নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বাংলায় আবার রক্ত ঝরাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকেই চায় না শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকুক। অনেকের ক্ষমতার দরকার নেই। শুধু শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হোক, এটাই তাদের রাজনীতি। বাংলাদেশের একটি দল এই রাজনীতি আজকে করছে।
বাঙালির জীবনে দুটি অর্জন, দুটি লেগাসি আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটি বঙ্গবন্ধু মুজিব স্বাধীনতার জনক, আরেকটি আমাদের মুক্তির, সংগ্রামের কান্ডারি শেখ হাসিনা। একটি লেগাসি স্বাধীনতার, আরেকটি মুক্তির। শেখ হাসিনার উত্তরাধিকারও বেঁচে থাকবে। এই দুটি অর্জনের ঠিকানা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। ঝড়ের বিরুদ্ধে, দুর্যোগের বিরুদ্ধে, অন্ধকারের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার নাম আওয়ামী লীগ।
বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আছি। এই মাটি আমাদের মাটি। এই মাটিতে আমাদের শিকড়। এখানেই আমাদের জন্ম। এই মাতৃভূমির মর্যাদা হচ্ছে পিতা বঙ্গবন্ধুর পতাকা। এর মর্যাদা আমরা যেকোনো মূল্যে, রক্ত দিয়ে হলেও রক্ষা করব। সেটাই আমাদের শপথ।
বিশ্বনেতাদের মুখে শেখ হাসিনার প্রশংসা তুলে ধরে তিনি বলেন, অথচ বাংলাদেশে আমরা তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করি, তাকে অসম্মান করি। তার অর্জনগুলোকে আমরা নিজেদের অর্জন মনে করি না। শেখ হাসিনা কি চিরদিন থাকবেন! তার পরে এই অর্জনগুলো তো বাঙালি জাতির। কেন তাকে ঘৃণা করো! কেন তাকে অপমান করো! তিনি এই মর্যাদা দেশের জন্য এনেছেন, এটা গোটা জাতির সম্পদ। কেন তাকে অপমান করি, সেটা আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাসের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি সেন্টমার্টিনেরও কথা বলেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেন্টমার্টিন অন্য একটা দেশ লিজ নিতে চায়। সত্য বলতে তিনি (শেখ হাসিনা) কখনও নত হন না, দ্বিধাগ্রস্ত হন না। মির্জা ফখরুল আজকে বলে—কৌশল! শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কৌশল, ক্ষমতার রাজনীতি করেন না। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেন না, বিবেক ছাড়া কাউকে ভয় করেন না। আজকে সত্য তিনি উদ্ঘাটন করেছেন।
অনেকেই চায় না শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকুক এমন মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকের ক্ষমতার দরকার নেই। শুধু শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হোক, এটাই তাদের রাজনীতি। বাংলাদেশের একটি দল এই রাজনীতি আজকে করছে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে বসে ষড়যন্ত্র করে বাংলায় আবার বিশ্বাসঘাতকতা, রক্ত ঝরাতে চায়। এই অপশক্তিকে রুখতে হবে। এই জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে হবে। এই বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তিকে রুখতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে না এলে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করার দুঃসাহস কি এ দেশের কারও ছিল? তার জন্য সারা বাংলায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। তিনি ফিরে এসেছেন বলে বছরের প্রথম দিনে বাংলার শিশুরা বিনা পয়সায় বই পেল। রাজধানীতে স্বপ্নের মতো মেট্রো রেল হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস, বঙ্গবন্ধু টানেল হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ২৩ জুন এলেই চলে যেতে হয় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুনে। সেদিনের ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। ২৩ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ৪৫ হাজার সৈন্যবাহিনী নিয়ে লড়ছিলেন ইংরেজ বাহিনীর লর্ড ক্লাইভের সাড়ে ৩ হাজার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রধান সেনাপতি মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা করলো। সেদিন সেনাপতিরাও যদিৃ রায়দুর্লভ বেইমানি করলো। দেখা গেলো— সাড়ে তিন হাজার ক্লাইভ বাহিনীর কাছে সিরাজউদ্দৌলার ৫৪ হাজার সেনাবাহিনী পরাজিত হলো। স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলো বাংলায়।
পলাশীর এই ইতিহাসের সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার তুলনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট একই বিশ্বাসঘাতকতা, একই ষড়যন্ত্র। সেদিন মীর জাফরের মতো খন্দকার মোশতাক, সেদিন আল্লাহর অশেষ রহমত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৬ বছর পর পিতা মুজিবের রক্তভেজা মাটিতে তিনি ফিরে এলেন। আজকে একটা কথা বলতে চাই, বাঙালির ইতিহাসে দুটি অর্জন। একটি হলো—পলাশীর পরাজয়ের ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে এই বাংলায় সিপাহী বিদ্রোহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা করেছিল। দ্বিতীয়টি হলো—জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি। এটা সবচেয়ে গৌরবময় অর্জন, এ আমাদের বীরত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার। সেই পতাকা আমরা আজও বহন করে চলেছি। সেই পতাকা রাজনৈতিক স্বাধীনতার পতাকা।
বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পতাকা রেখে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লেগাসির মৃত্যু নেই, এটি একটি উত্তরাধিকার। যতদিন এই বাংলা থাকবে, যতদিন এই জনপদ থাকবে, যতদিন এখানে চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, ততদিন এই বাংলায় বঙ্গবন্ধুর লেগাসি, উত্তরাধিকার বেঁচে থাকবে। হি ইজ নো মোর বাট হি ইজ লেগাসি লিপসন। এই একটি লেগাসি বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসেৃ।
বঙ্গবন্ধুর রক্তভেজা মাটিতে তার কন্যা শেখ হাসিনার ফিরে আসাকে আরেকটা অর্জন হিসেবে বর্ণনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি দেশে এসে সারা বাংলায় চারণের মতো ঘুরে ঘুরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করলেন। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি ফিরে এলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলো, দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার আদর্শ আবারও বাঙালি স্বমহিমায় ফিরে পেলো। তার জন্য আমরা রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ ফিরে পেলাম, স্বাধীনতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ফিরে পেলাম।