লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, এর মূল কারিগরই ছিলেন ছাত্র ও শিক্ষকেরা। বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষকদের ন্যায়সংগত সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হবে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমজিটিএ) লক্ষ্মীপুর জেলার তৃতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ব্যানারে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ্যানি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে শিক্ষক, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ পেশাজীবী মানুষ শেখ হাসিনার নির্যাতনের শিকার ছিলেন। গণহত্যার দায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরাচার হাসিনা। এই দেশের মানুষ খুনি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে না। তাঁর বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। আর এই হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের হাত থেকে উদ্ধারে প্রাণ দিয়েছে এ দেশের ছাত্র-জনতা। তাই গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যিনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি তো রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ছিলেন। তার সম্মানটাতো তিনি নিতে পারেননি। তিনি গণশত্রু ও জনশত্রুতে পরিণত হয়েছে। কারণ তিনি বেগম খালেদা জিয়া ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে সম্মান দিতে পারেননি। তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের সাজা দিয়েছেন। যার কারণে তিনি বাধ্য হয়ে এ দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়ে তিনি তার বাবাকে সম্মান দিতে পারেনি। দলকে সম্মান দিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষকেও সম্মান দিতে পারেনি বলেই তিনি গণশত্রুতে পরিণত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
এ্যানি বলেন, এখন দেশে দ্বিতীয় বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন আশা-আকঙ্ক্ষা, নতুন ভবিষ্যৎ ও নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি। নতুন বাংলাদেশের কারিগর হলেন এ শিক্ষক ও ছাত্ররা। আমরা সবাই নতুন বাংলাদেশ গঠনে উঠে পড়ে লেগেছি। এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আন্দোলনে সংগ্রামে শহীদদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ১৫ বছর চেষ্টা করে আমরা আন্দোলন থেকে বের হতে পারিনি। ছাত্ররা যখন আমাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একত্র হয়েছেন, এ মেধাবীরা। তাদের দিয়েই আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
এ্যানি আরও বলেন, সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে। জনপ্রতিনিধিদের ছাড়া ডিসি সাহেবরা বিপদে পড়ে যাবেন। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের ভীতকে শক্তিশালী করে জনগণের সরকারি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা ও সংগ্রাম। যতদিন পর্যন্ত আমরা তা নিশ্চিত করতে পারবো না, ততদিন আমরা দুর্বল জাতি হিসেবে থাকবো। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বত্মক সহযোগিতা করছি। কোনোভাবেই এ সরকারকে ফেল করতে দেওয়া যাবে না। এ সরকার ফেল করলে আমার আপনার বিপদ আছে। এ বিপদ থেকে বের হতে আমাদের এক ও ঐকবদ্ধ থাকতে হবে।
সম্মেলেনে অতিথিদের কাছে বিএমজিটিএ নেতারা তাদের ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজিব কুমার সরকার। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সম্রাট খীসা।
বিএমজিটিএ লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক ছিলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হারুন অর রশিদ ও বিশেষ আলোচক ছিলেন মহাসচিব ফিরোজ আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, লক্ষ্মীপুর আলিয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ একেএম আব্দুল্লাহ ও ভবানীগঞ্জ কারামতিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহিম শামীম প্রমুখ।