিদেশ যারা যেতে চাচ্ছেন, তাদের কপাল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাপান সফরে গেলাম। তারা বলল, লোক দরকার। আমরা বললাম, আমরা তো লোক নিয়ে বসে আছি। কত লোক লাগবে। বলল, জানাবে। তারা নেপাল থেকে ৭ হাজার লোক নিয়েছে। আমি জানতে চাইলাম, বাংলাদেশ থেকে কত নিয়েছে? বলল, মাত্র ২ হাজার। শুনে অবাক হলাম, নেপাল থেকে এতো হলে, বাংলাদেশ থেকে কম কেন। আমাকে জিজ্ঞেস করল, কত দিতে পারব। আমি বললাম একলাখ লোক দিতে পারবো। শুধু ভাষা শিখলে ওখানে যেতে পারবেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাপানের বহু শহরে টেক্সি বন্ধ হয়ে গেছে, ড্রাইভার নেই। মাইলের পর মাইল খালি জমি পড়ে আছে, জনশূন্য। তারা বলল, লোক পাঠাও আমরা যাতে এগুলো চালু করতে পারি। চাষাবাদ করতে পারি।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে তারুণ্যের অভাব আর আমরা হলাম তারুণ্যের খনি। এটা আমাদের মাথায় ঢুকছে না, এটা সোনার খনির থেকেও যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর চেয়ে তরুণ জনসংখ্যা কোথায় পাবে? সারা দুনিয়াকে আসতে হবে এখানে। তৈরি থাকলে যে কোনো জায়গায় যেতে চান তারা। সাধ্য সাধনা করে তাদের নিয়ে যাবে। এখন অনুরোধ আছে পোল্যান্ডে ইস্ট, ইউরোপের কান্ট্রিতে। প্রথম প্রস্তাব হলো আমাদের লোক দরকার, তোমাদের লোক দাও। এটা ক্রমে বাড়বে, কমবে না। ওদের তরুণ কমবে, আমাদের তরুণ বাড়বে। সারা দুনিয়া এখন বাংলাদেশের হাতে। যদি আমরা আমাদের এ রাস্তাগুলো তৈরি করতে পারি, দালালের কবল থেকে বাঁচতে পারি, নিয়ম শৃঙ্খলাগুলো রাখতে পারি। যেটুকু সাফল্যের কথা আমরা এখন আলোচনা করছি, এটা হলো সামান্য, ওপরের দিকে ভেতরে এখনো ঢুকিনি। সেজন্য জাতি হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এমন একটা ভাগ্যবান জাতি, যেখানে অনন্য সোনার খনি। এ সোনার খনি থেকে যদি আমরা সোনা না আনি আমাদের কপালের কোনো পরিবর্তন হবে না। আমাদের এ সোনা ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করার জন্য সারা দুনিয়া এক পায়ে খাড়া। আমরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করি। আশা করি, সেই প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি পাবো। আমাদের তরুণরা সারা দুনিয়ার যে কোনো তরুণের চেয়ে কম না, শুধু সেই সুযোগটা তাদের দেওয়া।