চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
বিদেশিরা সংবিধান সম্মতভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে এক সমাবেশে তিনি একথা বলেন। নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ শুরুর আগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি লবিস্টের মাধ্যমে বিদেশি মুরব্বিদের দেশে ডেকে এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিল। কিন্তু বিদেশি প্রতিনিধি দলের কেউ আমাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তারা চেয়েছেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সেটা সংবিধান সম্মতভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং সেটা সংবিধান সম্মতভাবে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপি অনেক উদ্বেলিত হয়েছিল। এখন দেখি বিএনপি ভালো হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তারা পুলিশের ওপর আগের মতো হামলা করার সাহস পাচ্ছে না। বিএনপির আশা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কিছু বলবে। কিন্তু এনিয়ে তারা টু শব্দটি করেননি। এজন্য তারা (বিএনপি) প্রচণ্ড হতাশ হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কথায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্তুষ্ট হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সন্তুষ্ট হয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আর আলোচনায় উপস্থাপন করেনি। এজন্য বিএনপি চরম হতাশায় ভুগছে। তারা তারুণ্যের সমাবেশ করছে অথচ সমাবেশে যারা উপস্থিত আছে তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে অথবা ৬০ বছরের বেশি। অকারণে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতাসংস্থার পরামর্শ অবশ্যই শুনব। কিন্তু তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এদেশে নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হবে সংবিধান সম্মতভাবে। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি অসাংবিধানিক এবং এই ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যেও ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। তাই আমাদেরও নির্বাচনী সরকার গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। নির্বাচনী সরকার গঠন করা হলে দেশে আরেকটি এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আমরা চাই, দেশ চলবে আমাদের আইনে, আমাদের নিয়মে, এটাই শেষ কথা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনারা যাদের মুরব্বি মেনেছেন, তারা কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। আপনারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে তাহলে লাভ কী হলো? বারবার বলে আসছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে, তিনি দেশ থেকে পালাবেন কিন্তু ঘটনা ঘটছে উল্টো। আপনাদের তারেক জিয়াই সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। খালেদা জিয়াও দণ্ডিত হয়ে নিজের গৃহে আছেন, তাকে আমরা কারাগারে পাঠাইনি।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার চট্টগ্রামে শ্রমিক সমাবেশ করেছেন। তিনি সেখানে কথা ঘুরিয়ে বলেছেন তারা বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করেন না। অথচ বিএনপি দিনে তারুণ্যের সমাবেশ, হাঁটা কর্মসূচি, বসা কর্মসূচি, মাঝে-মধ্যে দৌড় কর্মসূচি দেয়, আবার রাত-বিরাতে রুমিন ফারহানা, শ্যামা ওবায়েদ, নিপুণ রায়সহ তাদের মহিলা নেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে ধরনা দেন, ওনাদের পায়ে ধরেন। এখন তারা বুঝতে পেরেছেন ধরনা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। মার্কিন প্রতিনিধি দল এসেও তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কিছু বলেনি। তারা বুঝতে পেরেছেন, তাদের এ তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি বিদেশিরাও প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মানসে সারাদেশে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। কদিন আগে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। পরশুদিন খুলনা শহরেও তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। আমি দেখলাম সেখানে সব ষাটোর্ধ মানুষ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারুণ্যের ডেফিনেশনটা কী একটু যদি বলতেন, তাহলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আজকেও তারা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। আওয়ামী লীগ গণমানুষ থেকে গড়ে ওঠা রাজপথের দল। আমাদের নেতাকর্মীরা সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে উজান ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার দল। আমরা রাজপথে আছি, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকব এবং শেখ হাসিনাকে টানা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে তারপর আমরা ঘরে ফিরে যাব।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদেরও বৈঠক হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও বৈঠক হয়েছে। তারা স্পষ্টত বলেছে যে, আমরা বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন কানুন মেনেই এখানে যাতে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয় সেটিই চাই। তারা তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার এসব কোনো কিছুর কথা বলেনি। দেশ চলবে আমাদের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী। কারো প্রেসক্রিপশনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ চলবে না। উনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, যার ধমনি-শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্ত স্রোত প্রবাহমান।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয় তখন পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে দিয়ে এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েও ফোন করিয়েছিলেন এই বিচার বন্ধ করার জন্য। কিন্তু বিচার বন্ধ হয়নি, ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনা সেগুলোর তোয়াক্কা করেননি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি চেষ্টা করবে গণ্ডগোল লাগানোর জন্য। সেই সুযোগ আমরা তাদের দেব না। তবে কেউ রক্তচক্ষু দেখালে আওয়ামী লীগ জানে কী করতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন। বিএনপির মির্জা ফখরুল সাহেব কয়দিন পরপর চট্টগ্রামে আসছেন। এখানে এসে লাভ নেই। যদি বাড়াবাড়ি করেন আপনাদের আন্দোলন বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা ১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উপর কালিমা লেপনের উদ্দেশ্যে একজন প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেটি নিয়েও অনেকের কত মাতামাতি। যারা করেছে তারা দুষ্কৃতিকারী। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটি করেছে। এটির আমরা নিন্দা জানাই। তবে অনেকে ঘুরে ঘুরে নির্বাচন করেন নির্বাচিত হওয়ার জন্য নয়। নির্বাচন করেন প্রচার পাওয়া এবং ঘটনাকে প্রমোট করার জন্য। যাতে আরও বেশি প্রচার পাওয়া যায়। সেটিও মাথায় রাখতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংসদ নোমান আল মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। সমাবেশ শেষে রেলস্টেশন চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।