নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিগত দিনে গুলশান ও মগবাজারে হাজিরা দিলে মনোনয়ন নিশ্চিত ছিল। আমরা সে প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি না। আমাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জনগণের কাতারে হাজিরা দিয়েছেন। আমরা চাষাভুষা, কৃষকের সন্তান ও রিকশাচালককেও মনোনয়ন দিয়েছি। শাপলা কলিকে বিজয়ী করতে জনগণ অপেক্ষায় আছেন। দেশকে জামায়াত বা বিএনপি বানানোর সুযোগ নেই। সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের সমাপনী দিনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপির মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের আহ্বানে নানা পেশার মানুষজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তারা শাপলা কলির ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন। আমরা প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলেছি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের আমরা কোনোভাবেই মনোনয়ন মনোনয়ন দিবো না।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আগামী কয়েকদিনে মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ নতুন অ্যালায়েন্স দেখতে পারবে। অ্যালায়েন্স চাঁদাবাজের বিপক্ষে, সন্ত্রাসের বিপক্ষে, দুর্নীতির বিপক্ষে।
তিনি বলেন, যাদের বংশ পরিচয় চাঁদাবাজি তারা আবার আমাদের বংশ সম্পর্কে জানতে চায়। তাদের উদ্দেশে বলছি, আমাদের বংশপরিচয় আমরা বাংলাদেশের সংস্কারপন্থী।
যারা প্রশাসনকে নিজের করে নিতে চায় তাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, জেনোসাইডের অভিশাপ আপনারা এড়াইতে পারবেননা। ৭১ সালে যেসকল দল জেনোসাইডের সঙ্গে যুক্ত ছিল আমরা তাদেরও বিচার চাচ্ছি। আমরা একপাক্ষিক হতে পারবো না।
ভবিষ্যত রাষ্ট্র প্রত্যাশা সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের রাষ্ট্র এমন হবে, যেখানে হিন্দু, মওদুদী, জামায়াত ইসলামী, বিএনপি, এনসিপি প্রত্যেকে তাদের অধিকার ভোগ করতে পারবে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস থেকে বেরিয়ে আমরা নতুন রাষ্ট্র গঠন করার চেষ্টা করছি।
নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন একদিকে হেলে পড়েছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করছি। জামায়াতের মোটর শোডাউন বন্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। যদিও তারা ইতোমধ্যে একাধিক শোডাউন করে ফেলেছে।’ ভূমিকম্পে সরকারের তৎপরতার প্রশংসা করে এসব ক্ষেত্রে সরকারকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।’ কুমিল্লার দেবীদ্বারে বিএনপির এক প্রার্থী হাসনাত আবদুল্লাহর বংশ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এর তীব্র নিয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বংশ পরিচয় কারও কাছে মাথানত করিনি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচন কমিশন একদিকে হেলে গিয়েছে। তারা একটি বিশেষ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও চাঁদাবাজির বিপক্ষে আমাদের অবস্থান। আমরা বিএনপি বা জামায়াত কাউকে ভয় পাই না। জনগণের শক্তি নিয়ে এগোতে চাই।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘২৪ এর গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনার বিচার হলে একাত্তরের গণহত্যারও বিচার করতে হবে।’
তিনি জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জনগণের এলায়েন্স হবে। যেখানে এনসিপির বাইরেও কয়েকটি দল থাকবে।
নাম উল্লেখ না করে জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে একটি দলের অধীনে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা প্রশ্ন রাখব, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের দলীয়ভাবে বিচার চেয়ে গণমিছিল করেছি। একাত্তর সালে কি বাংলাদেশে গণহত্যা হয় নাই? গণহত্যার জন্য তো অনেক পক্ষ দায়ী ছিল। গণহত্যার অভিশাপকে তো আপনি এড়াতে পারবেন না।’
চব্বিশের মতো একাত্তরের গণহত্যারও বিচার চান জানিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা চব্বিশের গণহত্যার জন্য যেমন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চাচ্ছি। একাত্তর সালে যে সকল দল গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, আমরা তাদেরও বিচার দাবি করছি। আমরা এক পাক্ষিক হতে পারব না।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জাতীয় পার্টির কিছু লোক, যারা ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছে, তারা আবার ডাল-পালা মেলতে শুরু করেছে। আমরা শঙ্কা করছি, আগামী নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং আওয়ামী লীগের যেই অর্থনৈতিক শক্তিগুলো ছিল, তারা জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে দ্রুততম সময়ে জাতীয় পার্টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
জাতীয় পার্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘জাতীয় পার্টি হচ্ছে ভারতের একটা এক্সটেনশন (বর্ধিতাংশ), আওয়ামী লীগের একটা এক্সটেনশন। জাতীয় পার্টির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অবশ্যই দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হলে এই দায় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। ’
এ সময় হাসনাত বলেন, ‘হাসিনার ফাঁসি হওয়ার পর আমরা বিবেচনা করব, আওয়ামী লীগ আসবে কি আসবে না, নির্বাচন করবে কি করবে না। ফাঁসি হওয়ার পর সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে হাসনাত বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক দল আছে, যারা সারা দিন গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে, কিন্তু নিজেদের দলে কোনো কাউন্সিল নাই। নিজেদের দলে কাউন্সিল কবে হইসে মনে করতে পারে না। দলীয় স্বৈরতন্ত্র রেখে জাতীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। দলে পরিবারতন্ত্র রেখে জাতীয় গণতন্ত্র কায়েম করবে, এগুলো এক ধরনের হিপোক্রেসি।’
নির্বাচনের আগে প্রশাসনে ভাগাভাগি চলছে বলে অভিযোগ করেন হাসনাত। তিনি বলেন, ‘ডিসি, এসপি এগুলো ভাগাভাগি চলছে এখন। মধ্যরাতে ডিসি পরিবর্তন হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা জানান, রবি ও সোমবার দুদিন ব্যাপী এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ কিছু সাক্ষাৎকার এখনো বাকি রয়েছে। সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নেওয়া হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















