নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি বাংলাদেশের বার বার ক্ষতি করেছে, আর তা মেরামত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দলটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষতি করতে চাইছে। এমন অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছেন শেখ হাসিনা। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়াতে আছি। আর বাধা দিচ্ছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিপরীত পথে হাঁটছে বিএনপি। তাই ভিসানীতির কারণে তারাই চাপে রয়েছে। বিএনপির বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আমাদের শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এরপরেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ এবং টকশোর কথা শুনে মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ খাবার পাচ্ছে না। কিন্তু খাদ্যের অভাবে কেউ মারা গেছে এমন কোনো তথ্য নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যের মজুত ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যারা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলেন, তারা আশপাশের দেশগুলোতে খোঁজ নিলেই আসল অবস্থা জানতে পারবেন। প্রতিবেশী ভারত একটু ভালো থাকলেও পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থা খুবই খারাপ।
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে বিএনপি সমালোচনা করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। আজ আমরা চ্যালেঞ্জিং টাইম পার করছি। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। বিশ্বের দেশে দেশে আজ সংকট, হানাহানি ও যুদ্ধ। এতে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ অবস্থায় জ্বালানি সংকট দূর করতে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা আনতে প্রধানমন্ত্রী দেশে দেশে ছুটে চলেছেন।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, এসবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্প সারা দুনিয়া থেকেই আমরা শুনছি। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আমি ও আমার পরিবার শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করি। তিনি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা’।
তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জ এবং খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর নাটক করেছে। এসবের মধ্য দিয়ে তারা ভুল বার্তা দিচ্ছে। তাই নেতাকর্মীদের বলব, আপনারা শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। বলতে চাই, আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করব না। তবে কোনো হামলা হলে ছাড় দেয়া হবে না।
ভিসানীতি নিয়ে সরকার কোনোভাবে চিন্তিত নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নামের দলটি বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী তার মেরামত করেছেন। তারা আজ বাংলাদেশের মানুষকে আন্দোলনে টানতে পারেনি। যে কারণে বিদেশিদের সহায়তা চেয়ে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এসেছে। তাদের কারণে অবশেষে এলো ভিসানীতি। তবে এতে সরকারের কিছুই হয়নি। এতে সরকারের কোনো সংকট নেই, মাথাব্যথাও নেই।
কাদের বলেন, ভিসানীতি নিয়ে নাটক সাজানো হচ্ছে, বলা হচ্ছে বাংলাদেশে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন করার জন্য। আমরা তো এই পলিসির মধ্যেই আছি, আমরা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আইন করে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছেন শেখ হাসিনা, ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনে আমরা হেরে গেলেও সেটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়েছে। এভাবেই আমরা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে যেতে চাই।
কাদের বলেন, দেশের সংবিধানে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপার উল্লেখ নেই, তাই এবিষয়ে কথা বললে বিএনপি ভিসানীতিতে আক্রান্ত হবে। এখন যারা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের ব্যাপারে আমেরিকার পদক্ষেপ কী হবে, সেটা দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগ অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, কিন্তু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি।
বিএনপি তাদের আন্দোলনে জনগণকে টানতে পারেনি। এর জন্য বাধ্য হয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ দিয়ে নিষেধাজ্ঞা আনছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের প্রভু নেই, বন্ধু আছে। বঙ্গবন্ধুরও বিদেশে প্রভু ছিল না, বন্ধু ছিল। প্রধানমন্ত্রীরও বিদেশে প্রভু নেই, বন্ধু আছে। একাত্তরেও আমরা বন্ধু পেয়েছিলাম, এখনও পাবো। প্রধানমন্ত্রী কারো বাধা মানেন না। তিনি তার কাজ করছেন, জনগণের জন্য কাজ করছেন।
নেতাকর্মীদের শান্ত থেকে সব ধরনের অপরাজনীতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা আক্রমণ করবো না। কিন্তু কেউ আক্রমণ করলে তাকে ছেড়েও দেবো না। বিএনপি বলে নির্বাচন হতে দেবে না। আমরাও দেখবো তারা কীভাবে বাধা দেয়। জনগণের ভোটেই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসবে। ভোটে বাধা দিতে আসেন, ভালো করে বুঝিয়ে দেবো।
রাজনৈতিক কাজের বাইরে আমাদের সামাজিক কিছু দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করে কাদের বলেন, আমাদের কিছু সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব থেকে আমাদের কর্মীরা সব সময় কাজ করেছেন। সম্প্রতি কৃষকের ধান কাটার মতো উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনসহ যেকোনো দুর্যোগে তারা কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী ও মির্জা আজমসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।