নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি যেকোনো বিষয়ে রিপোর্ট করতে দৌড়ে রাষ্ট্রদূতদের বাসায় চলে যায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
শনিবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র এ নেতা বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখলে আজ দুঃখ হয়। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা অনেক সময় অনেক কথা বলছেন। সবচেয়ে অবাক হলাম বিএনপি নামক দলটি যেকোনো বিষয়ে কর্মসূচির করার পর দৌড়ে বিশেষ কোনো রাষ্ট্রদূতের অফিসে বা বাসায় যায় তাদের কাছে রিপোর্ট করার জন্য। এর মানে কী দাঁড়াল? তার মানে কি দাঁড়ায় বিএনপির এসব কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে হচ্ছে?
বিরোধী দলের মতপ্রকাশে আওয়ামী লীগ সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, কি চান আপনারা? কার পক্ষে, কোন খেলায় নেমেছেন? আপনাদের বক্তব্যগুলো মনে হয় সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি ছাড়া আর কিছু নয়। জাতি আপনাদের এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে।
হানিফ বলেন, বিএনপি কয়েকদিন আগে সমাবেশ করার পর ঢাকার প্রবেশমুখ অবরোধ ঘোষণা দিল। তারা অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করল। এরকম কর্মসূচি কোন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আছে। আপনি রাস্তা বন্ধ করে দিলেন, এটা তো কোনো কর্মসূচি হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তখন পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা করে আহত করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেটার জন্য আজ মানবাধিকার সংস্থা থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে।
পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজ কার পক্ষে ওকালতি করছেন? যে তারেক রহমানের বিপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর জেমস মরিয়াটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, তারেক রহমান অত্যন্ত ভয়ংকর, দুর্র্ধষ, দুর্নীতি পরায়ণ সন্ত্রাসী এবং সহিংসতার প্রতীক। এটা আমাদের কথা নয়। এই কথা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেই সময়কার রাষ্ট্রদূত। আজ সেই ব্যক্তি এত ভালো হয়ে গেল যে, তাদের রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে সরকার উৎখাত করার খেলায় মত্ত হতে হবে।
বিদেশিদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কয়দিন আগেও কানাডার ফেডারেল আদালত পঞ্চমবারের মতো বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এরকম একটি দল নিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবেন না। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে মদদ দেবেন না, এই অনুরোধ থাকবে।
হানিফ বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে শেখ কামালের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। শেখ কামাল একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ, সাহিত্যমনা, নাট্যশিল্পী ছিলেন। যুবসমাজকে এগিয়ে নিতে ক্রীড়াঙ্গনে তার ভূমিকা অপরিসীম আর তারেক রহমান হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মগ্ন ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল সম্পর্কে হানিফ বলেন, শেখ কামাল ছিলেন তারুণ্যের অহংকার, আমাদের যুব সমাজের অহংকার। তিনি শুধু একজন ছাত্রনেতা নয়, লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদও ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তার ছিল বহুমাত্রিক প্রতিভা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র, ভদ্র ও সদালাপী। আমাদের দুর্ভাগ্য শেখ কামাল ২৬ বছর বয়সে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক হিসেবে শেখ কামালের নাম বারবার চলে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ যে আবাহনী ক্রীড়াচক্র, এটা শেখ কামালের হাতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। রাষ্ট্রপতির পুত্র হয়েও শেখ কামাল অর্থবিত্তের পেছনে কখনো ছোটেননি। তিনি নিরহংকার ও নির্লোভ মানুষ ছিলেন।