চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে দেশের গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার পথে হাঁটছে। সেটি এই দেশের মানুষ হতে দেবে না। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং কেউ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালালে দেশের মানুষ যেমন প্রতিহত করবে, একইভাবে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া কখনো বিদেশিরাও সমর্থন করে না।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে একুশে পত্রিকার সদ্যপ্রয়াত সম্পাদক আজাদ তালুকদারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল ও শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী। শোকসভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আল্টিমেটাম তো বিএনপি গত ১৩-১৪ বছরে বহুবার দিয়েছে। গত ডিসেম্বরেও তাদের আল্টিমেটাম ছিল। তারপর খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে পাঠানোর আল্টিমেটামও ছিল। এখন ১৮ তারিখ আবার দিয়েছে। এই বছরের ১৮ তারিখ নাকি আগামী বছরের ১৮ তারিখ, নাকি তারও পরের বছরের ১৮ তারিখ; সেটিও অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন। বিএনপির আল্টিমেটাম ফাঁকা বুলি ছাড়া অন্য কোনও কিছু নয়।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ের সামনে রোডমার্চ শেষে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেখানে যে সংখ্যক মানুষ হয়েছে, চট্টগ্রামের লালদিঘির পাড়ে অনেক সময় যখন পাগল নাচে তখনও এর কাছাকাছি মানুষ হয়। সুতরাং তাদের কর্মসূচিতে লোক সমাগম সেভাবে হয়নি এবং তারা প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আশা করেছিল বিদেশিরা তাদেরকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, সেই আশাও বুমেরাং হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন না, এতেই প্রমাণিত হয় তারা নির্বাচনকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ তাদের কর্মসূচি ও সমাবেশগুলোতে মানুষ হচ্ছে না। ফলে তারা বুঝতে পেরেছেন নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা নাই, তাই নির্বাচনকে ভয় পাচ্ছেন। এজন্য নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পথে তারা হাঁটছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে বিএনপি বলেছে, এই অক্টোবর হলো তাদের বিজয়ের মাস, সরকারকে ১৮ তারিখের মধ্যে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছে। এরকম আলটিমেটাম বিএনপি গত ১৩-১৪ বছরে বহুবার দিয়েছে। গত ডিসেম্বরেও তাদের আলটিমেটাম ছিল, তারপর খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশ পাঠানোর আলটিমেটামও ছিল। এখন ১৮ তারিখ আবার আলটিমেটাম দিয়েছে। এই বছরের ১৮ তারিখ নাকি আগামী বছরের ১৮ তারিখ, নাকি তারও পরের বছরের ১৮ তারিখ সেটিও অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন। বিএনপির আলটিমেটাম ফাঁকা বুলি ছাড়া অন্যকোনো কিছু নয়।
এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। জি-২০ সম্মেলনে কীভাবে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে, জো বাইডেনসহ অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। এতে বিএনপি হতাশ হয়ে পড়েছে।
এর আগে শোকসভায় প্রয়াত একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি যেমন অকুতোভয় সাংবাদিক ছিলেন, একইসঙ্গে একজন লড়াকু মানুষ ছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি কিন্তু ক্ষান্ত হননি, দমে যাননি। ক্যানসারের সঙ্গে অবিরত লড়াই করেছেন। তিনি জানতেন ধীরে ধীরে তার জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে। মৃত্যুর কদিন আগে আমি যখন হাসপাতালে তাকে দেখতে যাই, তখন তিনি যেভাবে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং মৃত্যুর পর কী করতে হবে দুয়েকটি কথাও আমাকে বলেছেন। একটা মানুষ জানেন তিনি মৃত্যুপথযাত্রী, এরপরও অবিচল। সেই চারিত্রিক দৃঢ়তা আমি তার মধ্যে দেখেছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে মানুষের গড় আয়ু হচ্ছে প্রায় ৭৩ বছর। একজন মেধাবী সাংবাদিক এভাবে অল্পবয়সে চলে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। চট্টগ্রামের অনেক বিষয় অনেকের চোখ এড়ালেও তার চোখ এড়ায়নি। অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধেও সঠিক রিপোর্টটি করেছেন, যেটি কেউ সাহস করেননি। অসংখ্য পত্রিকার ভিড়ে একটা পত্রিকা দাঁড় করানো খুব সহজ কাজ নয়। আবার সেটি পাঠকপ্রিয়তা পাওয়া আরও কঠিন কাজ। কিন্তু তিনি নিজে একা লড়াই করে কোনও বড় গ্রুপের কাছে বিক্রি না হয়ে একুশে পত্রিকা দাঁড় করিয়েছেন।
একুশে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নজরুল কবির দীপু’র সভাপতিত্বে শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ওবায়দুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কাজী মহসিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুবেল খান, সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, ক্রীড়া সম্পাদক সোহেল সরওয়ার প্রমুখ।