নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি-জামায়াত আবারও আগুন-সন্ত্রাস শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৩০ জুলাই) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পঞ্চম ধাপে দেশের ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন । গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে কিন্তু ধর্মীয় কাজে কোন আন্তরিকতা ছিল না। যা ছিল তা শুধু দেখানো। এরা সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাস করে। গতকাল দেখেছেন- কতগুলো বাস পুড়িয়েছে। চলন্ত বাস, ট্রেনে তারা আগুন দিয়েছে। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়েছে, সবখানে আগুন দিয়েছে। কোন মানুষ এভাবে পেট্রোল বোমা দিয়ে, আগুন দিয়ে, চলন্ত বাস, গাড়ি, ট্রেন, লঞ্চ, অফিস, স্কুল কোন কিছু তারা বাদ দেয়নি। ২০১৩/১৪-তে এগুলো যেমন পুড়িয়েছে, গতকালও সেই ভয়ংকর অগ্নিসন্ত্রাসের রূপ আমরা আবার দেখলাম। বাংলাদেশে যেন এই ধরনের সন্ত্রাসীরা ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সকলের কাছে আমার আহ্বান থাকলো।
কেউ যেন দেশের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ভয়ংকর অগ্নিসন্ত্রাসের রূপ আবারও দেখলো দেশবাসী। বাংলাদেশে যেন এই ধরনের সন্ত্রাসীরা ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সকলের কাছে আমার আহ্বান থাকলো।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়ে দেশ গড়েছেন, অন্যদিকে ইসলাম প্রচারের জন্য টঙ্গীতে ইজতেমার জায়গা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নির্মাণ করেছেন। কাকরাইলে মসজিদের জায়গা দিয়েছিলেন, অল্প খরচে বাংলাদেশের মানুষকে হজে পাঠানোর জন্য জাহাজের ব্যবস্থা করেছিলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ৯৬ সালে আমি যখন ক্ষমতায় আসি, তখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ভবন ছিল না। আমি ১০তলা ভবন করে দিয়েছি। সব জেলায় স্থায়ী অফিস ছিল না, মাত্র ৩৪ জেলায় অফিস ছিল। আমি সরকারে আসার পর প্রতিটি জেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের জন্য অফিসের ব্যবস্থা করে দিই ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়ে দেশ গড়েছেন, অন্যদিকে ইসলাম প্রচারের জন্য টঙ্গীতে ইজতেমার জায়গা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নির্মাণ করেছেন। অল্প খরচে বাংলাদেশের মানুষকে হজে পাঠানোর জন্য জাহাজের ব্যবস্থা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মাদরাসা বোর্ডের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে জাতির পিতার আমলেই।
তিনি বলেন, আমি যখন বায়তুল মোকাররম মসজিদকে উন্নত করার জন্য প্রকল্প নিলাম, কাজ শুরু করলাম, সেখানে আমাদের মহিলাদের নামাজের সুব্যবস্থা, পুরুষদের নামাজের সুব্যবস্থা, অজুখানা থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা, মিনার তৈরি করে দিচ্ছি, তখন ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এই মসজিদের কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা যতটুকু কাজ করেছিলাম ততটুকু পড়ে থাকে। এটি অত্যন্ত দুঃখদায়ক একটা ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আট বছর পর যখন আমরা ক্ষমতায় এসে বায়তুল মোকাররম মসজিদকে আবার পুনর্র্নিমাণ করে উদ্বোধন করি, এখানে আমাদেরকে সৌদি সরকারও সহায়তা করে। শুধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ না, ক্যান্টনমেন্টে একটি বড় মসজিদের কাজ শুরু করছিলাম, তখন খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল এত বড় মসজিদে কে যাবে নামাজ পড়তে? মিনারগুলো তৈরি করতে দেয়নি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মসজিদটা নির্মাণ করি। ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে কিন্তু ধর্মীয় কাজে তাদের কোনো আন্তরিকতা ছিল না। যা ছিল শুধু দেখানো।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের হজ ব্যবস্থাপনা অত্যান্ত চমৎকারভাবে করে দিচ্ছি। আরও সুবিধা আমরা করে দিচ্ছি। যেমন- মেট্রোরেল তৈরি হচ্ছে। সারা বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা রেল যোগাযোগ বাড়াচ্ছি। আমাদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমাদের রাস্তাগুলো আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে আন্ডারপাস করে দিচ্ছি, যাতে যাত্রীরা সহজে সেখান থেকে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা আরও এগিয়ে যাক। ২০১০ সালে আমি ক্ষমতায় এসে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছিলাম। যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ আমরা প্রণয়ন করেছি।
মুসল্লি, ইমাম এবং মোয়াজ্জিনদের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম হয়। এগুলো থেকে মানুষ যেন বিরত থাকে সেজন্য আপনাদের খুতবায় সচেতন করবেন। যেমন বাল্যবিবাহ রোধ করা, শিক্ষার প্রতি যেন সবাই আন্তরিক হয়, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কারো ছেলে-মেয়ে যেন সম্পৃক্ত না হয়। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদি কার্যক্রম করে ইসলামের সুনাম নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, মুষ্টিমেয় কয়েকটি মানুষের জন্য আমাদের পবিত্র ধর্ম বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেটা যেন না হয়। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস আমাদের জিরো টলারেন্স, কোনোভাবে আমরা তা সহ্য করব না। এই পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে না।
ইসলামের সঠিক বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তার অংশ হিসেবে আজ রোববার পঞ্চম পর্বে এ মডেল মসজিদগুলো উদ্বোধন করা হয়।
মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ ওযু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া মসজিদে হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা ও ইসলামিক কনফারেন্স রুম থাকবে।
সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং ইসলামী দাওয়াত, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদের সাথে দেশী-বিদেশী অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধাও থাকবে এই মসজিদে।
ইতোমধ্যে, ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ১ম পর্যায়, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ২য় পর্যায় এবং ২০২৩ সালের ১৬ মার্চে ৩য় পর্যায় এবং ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল ৪র্থ পর্যায় ৫০টি করে মোট দুইশত টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
পঞ্চম ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল হামিদ জমাদ্দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলা ও খুলনা জেলার ফুলতালা উপজেলা মডেল মসজিদ প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।