Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না : নাহিদ ইসলাম

যশোর জেলা প্রতিনিধি : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের বিচার চাই, আবার সংস্কারও চাই। বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। যারা বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচন ও ভোটাধিকারের পক্ষে সত্যিকারের লড়াই করে যাচ্ছে এনসিপির নেতৃত্ব।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে যশোরের জিরো পয়েন্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আমরা চাই পুলিশ নিরপেক্ষভাবে জনগণের পক্ষে কাজ করবে। পুলিশ কোনও দলের অনুসারী হবে না। সরকারি দলের অনুসারীও হবে না। আমলাতন্ত্র প্রশাসন কোন দলের অনুসারী হবে না। কোনও সরকারি দলের নেতার উপর নির্ভর করবে না। তাদের মেধা যোগ্যতা অনুযায়ী প্রমোশন নির্ভর করবে।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল তাদের লাখ লাখ, কোটি কর্মীর কথা বলে। আমাদের এসব কথা শোনাবেন না। ফ্যাসিবাদীদের আমলে আমরা দেখেছি, আপনাদের কত মানুষ ছিল। এনসিপিকে লোকের ভয় দেখাবেন না। যদি ইনসাফের সঙ্গে থাকেন, ন্যায়ের পক্ষে থাকেন তাহলে একজন মানুষ এক লাখ মানুষের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে যায়।

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, যারা দুর্নীতি করবে এনসিপি তাদের ছাড় দেবে না। যদি এনসিপির নেতাকর্মীরাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয় দল তাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামবে। আমাদের আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাজির বিরুদ্ধে।

সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে। সেনাবাহিনীর অফিসাররা গুমের সাথে জড়িত হোক আমরা তা চাই না। এই কলঙ্ক দূর করতে চাই।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক দলীয়করণ করতে না দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক দলীয়করণ করতে দেবো না। পুলিশ প্রশাসন নির্দলীয় থাকবে। আমরা চাই না সেনাবাহিনীর কোনও অফিসার গুমের সঙ্গে জড়িত থাকুক।

নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশনকে সব থেকে বেশি দলীয়করণ করা হয়েছে। অতএব, এই নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল সেটি করতে দিতে চায় না। আমরা বাংলাদেশে আর কোনও ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দেবো না। আমরা ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

যশোর জেলার দীর্ঘদিনের সমস্যা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, যশোরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিট পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। সেখানে আইসিইউ চালু হয়নি। যশোরের মানুষকে চিকিৎসার জন্য খুলনায় যেতে হয়। আমরা চাই যশোরের মানুষ যশোরেই সেবা পাবে, যশোরেই শিক্ষা পাবে। ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কথা আমরা জানি। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এই সমস্যা দূর করার দায়িত্ব এনসিপির নেতৃবৃন্দকে নিতে হবে। বেনাপোলের দুর্নীতি, মাদক কারবারের সবারই জানা। দুর্নীতি মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি।

পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আকতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা শাপলা মার্কার কথা বলেছি, আর তারা জাতীয় ফুলের উছিলায় ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি, আর তারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের কথা বলছে। এখনও শেখ হাসিনার পুলিশ বহাল আছে, শেখ হাসিনার প্রশাসন বহাল আছে, আর তারা শুধু নির্বাচন চায়।

তিনি আরও বলেন, হাসিনা ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বন্ধক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারাজীবন মনে রাখবে। আমরা বলছি, আমরাও মনে রেখেছি। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, কিন্তু তাদের দাদাগিরি মেনে নেবো না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, এখানে কোনও বিদেশির দাদাগিরি চলবে না।

নতুন বন্দোবস্তের কথা উল্লেখ করে আকতার হোসেন বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন বন্দোবস্ত কার্যকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের বর্তমান লড়াই ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে মুক্তির লড়াই।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েলসহ স্থানীয় নেতারা।

এর আগে সকালে দিনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে যশোর শহরের রেল রোডে চার খাম্বার মোড়ে একটি অভিজাত হোটেলে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির নেতারা। পরে স্থানীয় মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে পদযাত্রা করেন তারা। পদযাত্রাটি মুজিব সড়ক হয়ে পথসভাস্থলে এসে শেষ হয়। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। পথসভা শেষে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন এনসিপির নেতারা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজের সুফল পাচ্ছে না সাত গ্রামের মানুষ

বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না : নাহিদ ইসলাম

প্রকাশের সময় : ০৮:৩১:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

যশোর জেলা প্রতিনিধি : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের বিচার চাই, আবার সংস্কারও চাই। বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। যারা বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচন ও ভোটাধিকারের পক্ষে সত্যিকারের লড়াই করে যাচ্ছে এনসিপির নেতৃত্ব।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে যশোরের জিরো পয়েন্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আমরা চাই পুলিশ নিরপেক্ষভাবে জনগণের পক্ষে কাজ করবে। পুলিশ কোনও দলের অনুসারী হবে না। সরকারি দলের অনুসারীও হবে না। আমলাতন্ত্র প্রশাসন কোন দলের অনুসারী হবে না। কোনও সরকারি দলের নেতার উপর নির্ভর করবে না। তাদের মেধা যোগ্যতা অনুযায়ী প্রমোশন নির্ভর করবে।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল তাদের লাখ লাখ, কোটি কর্মীর কথা বলে। আমাদের এসব কথা শোনাবেন না। ফ্যাসিবাদীদের আমলে আমরা দেখেছি, আপনাদের কত মানুষ ছিল। এনসিপিকে লোকের ভয় দেখাবেন না। যদি ইনসাফের সঙ্গে থাকেন, ন্যায়ের পক্ষে থাকেন তাহলে একজন মানুষ এক লাখ মানুষের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে যায়।

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, যারা দুর্নীতি করবে এনসিপি তাদের ছাড় দেবে না। যদি এনসিপির নেতাকর্মীরাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয় দল তাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামবে। আমাদের আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাজির বিরুদ্ধে।

সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে। সেনাবাহিনীর অফিসাররা গুমের সাথে জড়িত হোক আমরা তা চাই না। এই কলঙ্ক দূর করতে চাই।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক দলীয়করণ করতে না দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক দলীয়করণ করতে দেবো না। পুলিশ প্রশাসন নির্দলীয় থাকবে। আমরা চাই না সেনাবাহিনীর কোনও অফিসার গুমের সঙ্গে জড়িত থাকুক।

নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশনকে সব থেকে বেশি দলীয়করণ করা হয়েছে। অতএব, এই নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল সেটি করতে দিতে চায় না। আমরা বাংলাদেশে আর কোনও ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দেবো না। আমরা ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

যশোর জেলার দীর্ঘদিনের সমস্যা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, যশোরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিট পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। সেখানে আইসিইউ চালু হয়নি। যশোরের মানুষকে চিকিৎসার জন্য খুলনায় যেতে হয়। আমরা চাই যশোরের মানুষ যশোরেই সেবা পাবে, যশোরেই শিক্ষা পাবে। ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কথা আমরা জানি। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এই সমস্যা দূর করার দায়িত্ব এনসিপির নেতৃবৃন্দকে নিতে হবে। বেনাপোলের দুর্নীতি, মাদক কারবারের সবারই জানা। দুর্নীতি মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি।

পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আকতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা শাপলা মার্কার কথা বলেছি, আর তারা জাতীয় ফুলের উছিলায় ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি, আর তারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের কথা বলছে। এখনও শেখ হাসিনার পুলিশ বহাল আছে, শেখ হাসিনার প্রশাসন বহাল আছে, আর তারা শুধু নির্বাচন চায়।

তিনি আরও বলেন, হাসিনা ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বন্ধক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারাজীবন মনে রাখবে। আমরা বলছি, আমরাও মনে রেখেছি। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, কিন্তু তাদের দাদাগিরি মেনে নেবো না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, এখানে কোনও বিদেশির দাদাগিরি চলবে না।

নতুন বন্দোবস্তের কথা উল্লেখ করে আকতার হোসেন বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন বন্দোবস্ত কার্যকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের বর্তমান লড়াই ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে মুক্তির লড়াই।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েলসহ স্থানীয় নেতারা।

এর আগে সকালে দিনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে যশোর শহরের রেল রোডে চার খাম্বার মোড়ে একটি অভিজাত হোটেলে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির নেতারা। পরে স্থানীয় মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে পদযাত্রা করেন তারা। পদযাত্রাটি মুজিব সড়ক হয়ে পথসভাস্থলে এসে শেষ হয়। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। পথসভা শেষে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন এনসিপির নেতারা।