নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এখন চূড়ান্ত সন্ত্রাসী দলে রূপান্তরিত হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলে নেই। আমরা এ সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনে আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। তারা ভেবেছে, একের পর এক অবরোধ ডেকে দেশকে অস্থিতিশীল করবে। তারা দেখতে পাবে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, জনগণই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সরকারের কিছু করতে হবে না। আমরা জনগণের সঙ্গে থাকবো।
রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সামসময়িক বিষয়াদি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি চায়, দেশের সব কার্যক্রম ব্যহত হোক। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা অবরোধ দিচ্ছে। তবে যেভাবে তারা সবকিছু ব্যাহত করার চেষ্টা করছে, সেই অপচেষ্টা সফল হবে না। সব দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পরিপূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কারাগারে সরকার কোনো আলোচনা করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না। নৈরাজ্যের হুকুমদাতা, অর্থদাতা ও হোতা হিসেবে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।
বিএনপি বর্তমানে যা করছে, তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অংশ। এ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে আইনগতভাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জনগণ যে স্বাভাবিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মাঝখানে দুদিন বিরতি দিয়ে বিএনপি ও তাদের জোটের দলগুলো অবরোধ ডেকেছে। আগে কর্মসূচি ঘোষণা দিতে সংবাদ সম্মেলন করা হতো। এখন দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির কর্মসূচির ঘোষণার সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মসূচি ঘোষণার কোনো তফাত নেই। বিভিন্ন দেশে যেসব নিষিদ্ধ সংগঠন থাকে, তারা যে রকম কর্মসূচি ঘোষণা করে, সেই আদলে অর্থাৎ তালেবানি কায়দায় কর্মসূচি ঘোষণা করা শুরু করেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল না, তখন তারা যেভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করতো কিংবা ইসলামিক স্টেট যেভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করে, ঠিক একই কায়দায় অনলাইনে তারা এখন কর্মসূচি ঘোষণা শুরু করেছে। তাদের কর্মসূচি বলতে কার্যত অবরোধের নামে গাড়িঘোড়া, মানুষের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ করা। আমরা বহুবছর বিরোধী দলে ছিলাম, কলেজে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, ১৬ বছর বয়স থেকে। আমরা পিকেটিং করতাম, রাস্তায় বড়োজোর রিকশার পাম্প ছেড়ে দিতাম, মানুষকে বোঝাতাম, মিছিল করতাম—এর বেশি কিছু না। তাও পুলিশের লাঠিপেটা খেতাম।
অবরোধের নামে মানুষের সম্পদে হামলা চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারেন, কিন্তু বিএনপি সেটা করছে না। ইসরাইলি বাহিনীর হাত থেকে যেমন হাসপাতাল, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স রেহাই পাচ্ছে না, বিএনপির হাত থেকে কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। শিক্ষার্থী বহনকারী বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। যেমন ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় করছে। গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নির্মমতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত একটি কথাও বলেনি। সারা দুনিয়াতে প্রতিবাদ হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। লন্ডনে লাখো মানুষের সমাবেশ হচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমাবেশ হচ্ছে। অর্থাৎ বর্বরতার বিপক্ষে সমাবেশ হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত একটি শব্দও বলেনি। কারণ ইসরাইলি বাহিনীর অনুকরণে তারা মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিএনপি এখন চূড়ান্ত সন্ত্রাসী দলে রূপান্তরিত হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দল নয়। আমরা এই সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনে আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। তারা ভেবেছে, একের পর এক অবরোধ ডেকে দেশকে অস্থিতিশীল করবে। তারা দেখতে পাবে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, জনগণই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সরকারের কিছু করতে হবে না। আমরা জনগণের সঙ্গে থাকবো।
দেশে-বিদেশে বসে গুজব রটনানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা নানা ধরনের গুজবও রটাচ্ছে। দেশ ও বিদেশ থেকে। যারা গুজব রটাচ্ছে, তাদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে। কেউ কেউ ভেবেছে, বিদেশে বসে গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, যেখান থেকে বসে গুজব রটানো হচ্ছে, আমরা সেই দেশে বসে সেখানকার আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিদেশ থেকে যারা গুজব রটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটি আছে। এরআগেও বাংলাদেশি অভিবাসীরা গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে সেখান আইনে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের অনেককে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া জোরদার করা হবে। পাশাপাশি আমাদের মিশনও সেখানকার সরকারকে বিষয়টি অবহিত করবে।
১২ দেশে বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার হচ্ছে’ বলে একটি খবর ছাপা হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। এ বিষয়ে সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই খবরের কোনো সত্যতা নেই, ভিত্তিহীন। যে পত্রিকাটি সংবাদটি ছেপেছে, তাদের কাছে আমরা কৈফিয়ত তলব করবো।