নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিদেশে বসে যারা গুজব রটায়, আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অনেক জায়গায় তাদের ব্যাপারে নোটিফাই করা হয়েছে। কেউ যদি মনে করে বিদেশে বসে গুজব রটাবে আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, এখন আর সেটি কিন্তু নয়।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের ‘গুজব প্রতিরোধ সেল এবং ফ্যাক্টস চেকিং কমিটি’র সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
গুজব প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকার আলোচনা করছে কিনা, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সেটাও একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। ভারত আইন করেছে— সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব সার্ভিস প্রোভাইডারকে সেখানে নিবন্ধিত হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন করেছে সেখানেও নিবন্ধিত হতে হবে। যুক্তরাজ্যও এই আইন করেছে। অন্যান্য দেশ আইন করেছে। আমাদের দেশে এখনও আইনটি হয়নি। তাই আগামী সংসদে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বাংলাদেশে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন নেওয়ার বিষয়ে আইন করা হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এখন তো আইন করার সময় নেই। আগামী পার্লামেন্টে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আইন হবে।’
বিদেশে থেকে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে আপনারা কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে অনেকে গুজব ছড়ায়। সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়েও অনেক গুজব ছড়ানো হয়েছে। উনি আমেরিকায় নেই। উনি আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, এসে আবার আমেরিকা চলে যান। বিদেশ থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেটির ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল, আগের তুলনায় কমেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এ গুজব ছড়ানোর জন্য বিএনপি এবং জামায়াত তাদের নিয়মিত পয়সা দেয়। পয়সা না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বা কম দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সেই অডিও ভাইরাল হয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে গুজব রটানোর জন্য যদি একটি রাজনৈতিক দল গুজব রটনাকারীদের পয়সা দেয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।
মন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক জায়গায় তাদের নামে মামলাও হয়েছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশের সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী মামলা করতে আমাদের দলের নেতাদের বলা হয়েছে। কেউ যদি মনে করেন, বিদেশে বসে বসে গুজব ছড়াবেন এবং তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন, তা হবে না।
দেশে যারা গুজব রটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের মধ্য থেকে যখন কেউ গুজব রটায় তখন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা যদি আইসিটি অ্যাক্টে হয়, তবে সেটি পত্রিকায় ছড়ায় কেন মামলা হলো? গুজবটাতো অনলাইনেই ছড়ানো হয় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সেটি তো ডিজিটাল মাধ্যম। ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ালে তো ডিজিটাল আইনেই মামলা হবে। কিন্তু সে মামলা করলে তখন আবার অনেকে বলে, কেউ কেউ চেঁচামেচি করেন কেন মামলা হলো, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রেফতার করলে তো সেটি নিয়ে আরও বেশি কথাবার্তা হয়, সে কি করেছে সেটি তখন ঢাকা পড়ে যায়।
এছাড়া দেশে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দীর্ঘসূত্রিতা আছে বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাবো কেউ যদি সত্যিকার অর্থে অপরাধ করে থাকে, সেটি যদি আমিও হই, সেটা যদি একজন সাংবাদিকও হয়, তার তো বিচার হতে হবে। না হলে তো এ অপরাধ কোনো দিন বন্ধ করা যাবে না, কমানো যাবে না। আইন সংশোধন করা হয়েছে, সহজীকরণ করা হয়েছে।’
যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে, সেসবের স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে সরকারের কোনো আলাপ আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এটি বড় প্রতিবন্ধকতা। ভারত আইন করেছে, সব সার্ভিস প্রোভাইডার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে নিবন্ধিত হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউকে আইন করেছে সেখানে নিবন্ধিত হতে হবে। আমাদের দেশে আইনটি এখনও হয়নি। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। বার বার তাগিদ দিচ্ছি এবং এখানে অফিস খোলার কথা বলছি। পাশাপাশি বাংলাদেশি আইনে নিবন্ধিত হওয়ার কথা বলছি। কিন্তু আমাদের এখানে নিবন্ধিত হতেই হবে, সে বাধ্যবাধকতা আরোপের আইনটি এখনও হয়নি। সেটি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, এখন তো আইন করার সময় নেই। আগামী সংসদে এ বিষয়ে আইন হবে বলে আমি আশা করছি।
সাধারণ মানুষ কীভাবে ফ্যাক্টস চেক করতে পারবেন, সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পিআইডি কাজ করতে পারে। আসলে একটি গুজব যখন ছড়ায়, তখন বুঝতে পেরেও কাউন্টার পোস্ট কেউ দেয় না। ফলে এটি ছড়াতে থাকে। গুজব তো দুই-তিনজনে ছড়ায়। সবাই মিলে কাউন্টার পোস্ট দিলে গুজব ছড়াবে না। সে বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।